ফ্রন্টেক্স জানিয়েছে, পশ্চিম বলকান দেশগুলিতে শুধুমাত্র মে মাসেই ১২,০৮৮ জন অনিয়মিত অভিবাসীকে শনাক্ত করা হয়েছে। এই অঞ্চল সংশ্লিষ্ট ইইউ সীমান্তে নিয়মিত দমন, নিপীড়ন এবং হিংস্র পুশব্যাকের ঘটনা ঘটে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, সমগ্র ইইউ অঞ্চল জুড়ে প্রবেশ করা মোট অনিয়মিত অভিবাসীর প্রায় অর্ধেক পশ্চিম বলকান রুট ব্যবহার করেছেন।
সোমবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বহিঃসীমান্ত নিয়ন্ত্রন সংস্থা ফ্রন্টেক্স জানিয়েছে, মে মাসে পশ্চিম বলকান দেশগুলোতে শনাক্ত হওয়া অনিয়মিত অভিবাসীদের সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি বেড়ে ১২,০৮৮ জনে পৌঁছেছে। এসব অভিবাসীদের বেশিরভাগই সিরিয়া এবং আফগানিস্তান থেকে আগত।
পড়ুন>>বেলজিয়ামে বৈধতা পেয়েছে আন্দোলনরতদের ১২ শতাংশ
২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে মে মাসের মধ্যে ফ্রন্টেক্স বলকান অঞ্চলে মোট ৪০,৬৭৫ টি অবৈধ পারাপার রেকর্ড করেছে। যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় তিনগুণ।
একই সময়ে পুরো ইইউতে প্রবেশ করা অনিয়মিত অভিবাসীর সংখ্যা ৮৬,৪২০ জন। অর্থাৎ পুরো ইউরোপীয় ইউনিয়নে প্রবেশ করা মোট অনিয়মিত অভিবাসীর প্রায় অর্ধেক পশ্চিম বলকান রুট ব্যবহার করেছেন।
এই পরিসংখ্যানে ইউক্রেনের যুদ্ধ থেকে পালিয়ে আসা লোকদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি বলে জানিয়েছে ফ্রন্টেক্স।
মধ্য-ভূমধ্যসাগর রুটে শীর্ষে মিশরীয়, বাংলাদেশিরা
ফ্রন্টেক্স বলকান রুট ও ইউরোপে অভিবাসী সংখার বৃদ্ধির কারণ জানায়নি। তবে সংস্থাটি যোগ করেছে, বেশিরভাগ অভিবাসী ইউরোপীয় ইউনিয়নে প্রবেশের চেষ্টা করার আগে অন্তত কিছু সময়ের জন্যে বলকান অঞ্চলে অবস্থান করেন।
এছাড়া, একই সময়ে অর্থাৎ চলতি বছলের জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত প্রায় ১৬ হাজারেরও বেশি অভিবাসী মধ্য ভূমধ্যসাগরীয় রূট ব্যবহার করেছেন বলে উঠে এসেছে প্রতিবেদনে। যাদের বেশিরভাগই প্রধানত মিশরীয়, বাংলাদেশি এবং টিউনিসীয় বংশোদ্ভূত।
অপরদিকে, পূর্ব ভূমধ্যসাগরে অনিয়মিত পারাপারের সংখ্যাও বেড়েছে যা গত বছরের তুলনায় ১১৬ শতাংশ বেড়ে ১৩ হাজারে পৌঁছেছে।
প্রতি বছর হাজারো অভিবাসী ইইউতে প্রবেশের জন্য পশ্চিম বালকান পথকে বেছে নেয়। কিন্তু সেখানকার জীবনযাত্রা খুবই কঠিন এবং অভিবাসীরা নিয়মিত কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সহিংস পুশব্যাকের শিকার হয়ে থাকেন।
ক্রোয়েশিয়া সীমান্তে নিয়মিত পুশব্যাক
২০২১ সালের অক্টোবরে প্রকাশিত বিভিন্ন গণমাধ্যম পরিচালিত তদন্তে দেখা গেছে, ক্রোয়েশিয়া সীমান্তে অভিবাসীরা বেআইনি পুশব্যাকের শিকার হয়েছেন।
ফরাসি দৈনিক লিবেরাশিঁও পত্রিকার ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, পুলিশের পোশাক পরিহিত একজন মুখোশধারী লোক অভিবাসীদেরকে একটি ধারালো ধাতব বস্তু দিয়ে বেশ জোরে আঘাত করছেন। ভিডিওতে ধারণ করা দৃশ্যটি বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা সীমান্তে অবস্থিত ক্রোয়েশীয় জঙ্গলে ঘটে বলে জানায় ফরাসি দৈনিকটি।
তদন্তের জন্য সংগৃহীত তথ্য অনুসারে, এই মুখোশধারীরা প্রকৃতপক্ষে ক্রোয়েশীয় পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। তারা পুশব্যাকের জন্য নির্ধারিত দলের অন্যতম সদস্য।
পড়ুন>>স্পেনে পাঁচ বছর পর নাগরিকত্ব পেল নৌকায় জন্ম নেওয়া শিশু
দীর্ঘদিন ধরে এই ধরনের অভিযানে অংশ নেয়া এক পুলিশ কর্মকর্তা গণমাধ্যমের প্রশ্নের মুখে পুশব্যাকের ঘটনা স্বীকার করে বলেন, “অবশ্যই 'পুশব্যাক' একটি বাস্তবতা।”
তিনি আরও জানিয়েছিলেন, সব পুলিশ অফিসারই জানেন যে তারা বেআইনি কাজ করছেন। কিন্তু সরকার এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এভাবেই কাজ করতে বলা হয়।”
ফ্রন্টেক্স প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, সাইপ্রাসেও অনিয়মিত অভিবাসী প্রবেশের সংখ্যা ২১৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। সাইপ্রাসে প্রবেশ করা অনিয়মিত অভিবাসীদের বেশিরভাগি নাইজেরিয়া, সিরিয়া এবং কঙ্গো থেকে এসেছেন।
এমএইউ/এআই