যে বিমানটি অভিবাসীদেরকে রুয়ান্ডায় নেওয়ার কথা ছিল সেটি যুক্তরাজ্যের উইল্টশায়ারের বসকম্বে ডাউন বেসে রাখ হয়েছিল। ছবি: রয়টার্স
যে বিমানটি অভিবাসীদেরকে রুয়ান্ডায় নেওয়ার কথা ছিল সেটি যুক্তরাজ্যের উইল্টশায়ারের বসকম্বে ডাউন বেসে রাখ হয়েছিল। ছবি: রয়টার্স

যুক্তরাজ্যে অনিয়মিতভাবে প্রবেশ করা আশ্রয়প্রার্থীদের রুয়ান্ডা পাঠিয়ে দেয়া নিয়ে নাটকীয়তা যেন থামছেই না। মঙ্গলবার রাতে নির্ধারিত প্রথম ফ্লাইটটি শেষ মুহূর্তে রাত ১১টার দিকে ইউরোপীয় মানবাধিকার আদালতের এক জরুরি রায়ে বাতিল হয়ে গেছে। তবে নানা আইনি ও রাজনৈতিক যুদ্ধের পরেও ব্রিটিশ সরকার জানিয়েছে, এই ঘোষিত নীতি বাস্তবায়নে তারা বদ্ধপরিকর।

মানবাধিকার, অভিবাসন ও পাবলিক সার্ভিস ইউনিয়নের যুক্তরাজ্যের আদালতে মামলা ছাড়াও আপিলসহ নানা বাঁধা মোকাবেলা করতে হয়েছে ব্রিটিশ সরকারকে। এত বাঁধা পেরিয়েও যুক্তরাজ্য থেকে অভিবাসীদের রুয়ান্ডায় পাঠানোর প্রথম ফ্লাইটটি ১৪ জুন মঙ্গলবার উড্ডয়নের ঠিক আগ মুহুর্তে সর্বশেষ প্রস্তুতি নিচ্ছিল। কিন্তু কথায় আছে শেষ হয়েও হলো না শেষ! 

মধ্য রাতের ঠিক আগ মুহূর্তে ফ্লাইট ছাড়ার মাত্র আধা ঘন্টা আগে ইউরোপীয় মানবাধিকার আদালতের এক জরুরি সিদ্ধান্তে বাতিল হয়ে গেছে লাখ ইউরো খরচ করে আয়োজন করা রূয়ান্ডা অভিমুখে প্রথম চার্টাড ফ্লাইট।

অভিবাসন সংস্থা কেয়ার ফর কালে মঙ্গলবার রাতে টুইটারে জানায়, “রুয়ান্ডা অভিমুখে সর্বশেষ টিকিটটিও বাতিল করা হয়েছে। প্রথম ফ্লাইটে রুয়ান্ডায় যাওয়ার মতো কেউ নেই।”


শুরু থেকেই যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রীতি প্যাটেলের আনা এই কট্টর অভিবাসন নীতির বিরুদ্ধে আইনি ও রাজনৈতিক বিরোধিতা করে আসছে কেয়ার ফর কালেসহ শত শত অধিকার সংগঠন ও এনজিও। 

যুক্তরাজ্য থেকে রুয়ান্ডার উদ্দেশ্যে প্রথম ফ্লাইটটি নিয়ে সর্বশেষ দিনগুলোতে একের পর এক পরিবর্তন এসেছে। প্রথম দিকে ইংলিশ চ্যানেল পার হয়ে আসা ১৩০ জন আশ্রয়প্রার্থীকে প্রথম ফ্লাইটে বহিষ্কার করার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। যাদের বেশিরভাগই ছিলেন ইরান, সিরিয়া, আলবেনিয়া ও ইরাকের নাগরিক। 

কিন্তু সংশ্লিষ্ট আশ্রয়প্রার্থীদের বিভিন্ন ব্যক্তিগত আবেদনের পরে সর্বশেষ মঙ্গলবার মাত্র সাত জনকে ফ্লাইটে তোলার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। আশ্রয়প্রার্থীদের নিয়ে প্রথম বিমানটি আকাশে উড্ডয়নের আগে একের পর মামলা ও আপিল করছিল অভিবাসন সংস্থাগুলো।

অবশেষে শেষ মুহূর্তে ঘটনা নাটকীয় মোড় নেয় ইউরোপীয় মানবাধিকার আদালত (ইসিএইচআর) এর সিদ্ধান্তে। এই ইইউ আদালত সাময়িকভাবে জরুরী ব্যবস্থা গ্রহণ করে ফ্লাইটটি বাতিল করে আশ্রয়প্রার্থীদের বহিষ্কার বন্ধ করে দেয়।

বড় ধাক্কা খেল ব্রিটিশ সরকার

ফ্রান্সের স্ট্রাসবুর্গভিত্তিক ইইউ মানবাধিকার আদালতের রায়ে বলা হয়েছে, জুলাই মাসে আশ্রয় নীতির উপর বৈধতা বিবেচনা না হওয়া পর্যন্ত ফ্লাইটে থাকা ইরাকি আশ্রয়প্রার্থীদের বহিষ্কার স্থগিত রাখা উচিত। 

ব্রেক্সিটের পর যুক্তরাজ্য অবৈধভাবে আসা আশ্রয়প্রার্থীদের আগমন ঠেকাতে লন্ডন থেকে প্রায় ৬ হাজার কিলোমিটার দূরে অবস্থিত আফ্রিকার দেশ রুয়ান্ডায় আশ্রয়প্রার্থীদের পাঠানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করে। 

জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা এবং অধিকার গোষ্ঠীগুলোর পাশাপাশি ইংল্যান্ডের গির্জার দায়িত্বে থাকা ধর্মযাজকরাও নীতিটিকে "অনৈতিক" বলে অভিহিত করে তীব্র সমালোচনা করেছেন।

গতকাল রাতে আদালতের রায়ের সিদ্ধান্তের পর এনজিও রিফিউজি অ্যাকশন টুইটারে লিখেছে, “আজ রাতে কোনো শরণার্থীকে রুয়ান্ডায় বহিষ্কার করা হবে না। জনগণের ক্ষমতা এইরকম। আপনারা সবাই অবিশ্বাস্য কাজ করেছেন! আমরা সবাই শরণার্থী বিরোধী আইনের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারি এবং করবো।"


ব্রিটিশ সরকারের জন্য এই সিদ্ধান্ত একটি বড় ধাক্কা বলে মনে করা হচ্ছে। তবে তারা রুয়ান্ডার বহিষ্কার নীতি বাস্তবায়নে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।  

যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিজ ট্রাস স্কাই নিউজকে বলেছেন, “ফ্লাইটে মানুষ যাবেই এবং যদি তারা এই ফ্লাইটে না যায় তবে তাদেরকে পরবর্তী ফ্লাইটে পাঠানো হবে।”

প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেন, “আমরা কোনোভাবেই কোনো সমালোচনায় হতাশ বা বিব্রত হব না।” 

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রীতি প্যাটেল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বলেন, “আমরা সঠিক কাজ করতে এবং আমাদের দেশের সীমানা নিয়ন্ত্রণের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে নিরুৎসাহিত হব না। পরবর্তী ফ্লাইটের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে।”

যা বলছে রুয়ান্ডা কর্তৃপক্ষ 

রুয়ান্ডার সরকার বুধবার জানিয়েছে, “আইনি আপিলের কারণে যুক্তরাজ্য থেকে রুয়ান্ডায় অভিবাসীদের বহিষ্কারের অনুমিত একটি ফ্লাইট বাতিল হওয়া এই নীতি নিরুৎসাহিত হয় না। এটি একটি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ অংশীদারিত্ব।”

রূয়ান্ডা সরকারের মুখপাত্র ইওলান্দে মাকোলো ফরাসি বার্তাসংস্থা এএফপিকে বলেন, “এই অংশীদারিত্বকে কার্যকর করার জন্য রুয়ান্ডা পুরোপুরি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। রুয়ান্ডা অভিবাসীদের আগমনকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত। আমাদের দেশে তাদেরকে নিরাপত্তা ও সুযোগ দিতে সরকার প্রস্তুত।”

অপরদিকে, রূয়ান্ডায় পল কাগেমের নেতৃত্বাধীন সরকার নিয়মিতভাবে মত প্রকাশের স্বাধীনতা, সমালোচনা এবং রাজনৈতিক বিরোধীদের শক্ত হাতে দমন করার অভিযোগে সমালোচিত হয়ে আসছে। 

অবৈধ চ্যানেল পারপার নিয়ে বর্তমান ব্রিটিশ রক্ষণশীল সরকার এবং ফ্রান্সের সাথে নিয়মিত রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক উত্তেজনা সৃষ্টি করছে। চলতি বছরের শুরু থেকে ১০ হাজারেও বেশি অভিবাসী অবৈধভাবে ছোট নৌকায় ব্রিটিশ উপকূল অতিক্রম করেছে, যা আগের বছরগুলোর তুলনায় বহুগুণ বেশি। 


এমএইউ/এআই


 

অন্যান্য প্রতিবেদন