ইটালি-ফ্রান্স সীমান্তের ফরাসি অংশে সীমান্ত পুলিশের একটি টহল দল। ছবি: রয়টার্স
ইটালি-ফ্রান্স সীমান্তের ফরাসি অংশে সীমান্ত পুলিশের একটি টহল দল। ছবি: রয়টার্স

দক্ষিণ-পূর্ব ফ্রান্সের ‘নিস’ শহরে পুলিশের গুলিতে এক অভিবাসী গুরুতর আহত হয়েছেন। আহত ব্যক্তি একটি পিক আপ ভ্যানে করে ফ্রান্স-ইটালি সীমান্ত অতিক্রম করতে গিয়ে সীমান্তের প্রথম চেকপয়েন্ট থেকে পুলিশের বাধার মুখে পড়লে নিস শহরে এসে পালানোর সময় গুলিবিদ্ধ হন।

রোয়া উপত্যকার কাছে অবস্থিত ফ্রাঙ্কো-ইটালীয় সীমান্তের নিকটবর্তী সোসপেল চেকপয়েন্টে বেশ কিছু অভিবাসীকে বহনকারী একটি ভ্যানকে মঙ্গলবার থামানোর চেষ্টা করে সীমান্ত পুলিশ। 

কিন্তু গাড়িটি পুলিশের নির্দেশনা অমান্য করে সীমান্ত অতিক্রম করে চলে যায়। সেখান থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে দক্ষিণ-পূর্ব ফ্রান্সের পর্যটন নগরী নিস শহরে গাড়িটির খোঁজ পায় পুলিশ৷

স্থানীয় গণমাধ্যম ফ্রান্স ব্লু কোত দাআজুর জানায়, গাড়িটি নিস শহররে সংবেদনশীল ‘মুলাঁ’ নামক এলাকায় গাড়ির চালক এবং তার দুই সহযোগী যাত্রীদের রেখে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। সেসময় গাড়িতে থাকা ব্যক্তিরাও দৌড় দিলে ফরাসি পুলিশ গুলি চালায়।”

ইটালি ফ্রান্স সীমান্তে অবস্থিত রোয়া উপত্যকা। ছবি: ফ্রান্স২৪/গুগল ম্যাপ
ইটালি ফ্রান্স সীমান্তে অবস্থিত রোয়া উপত্যকা। ছবি: ফ্রান্স২৪/গুগল ম্যাপ


অভিবাসীদের বহনকারী গাড়িটিতে চালক ও তার দুই সহযোগী ছাড়াও আরও পাঁচজন অভিবাসী ছিল বলে লিখেছে পত্রিকাটি। 

আরও পড়ুন>> ‘গত তিন মাসে আমার ১২ কেজি ওজন কমেছে”

স্থানীয় নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষ ডিডিএসপি বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানিয়েছে, “ভ্যানে থাকা পাঁচ অভিবাসীর মধ্যে একজনের গায়ে গুলি লেগেছে এবং তাকে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। এছাড়া অসুস্থতা জনিত কারণে দুর্বল বোধ করা অন্য একজন অভিবাসীকেও জরুরি পরিষেবার আওতায় নেওয়া হয়েছিল।”

নিসের পাবলিক প্রসিকিউটর জানিয়েছেন, ফরাসি ন্যাশনাল পুলিশের জেনারেল ইন্সপেক্টরেট (আইজিপিএন) এই অভিযানের বিষয়টি দেখভাল করছেন। সাধারণত পুলিশ কোনো ঘটনায় তাদের সাথে থাকা অস্ত্র ব্যবহার কর‍তে বাধ্য হলে সেক্ষেত্রে পদ্ধতিগতভাবে অভিযানের সাথে থাকা পুরো দলকে একটি প্রক্রিয়ার মধ্যে দিতে যেতে হয়। মূলত অস্ত্রের অপব্যবহার রোধে এটি করা হয়ে থাকে। 


বর্তমান রাষ্ট্রপতি এমানুয়েল ম্যাক্রঁ’র দলের সাথে ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ‘নিস’ শহরের মেয়র ক্রিশ্চিয়ান এস্ট্রোসি টুইটারে পুলিশের প্রতি তার সমর্থন প্রকাশ করে বলেছেন, “আমি স্পষ্টতই গাড়ির ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি। তবে এগুলো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের ফলাফল। আমাদের পুলিশ এবং জেন্ডারমেরি (ফরাসি পুলিশের একটি শাখা) তাদের নিরাপত্তার জন্য এবং এসব গ্যাংদের প্রতিহত করতে গুলি করার প্রয়োজন ছিল। যাতে ভবিষ্যতে অন্যান্য দুর্ঘটনা এড়ানো সহজ হয়।”

২০১৫ সাল থেকে সীমান্তে নিহত অন্তত ৩০

প্রতি বছর হাজার হাজার অভিবাসী তাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ফ্রাঙ্কো-ইটালীয় সীমান্ত অতিক্রম করে ফরাসি মাটিতে প্রবেশের চেষ্টা করে। অভিবাসীরা সমস্ত ঝুঁকি নিয়ে সীমান্ত পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করে। কারণ এই অঞ্চলটিতে ফরাস ও ইটালি পুলিশের নিবিড় পাহারা রয়েছে। 

আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো চোখ এড়াতে অনেক অভিবাসীরা ট্রেনের উপরে উঠে বা পাহাড়ের মধ্য দিয়ে বিপজ্জনক পথ বেছে নেয়।

আরও পড়ুন>>মানব পাচারের দায়ে অভিবাসন সংস্থার সভাপতির কারাদণ্ড

ভেন্টিমিগ্লিয়া থেকে গত বছরের নভেম্বরে এক আফ্রিকান অভিবাসীর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছিল। গণমাধ্যম জানিয়েছে, নিহত অভিবাসী সম্ভবত ফ্রান্সে পৌঁছানোর চেষ্টা করার সময় পাহাড় অথবা ট্রেনের ছাদ থেকে পড়ে গিয়েছিলেন।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতেও একটি আঞ্চলিক ট্রেনের ছাদে একজন ব্যক্তির পোড়া মৃতদেহ পাওয়া গিয়েছিল। তিনিও ইটালীয় শহর ভেন্টিমিগ্লিয়া থেকে ফ্রান্স প্রবেশের চেষ্টা করেছিলেন।  

পড়ুন>>৮ মানব পাচারকারীকে আটক করল ইইউ পুলিশ

সীমান্তে সক্রিয় অভিবাসন সংস্থাগুলোর হিসেবে ২০১৫ সাল থেকে এখন অবধি ফ্রাঙ্কো-ইটালীয় সীমান্তে অন্তত ৩০ জন অভিবাসী নিহত হয়েছেন। 


এমএইউ/এআই


 

অন্যান্য প্রতিবেদন