পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলো থেকে আসা শতাধিক অভিবাসী পরিবার মঙ্গলবার আবাসনের দাবিতে প্যারিসের নগর ভবনের সামনে বিক্ষোভ করেছিল। তাদের বেশিরভাগই উত্তর প্যারিসের বিভিন্ন অস্থায়ী শিবিরে বসবাস করছিলেন। সরকার আন্দোলনে ইতিবাচক সাড়া না দিলেও প্যারিস নগর কর্তৃপক্ষ ১৪০ জন অভিবাসীর জন্য অস্থায়ী ভিত্তিতে একটি জিমেনশিয়াম বরাদ্দ করেছে।
কয়েক সপ্তাহ ধরে উত্তর প্যারিসের রাস্তায় বাস করছিলেন নারী ও শিশুসহ শতাধিক অভিবাসী পরিবার। অভিবাসন সংস্থা ইতুপিয়া৫৬ এর সহায়তায়, একশোরও বেশি পরিবার ফুটপাতের একটি অংশে তাঁবু খাটিয়ে রাত্রি যাপন করছিলেন। কোনোভাবে রাত কাটাতে পারলেও প্রত্যেক দিন সকালে পুলিশ এসব অভিবাসীদের তাঁবুগুলো সরিয়ে দিত।
আবাসন সমস্যায় রাস্তায় রাত কাটাতে বাধ্য হওয়া এসব অভিবাসী পরিবারগুলো মূলত পশ্চিম আফ্রিকার দেশে আইভরি কোস্ট, মালি ও গিনি থেকে আসা। তাদের অনেকেরই আশ্রয় আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে অথবা ফরাসি আশ্রয় বিষয়ক জাতীয় আদালত সিএনডিএ-তে দায়ের করা আপিল প্রক্রিয়াধীন আছে।
উত্তর প্যারিসের বিভিন্ন জায়গায় রাতে রাত কাটানো এসব বসতিগুলোতে মঙ্গলবার ভোরে অভিযান চালায় ফরাসি পুলিশ।
অভিবাসন সংস্থা ইতুপিয়া ৫৬ এর সদস্য নিকোলাই প্রসনের ইনফোমাইগ্রেন্টসকে বলেন, “পুলিশ কর্মকর্তারা আগের দিন (১৩ জুন) বানিওলে এবং মন্ত্রই সীমান্তে স্থাপিত ক্যাম্পে এসে উপস্থিত ব্যক্তিদের চলে যেতে নির্দেশ দেন।”
পরেরদিন সংশ্লিষ্ট পরিবারের পুরুষেরা যার যার কর্মক্ষেত্রে চলে গেলে নারীরা সংঘবদ্ধ হয়ে রাজধানীর কেন্দ্রে অবস্থিত নগর ভবন চত্বরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। তারা বসবাসযোগ্য আবাসনের দাবিতে প্যারিস নগরীর নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সামনে নিজেদের ক্ষোভ তুলে ধরেন।
নগর কর্তৃপক্ষ বলছে, আবাসন নিয়ে সৃষ্ট সমস্যার সমাধান খুঁজতে সরকারের সাথে তাদের দফায় দফায় আলোচনা হয়েছে।
সরকার ও নগর কর্তৃপক্ষের মধ্যে বিরোধ
প্যারিসের মেয়র ফরাসি সোশ্যালিস্ট পার্টি সমর্থিত আন হিদালগো। তার নেতৃত্বে পুরো প্যানেলটি পরিবেশ ও বাম সমর্থিত দলগুলোর সমন্বয়ে তৈরি। স্বভাবতই অভিবাসীদের জরুরি আবাসন ইস্যুতে রাষ্ট্রপতি এমানুয়েল ম্যাক্রঁ সমর্থিত মধ্য ও মধ্য ডানপন্থি সরকারের সাথে প্রায়শই বিবাদে জড়ায় নগর কর্তৃপক্ষ।
ফরাসি কমিউনিস্ট পার্টির অন্যতম মুখপাত্র এবং প্যারিস নগরের জরুরী বাসস্থান ও শরণার্থীদের সুরক্ষার দায়িত্বে থাকা নির্বাচিত কাউন্সিলর ইয়ান ব্রোসা ইনফোমাইগ্রেন্টসকে বলেন, “অভিবাসীদের বাসস্থানের বিষয়টি সম্পূর্ণ রাষ্ট্রের দায়িত্বের আওতাভুক্ত একটি বিষয়।কিন্তু দেখা গেছে যে সরকার জেনে বুঝেও তাদের দায়িত্ব নিতে অস্বীকার করেছে। আমাদেরকে তাদের দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে।”
অবশেষে, ১৪ জুন সন্ধ্যায় প্যারিস নগর কর্তৃপক্ষ আন্দোলনরত অভিবাসীদের জন্য আপাতত প্যারিসের ১২ তম ডিসট্রিক্টের একটি পৌর জিমনেশিয়াম বরাদ্দ করেছে।
পড়ুন>>ফ্রান্সে ডিটেনশন সেন্টারের পরিবেশ ‘অমানবিক’
জিমনেশিয়ামে সর্বমোট ১৪০ অভিবাসী আশ্রয় পেয়েছেন। যাদের মধ্যে ৬৩ জন নারী এবং ২৭ জন অন্তঃসত্ত্বা। এছাড়া পরিবারগুলোর সাথে ডজনখানেক শিশু এবং ১০ বছরের কম বয়সি বাচ্চাও রয়েছে।
নগর ভবনের সামনে থেকে সন্ধ্যায় সবাইকে স্থানান্তর করা হলেও অনেক অভিবাসী পরিবারের পুরুষেরা কাজ শেষে রাতে জিমনেশিয়ামে তাদের স্ত্রী ও সন্তানদের সাথে যোগ দিতে সক্ষম হয়েছিলেন।
ইয়ান বোসা আরও বলেন, “সরকারের কাছে প্যারিসের ১৫ নং ডিসট্রিক্টে ইউক্রেনীয় শরণার্থীদের জন্য সংরক্ষিত কিন্তু খালি পড়ে থাকা একটি কেন্দ্রে এসব পরিবারকে রাখতে অনুরোধ জানিয়েছি।”
আরও পড়ুন>>প্যারিসে বিদেশি নাবালকদের শোষণের অভিযোগে গ্রেপ্তার সাত পাচারকারী
কিন্তু সরকার স্পষ্টভাবে এই বিকল্প প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। বুধবার ইল- দ্যো-ফ্রঁন্স প্রেফেকচুর বার্তা সংস্থা এএফপি কে জানায়, পোর্ত-দ্যো-ভার্সাই এলাকায় ইউক্রেনীয়দের জন্য নির্ধারিত স্থানটি মূলত অস্থায়ী ট্রানজিট পয়েন্ট। এটি আন্দোলনরত অভিবাসী পরিবারগুলোর আবাসনের অনুরোধের সাথে খাপ খায় না।”
তবে সরকারের এই যুক্তি মানতে নারাজ ইয়ান ব্রোসা। তিনি বলেন, “ইউক্রেনীয়দের জন্য বিভিন্ন জায়গা সংরক্ষিত রাখা দোষের কিছু নয়। কিন্তু যখন এই কাঠামোগুলো খালি পড়ে থাকে, তখন সেগুলি অ-ইউক্রেনীয় পরিবারগুলোকেও বরাদ্দ করা যেতে পারে। সরকার স্পষ্টভাবে এই লোকদের রাস্তায় ঠেলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”
এমএইউ/এআই