প্রতিবেশী দেশ রাশিয়ার সম্ভাব্য প্রতিশোধের ভয়ে, বিশেষ করে হাজার হাজার অভিবাসীদের পাঠানো ঠেকাতে সীমান্তে প্রাচীর তৈরির প্রস্তুতি নিচ্ছে ফিনল্যান্ড। কিন্তু ফরাসি বিশ্ববিদ্যালয় ইনালকোর সীমান্ত নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ দামিয়া সিমোনোর মতে, ফিনল্যান্ড সীমান্তে রাশিয়ার অভিবাসী পাঠানোর হুমকির কোণ যৌক্তিক প্রমাণ নেই।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রবেশ মুখে বসতে যাচ্ছে আরও একটি নতুন অভিবাসী বিরোধী দেয়াল।
৬ জুন হেলসিঙ্কি ঘোষণা করেছে, রাশিয়ার সঙ্গে থাকা ১৩০০ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্তে নতুন প্রাচীর তৈরির পরিকল্পনা করছে সরকার।
উল্লেখ্য ইউক্রেন যুদ্ধ এবং ন্যাটোতে প্রার্থিতার কারণে প্রতিবেশীর রাশিয়ার পক্ষ থেকে বিভিন্ন সম্ভাব্য প্রতিশোধের আশঙ্কা করছে নরডিক দেশে ফিনল্যান্ড। অর্থ্যাৎ, হেলসিঙ্কি আশঙ্কা করছে যে, মস্কো ইইউকে অস্থিতিশীল করতে অভিবাসন কার্ড ব্যবহার করবে এবং হাজার হাজার অভিবাসীকে ফিনিশ সীমান্তে পাঠাবে।
আরও পড়ুন>>ইউরোপে অবৈধ প্রবেশে পাচারকারীদের নতুন রুট আলবেনিয়া
ফরাসি বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিভার্সিটি অফ লাঙ্গুয়েজেস এন্ড সিভিলাইজেশনস বা ইনালকোর নিরাপত্তা গবেষক দামিয়া সিমোনো ইনফোমাইগ্রেন্টসকে বলেন, “ভূরাজনৈতিক বিভিন্ন ইস্যুতে অভিবাসী কার্ড ব্যবহার বর্তমানে একটি ট্রেন্ডে পরিণত হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে ইউক্রেন যুদ্ধের মতো চলমান সংঘাতের পরিস্থিতিতে একটা দেশের স্থিতিশীল পরিবেশ নষ্ট করতে অভিবাসীদের ব্যবহার করা হতে পারে।”
ফিনিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অ্যান ইহানুস এই যুক্তিতে দেশটির সীমান্ত রক্ষীদের কর্মক্ষমতা উন্নত করতে চান। বর্তমানে, এই নর্ডিক দেশের সীমানাগুলি ছোট কাঠের বেষ্টনি দ্বারা সুরক্ষিত, যা বিভিন্ন গবাদি পশুকে সীমান্ত অতিক্রম করতে বাধা দেয়।
সাম্প্রতিক ঘটনাবলি বিবেচনায় নিচ্ছে ফিনল্যান্ড
ফিনল্যান্ড স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের সীমান্ত রক্ষা আইন বিষয়ক দপ্তরের পরিচালক সান্না পালো বলেন, “আমরা এখন যা তৈরি করতে চাইছি তা হল শক্তিশালী প্রাচীর নির্মাণ। যা বাস্তবিক অর্থে সীমান্ত অতিক্রমে বাধা সৃষ্টি করবে। সম্ভাব্য এই প্রাচীরটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত স্পর্শকাতর স্থানগুলিকে লক্ষ্য করে তৈরী করা হবে।”
আরও পড়ুন>>শরণার্থীরা কি ভূ-রাজনীতির মোক্ষম হাতিয়ারে পরিণত হচ্ছে?
গবেষক দামিয়া সিমোনোর কাছে ইনফোমাইগ্রেন্টস জানতে চায়, রাশিয়া থেকে অভিবাসীদের আগমনের হুমকি বাস্তবিক কি না?
উত্তরে তিনি জানান, “ফিনল্যান্ডের মাথায় অভিবাসন হুমকি ঘুরছে। দেশটি বিশ্বাস করে অভিবাসন ইইউ এর জন্য বেশ স্পর্শকাতর ইস্যু। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে বেলারুশ বা গ্রিস সীমান্তে যা ঘটেছে সেটি বিবেচনায় নিয়ে একই হুমকির প্রেক্ষাপট কল্পনায় নিয়েছে ফিনল্যান্ড।”
২০২০ সালের মার্চ মাসে যখন তুরস্ক সিরিয়ায় পশ্চিমা সমর্থন চাচ্ছিল তখন এর্দোয়ান সরকার ইইউর উপর চাপ সৃষ্টি করতে কাস্তানি স্থল সীমান্ত দিয়ে হাজার হাজার অভিবাসীকে গ্রিসে প্রবেশ করতে দিয়েছিল।
পরের বছর ২০২১ সালে রাশিয়ার মিত্র দেশ হিসেবে পরিচিত বেলারুশ পোল্যান্ড এবং লিথুয়ানিয়া সীমান্তে হাজার হাজার অভিবাসীকে প্রবেশের সুযোগ করে দিয়েছিল। পশ্চিমা দেশগুলো মিনস্কের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিল, এই অভিবাসন প্রবাহ আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কোর সৃষ্টি।
"অভিবাসীদের আগমন ঘটবে এমন কোন প্রমাণ নেই"
নিরাপত্তা গবেষক দামিয়া সিমোনো ব্যাখ্যা করেন, “ফিনল্যান্ডের এই সব উদাহরণ মনে আছে। তাদের এটাও মনে আছে যে, লুকাশেঙ্কো তুরস্ক ও ইরাক থেকে ভিসা সুবিধার মাধ্যমে অনুমোদিত ফ্লাইটে তিন থেকে পাঁচ হাজার মানুষকে পোল্যান্ড সীমান্তে ঠেলে দিতে মিনস্কে হাজির করেছিল।”
ফিনল্যান্ড আশঙ্কা করছে, মস্কো পালাক্রমে অভিবাসীদের নিয়ে আসবে। দেশটির আশঙ্কা মস্কোও হয়ত মিনস্কের মতো একই অভিবাসন অস্ত্র ব্যবহার করবে৷
পড়ুন>>প্রতিবারে গেমে ব্যর্থ হলে পাচারকারীরা আবার টাকা দাবি করতো’
কিন্তু এই নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞের মতে, হেলসিঙ্কি বর্তমানে একটি অভিবাসন সংকট কল্পনায় বাস করছে। মূলত ৪০ এর দশকে রাশিয়ার সাথে দেশটির যুদ্ধের অতীত অভিজ্ঞতা থাকায় তারা সেটি ভুলতে পারছে না। সে সময় রাশিয়াকে চরম সাহসিকতা ও প্রচণ্ড প্রতিরোধের সাথে মোকাবেলা করেছিল ফিনল্যান্ড। সে যুদ্ধে সীমান্তে প্রায় ৮০ হাজার সৈন্য হারিয়েছিল দেশটি।
তিনি আরও যোগ করেন, “আমরা কয়েক বছর ধরে যা শিখছি তা হল অভিবাসন সমস্যাটি সহজেই হেরফের হয়। আমরা আশঙ্কা করতে পারি, একটি দেশের উপর মানুষের ভিড় হবে। কিন্তু মনে রাখতে হবে রাশিয়া মধ্যপ্রাচ্যবাসীদের জন্য কোন পছন্দের গন্তব্য নয়। তাই এই হুমকি আসলে কার্যকর হবে কিনা সেটি অনুমান করা খুব কঠিন।”
ফিনিশ সরকারের পরিকল্পনা হচ্ছে, সীমান্তের নির্দিষ্ট পয়েন্টে সম্ভাব্য আশ্রয়প্রার্থীদের প্রবেশ নিয়ে সচতেন হওয়া।
পড়ুন>>প্যারিসঃ "শিক্ষা বঞ্চিত অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্য বিকল্প স্কুল"
দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, অগ্রাধিকার হিসেবে বিবেচিত এই স্থানগুলিকে আরও পরে বিশেষভাবে সংজ্ঞায়িত করা হবে। এছাড়া প্রকল্পের বাজেট কেমন হবে সেটিও বিবেচ্য বিষয়।
মূল প্রতিবেদন শার্লৎ বোয়াতিও। ফরাসি থেকে ভাষান্তর মোহাম্মদ আরিফ উল্লাহ।
এমএইউ/আরআর