২০২১ সালে লিবিয়া ইউএনএইচসিআর দপ্তরে নিবন্ধিত ৪০ হাজার আশ্রয়প্রার্থীর মধ্যে মাত্র ১৬৬২ জন ব্যক্তি লিবিয়া ত্যাগ করে তৃতীয় দেশে প্রত্যাবাসন করতে সক্ষম হয়েছিল। ছবি:  আইওএম
২০২১ সালে লিবিয়া ইউএনএইচসিআর দপ্তরে নিবন্ধিত ৪০ হাজার আশ্রয়প্রার্থীর মধ্যে মাত্র ১৬৬২ জন ব্যক্তি লিবিয়া ত্যাগ করে তৃতীয় দেশে প্রত্যাবাসন করতে সক্ষম হয়েছিল। ছবি: আইওএম

আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে প্রায় ৬ লাখ নির্বাসিত লিবিয়ায় বন্দি এবং সহিংসতার শিকার। ২০ জুন বিশ্ব শরণার্থী দিবস উপলক্ষ্যে লিবিয়ায় অবস্থানরত অভিবাসীদের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক ফরাসি এনজিও ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস (এমএসএফ)। মানবিক করিডোরের মাধ্যমে লিবিয়ায় সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা অভিবাসীদের দ্রুত সরিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে এনজিওটি।

২০ জুন আন্তজার্তিক শরণার্থী দিবস উপলক্ষ্যে অভিবাসী ও আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য নরক হিসেবে আখ্যা পাওয়া ভূমধ্যসাগর উপকূলবর্তী দেশ লিবিয়া থেকে অভিবাসীদের প্রত্যাবাসনের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিশ্বজুড়ে অভিবাসীদের চিকিৎসা সেবা দানকারী ফরাসি এনজিও ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস (এমএসএফ)। 

লিবিয়ায় অবস্থিত জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশন (ইউএনএইচসিআর)-এর কাছ থেকে দেশটিতে অবস্থানরত একজন আশ্রয়প্রার্থী অথবা অভিবাসীর পুরো পুনর্বাসন প্রক্রিয়া সফল হতে কখনও কখনও দুই বছরও লেগে যায়। 

সগত বছর ইউএনএইচসিআরে নিবন্ধিত প্রায় ৪০ হাজার আশ্রয়প্রার্থীর মধ্যে মাত্র ১,৬৬২ জন ব্যক্তি এই কাঠামোর অধীনে লিবিয়া ত্যাগ করতে সক্ষম হয়েছিল।

ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস বিশ্বাস করে, শুধুমাত্র লিবিয়া থেকে অন্যত্র উচ্ছেদই অভিবাসীদের নিরাপত্তায এবং সেবা নিশ্চিত করতে পারে। এনজিওটি ত্রিপোলির বিভিন্ন আটক কেন্দ্রসহ দেশটির জোয়ারা, মিসরাতা এবং বেনি ওয়ালিদের মতো কেন্দ্রে অভিবাসীদের জন্য মোবাইল ক্লিনিক পরিচালনা করে থাকে।

লিবিয়ায় দায়িত্বরত ইউএনএইচসিআর-এর ডেপুটি হেড অব মিশনে জামাল জামাউম প্রত্যাবসন নিয়ে সৃষ্ট সমস্যার জন্য লিবিয়া কর্তৃপক্ষকে অভিযুক্ত করেছেন।

আরও পড়ুন>>ভূমধ্যসাগর: অভিবাসীদের মধ্যে শিশুসহ অনেকেই নির্যাতনের শিকার

তিনি ব্যাখ্যা করেন, “লিবিয়া জেনেভা কনভেনশনে স্বাক্ষরকারী সদস্য দেশ নয়। সে কারণে দেশটি তার ভূখন্ডে শরণার্থীদের অবৈধ অভিবাসী হিসাবে বিবেচনা করে। এই কারণেই ইউএনএইচসিআর-এর কর্মসূচিতে আমরা সর্বোচ্চ নয়টি জাতীয়তার আশ্রয়প্রার্থীদের সবচেয়ে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ বা ‘অরক্ষিত’ বলে অন্তর্ভুক্ত করতে পারি।” 

যার ফলে শুধুমাত্র ফিলিস্তিন, ইয়েমেন, সিরিয়া, সোমালিয়া, ইরিত্রিয়া ও সুদান থেকে ব্যক্তিরাই তৃতীয় দেশে পৌঁছানোর মানবিক বা পুনর্বাসন বিমানে চড়ার সুযোগ পেয়ে থাকেন।

কোটা স্বল্পতা

লিবিয়া কর্তৃপক্ষের অনুমদিত প্রক্রিয়ায় ইউএনএইচসিআর এর মাধ্যমে শরণার্থীদের পুনর্বাসনে সাড়া দেওয়া বেশিরভাগ দেশই ইউরোপীয় দেশ। 

জামাল জামাউম আশ্বস্ত করেন, “আমরা সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর কাছে তাদের কোটা বাড়ানোর জন্য অনুরোধ করছি। কারণ এই দিকটিতে একটি স্পষ্ট সংকেত দেওয়ার জন্য যা করা দরকার সেটিও শরণার্থীদের গ্রহণে রাজী হওয়া দেশগুলোর উপর নির্ভর করে। কিন্তু কয়েক মাস ধরে ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে।”

পড়ুন>>আজীবন লিবিয়ায় থেকেও নাগরিক হতে পারেননি দাউদ

লিবিয়ায় ইউএনএইচসিআর মিশন প্রধানের মতে, “ইউরোপীয় দেশগুলো বলছে তারা ইউক্রেনীয় শরণার্থীদের আগমন সামলাতে ব্যস্ত। ইউরোপের দেয়া এক হাজার শরনার্থী কোটা এখনও পূরণ হয় নি। সর্বশেষ হিসেব অনুযায়ী শুধুমাত্র সুইডেন ৩৫০ জন আশ্রয়প্রার্থীকে গ্রহণ করতে ইউএনএইইচসিআর’কে সবুজ সংকেত দিয়েছে সুইডেন।”


তিনি আরও যোগ করেন, “লিবিয়া থেকে সম্ভাব্য পুনর্বাসনের সংখ্যা খুবই সীমিত। সেখানে সবার জন্য জায়গা নেই। এটি আমাদেরকে আশ্রয়প্রার্থীদের পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার জন্য নির্বাচন করতে আরও কঠোর মানদণ্ড প্রয়োগ করতে বাধ্য করে।”

বিশেষ মানবিক করিডোর তৈরির আহ্বান

এমএসএফ-এর জন্য লিবিয়া শাখার প্রোগ্রাম প্রধান ক্লাউদিয়া লদেসানি বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি ইউরোপীয় ইউনিয়নের যেসব দেশ বছরের পর বছর ধরে লিবিয়ার উপকূলরক্ষীদের অর্থায়ন করছে এবং অভিবাসীদের জোরপূর্বক সমুদ্র থেকে ফিরিয়ে নেয়াকে উৎসাহিত করেছে তাদের এক্ষেত্রে বিরাট দায়িত্ব রয়েছে। সমুদ্র থেকে লিবিয়ায় ফিরে গিয়ে সহিংসতার শিকার ভুক্তভোগী অভিবাসীদের সুরক্ষার দেওয়ার দায়িত্বও দেশগুলোর উপর বর্তায়।”

পড়ুন>>ফ্রন্টেক্সের বিরুদ্ধে ইউরোপের আদালতে মামলা

তিনি বলেন, “ লিবিয়ায় এমএসএফ এর আওতায় ইটালিতে একটি মানবিক করিডোর ইতিমধ্যেই খোলা হয়েছে। এই করিডোর সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা অরক্ষিত রোগীদের সুরক্ষার প্রয়োজনে নির্দিষ্ট সংখ্যক লোককে ইটালিতে স্থানান্তর করার অনুমতি দেয়৷ এই ধরণের ব্যবস্থা অবশ্যই অন্যান্য দেশেও প্রয়োগ করা সম্ভব।” 

আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) প্রদত্ত তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের শুরু থেকে মধ্য ভূমধ্যসাগরে সমুদ্র পাড়ি দিতে গিয়ে এক হাজারেরও বেশি মানুষ মারা গেছেন।

অভিবাসন ও এনজিও কর্মীরা আশঙ্কা করছেন, “মধ্য ভূমধ্যসাগরে মানবিক সংকট গ্রীষ্মে আরও খারাপ হয়ে উঠবে। সাগরে আবহাওয়ার পরিস্থিতি যত ভালো হবে ইউরোপের দিকে বিপজ্জনক পারাপারের প্রচেষ্টা আরও বাড়বে।”


এমএইউ/আরআর    


 

অন্যান্য প্রতিবেদন