লেবানন জানিয়েছে, সিরিয়ার শরণার্থীদের দেশ থেকে বহিষ্কার করা হতে পারে৷ আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীগুলি এ কাজ না করলে কর্তৃপক্ষই তা করবে৷ যদিও তুরস্কে জাতিসংঘের এক প্রতিনিধি এই সপ্তাহে সতর্ক করেছেন, সিরিয়ার পরিস্থিতি শরণার্থীদের আবারো সে দেশে ফেরত পাঠানোর জন্য উপযুক্ত নয়৷
লেবাননের প্রধানমন্ত্রী নাজিব মিকাতি সোমবার (২০ জুন) বলেন, আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীগুলি সিরীয়দের ফেরাতে ব্যর্থ হলে তবে তিনি শরণার্থীদের সে দেশে ফেরত পাঠাতে প্রস্তুত৷ লেবানন নিজের জনসংখ্যার তুলনায় বিশ্বের সর্বোচ্চ সংখ্যক শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে৷ তবে লেবাননের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি উদ্বেগজনক৷
সিরিয়ায় সংকট শুরুর ১১ বছর পর, বিশেষ করে বর্তমান পরিস্থিতিতে লেবাননের এই বোঝা বহন করার ক্ষমতা নেই–এমনটাই বলেন মিকাতি৷ তার কথায়, ‘‘সিরিয়ার শরণার্থীদের তাদের দেশে ফেরত পাঠাতে আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীগুলিকে লেবাননের সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানাচ্ছি৷ নইলে আইনি উপায়ে, প্রয়োজনে আইন আরো কঠোর করে সিরীয়দের ফেরত পাঠানো হবে৷’’
জাতিসংঘ সমর্থিত ‘লেবানন ক্রাইসিস রেসপন্স প্ল্যান (২০২২-২০২৩)’ সূচনার একটি অনুষ্ঠানে এমন মন্তব্য করেন মিকাতি৷ লেবাননের জন্য জাতিসংঘের মানবিক সমন্বয়কারী নাজাত রোচদিও সমর্থনের সুরে বলেন, ‘‘সিরিয়ার শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়ার ভার শুধু এই দেশের উপর ছেড়ে দেয়া ঠিক না৷’’
লেবাননের সামাজিক বিষয়ক মন্ত্রী হেক্টর হাজ্জার মে মাসে বলেছিলেন, লেবাননের পক্ষে এত শরণার্থীকে আশ্রয় দেয়ার সামর্থ নেই৷ জাতিসংঘ জানিয়েছে, ২০১৫ সাল থেকে লেবানন ক্রাইসিস রেসপন্স প্ল্যানের মাধ্যমে প্রায় ৮৫০ কোটি ইউরো আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়েছে৷তবে ২০ জুনেই সিরিয়া সংকটের প্রভাব মোকাবেলায় আরো ৩০০ কোটি ইউরোর আবেদন করেছে লেবানন৷
দারিদ্রের জ্বালা
লেবাননে গুরুতর অর্থনৈতিক সংকটের ফলে চরম দারিদ্র্য দেখা দিয়েছে, যার ফলে সিরিয়ার শরণার্থীদের নিয়ে জনগণের মধ্যে অসন্তোষ বেড়েছে৷
রয়টার্স জানিয়েছে, লেবাননে ১০ জন সিরীয়দের মধ্যে নয়জন গরিব, যা সাধারণত লেবাননের জনসংখ্যার তুলনায় বেশি৷ কিন্তু অনেকে বলছেন, গরিব লেবানিজদের তুলনায় কল্যাণমূলক সংস্থাগুলির থেকে গরিব সিরীয়রা বেশি আর্থিক সহায়তা পাচ্ছেন৷

জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলি লেবাননে মানবিক সহায়তার মাত্রা বাড়িয়েছে৷ পাশাপাশি তুরস্ক, জর্ডান, ইরাক এবং মিশরের মতো অন্য দেশগুলি যারা প্রচুর সিরীয় শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে, তারাও অর্থনৈতিক চাপের মধ্যে রয়েছে এবং পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে৷
ফেরার উপযুক্ত পরিবেশ নেই: জাতিসংঘ
তুরস্ক প্রায় তিন লাখ ৭০ হাজার সিরীয় শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছিল৷ কিন্তু সাধারণ জনগণের মধ্যে তা নিয়ে অসন্তোষ বেড়ে যাওয়ার ফলে শরণার্থীদের ফেরত পাঠাতে চেয়েছে সরকার৷

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এর্দোয়ান, গত মাসে উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ার ‘নিরাপদ অঞ্চলে’ প্রায় ১০ লাখ সিরীয়কে পুনর্বাসনের পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেছিলেন৷ কিন্তু ইউএনএইচসিআর-এর তুরস্কের প্রতিনিধি, ফিলিপ লেক্লারক উদ্বেগ জানিয়ে বলেছেন, সিরিয়ার পরিস্থিতি শরণার্থীদের ফিরে যাওয়ার জন্য উপযুক্ত নয়৷
প্রতি সপ্তাহে প্রায় ৮০০ জন সিরীয় তুরস্ক থেকে উত্তর সিরিয়ায় ফিরে আসেন৷ কিন্তু বেশিরভাগই তুরস্কে থাকতে চান কারণ তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা সিরিয়ার তুলনায় ভালো৷
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডাব্লিউ) এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল-সহ অধিকার গোষ্ঠীগুলি সিরিয়ায় ফেরত পাঠানো নিয়ে সতর্ক করেছে৷ বাশার আল-আসাদের আমলে ফেরত যাওয়া শরণার্থীদের নির্বিচারে গ্রেপ্তার করে নির্যাতনের কথাও জানিয়েছে তারা৷
আরকেসি/কেএম (রয়টার্স, ইনফোমাইগ্রেন্টস)