বেশ কিছু ক্ষেত্রে আশ্রয়প্রার্থী ও অনিয়মিত অভিবাসীদের ইলেকট্রনিক ব্রেসলেট ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে যুক্তরাজ্যে। ছবি: ইনফোমাইগ্রেন্টস
বেশ কিছু ক্ষেত্রে আশ্রয়প্রার্থী ও অনিয়মিত অভিবাসীদের ইলেকট্রনিক ব্রেসলেট ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে যুক্তরাজ্যে। ছবি: ইনফোমাইগ্রেন্টস

চলতি সপ্তাহ থেকে যুক্তরাজ্যে অনিয়মিত উপায়ে আসা বেশ কিছু অভিবাসীদের জিপিএস-সহ ইলেকট্রনিক ব্রেসলেট ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হতে পারে বলে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এমন ব্রেসলেট দিয়ে মূলত আশ্রয়প্রার্থীদের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণে রাখতে চায় যুক্তরাজ্য কর্তৃপক্ষ।

যুক্তরাজ্যে আশ্রয় ও সুরক্ষা চাওয়া ব্যক্তিদের দুঃস্বপ্নের শেষ নেই৷ চ্যানেল পেরিয়ে আসা আশ্রয়প্রার্থীদের রুয়ান্ডা পাঠানোর চুক্তির পর এবার আশ্রয়প্রার্থী ও অনিয়মিত অভিবাসীদের ইলেকট্রনিক ব্রেসলেট পড়তে বাধ্য করার পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে।

লন্ডন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, “এক বছর মেয়াদি পাইলট প্রকল্পের অংশ হিসেবে চলতি সপ্তাহ থেকে যুক্তরাজ্যে অনিয়মিত উপায়ে আসা বেশ কিছু অভিবাসীদের জিপিএস সজ্জিত ইলেকট্রনিক ব্রেসলেট ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হতে পারে।”

দেশটির কর্তৃপক্ষ আরও জানায়, ‘যুক্তরাজ্য থেকে বহিষ্কারের হুমকিতে থাকা অনিয়মিত অভিবাসী এবং চ্যানেল জুড়ে অস্থায়ী নৌকায় "বিপজ্জনক এবং অপ্রয়োজনীয়’ রুটে আসা অভিবাসীদের জন্য এই নিয়ম প্রযোজ্য হবে।” 


যুক্তরাজ্য হোম অফিস বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় জানিয়েছে, জিপিএস-যুক্ত যন্ত্রের মাধ্যমে কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট আশ্রয়প্রার্থীদের সঙ্গে সবসময় যোগাযোগ রক্ষা করতে পারবে। পাশাপাশি অভিবাসন প্রত্যাশীরাও আশ্রয় আবেদনের অগ্রগতি ঠিকভাবে অনুসরণ করতে পারবেন।  

পুরোপুরি না হলেও অন্তত আশ্রয়প্রার্থীদের আগমন এবং ফেরত যাওয়ার উপর নজর রাখার অনুমতি দিতে হবে কর্তৃপক্ষকে যার ফলে আশ্রয়প্রার্থীরা একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের বাইরে চলে না যান। নতুন নিয়মে ব্রেসলেট পরা ব্যক্তিদের একটি পুলিশ স্টেশন বা অভিবাসীদের জন্য নির্দিষ্ট কোনো কেন্দ্রে নিয়মিত হাজিরা দিতে হবে। কর্তৃপক্ষের মতে, এই নিয়ম মানতে রাজি না হওয়ায় অভিবাসীকে আটক করা বা বিচারের আদেশ দেওয়া হতে পারে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান জানিয়েছে, ‘‘২০২২ সালের জানুয়ারিতে প্রকাশিত ‘ইমিগ্রেশন বেইল’ নামক একটি আইনের উপর ভিত্তি করে এই পরিকল্পনাটি নেয়া হয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে অপরাধমূলক কাজ এবং সাধারণের নিরাপত্তার হুমকি হতে পারে, এমন যে কোনো ব্যক্তিকে ইলেকট্রনিক ব্রেসলেট ব্যবহারের জন্য বাধ্য করা যাবে।’’

পড়ুন>>উপকূলে ব্যাপক কড়াকড়ি সত্ত্বেও বেড়েছে ইংলিশ চ্যানেল পাড়ির প্রচেষ্টা

উল্লেখিত ‘ইমিগ্রেশন বেইল’ এ বেশ কিছু নির্দিষ্ট অভিবাসীদের সংযুক্ত করার সম্ভাবনার কথা উল্লেখ রয়েছে। তবে এখানে আশ্রয়প্রার্থীদের এই আইনে সংযুক্ত করার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়নি। কারণ এই পদক্ষেপের সম্ভাব্য লক্ষ্য হিসাবে অপরাধীদের বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে একজন নতুন আশ্রয়প্রার্থীর পক্ষে অপরাধ করে দোষী সাব্যস্ত হওয়াটা সময়সাপেক্ষ ও বিশ্বাস্যযোগ্য নয়। 

মানবাধিকার আদালত থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত লন্ডনের

ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে আসা আশ্রয়প্রার্থীদের একটি দলকে রুয়ান্ডা পাঠানোর প্রথম বিমানটি গত ১৪ জুন বাতিল করতে বাধ্য হয় যুক্তরাজ্য।

ইউরোপীয় কোর্ট অফ হিউম্যান রাইটস (ইসিএইচআর) এর এক রায়ের পর এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। প্রথম ফ্লাইটের অন্তত ৩০ জন আশ্রয়প্রার্থী গত কয়েকদিনে মানবিক বা স্বাস্থ্যগত কারণ দেখিয়ে আদালতের শরণাপন্ন হন। যুক্তরাজ্যের আদালতে করা তাদের বেশ কয়েকটি আবেদন খারিজ হলেও শেষ মুহূর্তে এক ইরাকির আবেদন আমলে নিয়েছিল ইসিএইচআর।

এই বিপত্তির পরে, ব্রিটিশ সরকার অভিবাসন সংক্রান্ত ব্যাপারে নিজেদের ইসিএইচআর থেকে মুক্ত রাখার ঘোষণা দিয়েছে। 

আরও পড়ুন>>আশ্রয়প্রার্থীদের রুয়ান্ডা পাঠাতে আদালতের বাধা, কী করবে যুক্তরাজ্য

২২ জুন বুধবার, ব্রিটিশ সংসদে ‘'রাইটস রিমুভাল বিল' নামে একটি বিল পেশ করা হয়েছে, যা মানবাধিকার সম্পর্কিত ইউরোপীয় কনভেনশনকে অমান্য করার অনুমতি দেয়৷

এই আইনটি ব্রিটিশ সরকারকে ইউরোপীয় কোর্ট অফ হিউম্যান রাইটস (ইসিএইচআর) এর যে কোনো ধরনের অন্তর্বর্তী নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করার অনুমতি দেবে। এটি দোষী সাব্যস্ত বিদেশিদের পারিবারিক জীবনের অধিকারের থেকেও জনসাধারণের নিরাপত্তাকে প্রাধান্য দিবে। যার সাহায্যে ভুক্তভোগী বিদেশিদের বহিষ্কার প্রক্রিয়া সহজ হবে। 

ব্রিটিশ বিচারমন্ত্রী ডমিনিক রাব বলেছন, “নতুন এই বিলটি আমাদের স্বাধীনতার গর্বিত ঐতিহ্যকে শক্তিশালী করবে। এটি আমাদের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালী ও বৃহত্তর সম্মান নিশ্চিত করবে। পাশাপাশি বিচার বিভাগও সাধারণ জনসাধারণকে আরো ভালভাবে সুরক্ষা প্রদান করতে সক্ষম হবে।"

অভিবাসন সংস্থা, এনজিও এবং বিরোধী লেবার পার্টি এই নতুন খসড়া আইনের নিন্দা করেছে। 

ব্রিটিশ লেবার পার্টির পক্ষে এমপি এলি রিভস বলেন, ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের জন্য একটি অত্যন্ত অন্ধকার দিন।” তিনি এই বিলের নিন্দা জানিয়ে আরো বলেন, “নানা কেলেঙ্কারিতে আক্রান্ত সরকার নিজেদের ব্যর্থতা আড়াল করতে এই আইন প্রস্তাব করেছে।” 


অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ইউকে জানিয়েছে, “'রাইটস রিমুভাল বিল' যুক্তরাজ্যের সাম্য ও ন্যায্যতার ঐতিহ্যকে মারাত্মকভাবে দুর্বল করবে এবং আমাদের অধিকারকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলবে। যুক্তরাজ্য সরকার আমাদেরকে ৫০ এর দশকে ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।”

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতে, “এটি মানুষের অধিকারের উপর নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতা দখল। এটি অধিকারের সুরক্ষাকে দুর্বল করবে। এটি একটি ভুল বিল।”


এমএইউ/আরকেসি


 

অন্যান্য প্রতিবেদন