অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল প্রকাশিত সর্বশেষ প্রতিবেদনে, লিথুয়ানিয়ার ডিটেনশন সেন্টারে থাকা অভিবাসীদের ভয়াবহ জীবনযাত্রার নিন্দা করা হয়েছে৷ নির্বিচারে আটক, সহিংসতা এবং কঠিন প্রশাসনিক পদ্ধতির জাঁতাকলে পড়ে হাজারো অভিবাসী তাদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে কোনো প্রকার তথ্য ছাড়াই মাসের মাস ধরে এখানে রয়েছেন৷
লিথুয়ানিয়ায় আটকে থাকা অভিবাসীদের জীবনযাত্রার উপর ফরাসি এনজিও ডক্টরস উইদাইউট বর্ডার (এমএসএফ)-এর প্রতিবেদনের এক মাসেরও বেশি সময় পর আন্তজার্তিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালও প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
২৭ জুন প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে অ্যামনেস্টি লিথুয়ানিয়ার আটক কেন্দ্রগুলিতে সংঘটিত নির্যাতন, পুশব্যাক,অত্যাচার, নির্বিচারে আটক, যৌন নিপীড়ন এবং অভিবাসীদের নিয়মিত ‘নিগ্রহ’ করার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আনা হয়েছে।

২০২১ সালের নভেম্বর থেকে চলতি বছরের মে পর্যন্ত এই অধিকার সংস্থার একটি প্রতিনিধি দল কয়েক ডজন অভিবাসী ও শরণার্থীদের সঙ্গে কথা বলে। এছাড়া দলটি মেদিনিনকাই (শুধুমাত্র পুরুষদের জন্য নির্ধারিত আটক কেন্দ্র) এবং কিবারতাই (যেখানে মহিলা এবং শিশুরাও বাস করে) আটক কেন্দ্র সরেজমিনে পরিদর্শন করেছিল।
এই দুই কেন্দ্র ছাড়াও লিথুয়ানিয়ান ভূখণ্ডে আরও বেশ কিছু জায়গা রয়েছে, যেমন অ্যালিটাস, পাবরাবে বা লিংকমেনিস শরণার্থী শিবির। এসব কেন্দ্রগুলিকে কারাগারের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে।
আরও পড়ুন>>লিথুয়ানিয়ায় ক্যাম্প থেকে অর্ধনগ্ন অবস্থায় নারী অভিবাসীদের আটক
আন্তজার্তিক অধিকার সংগঠনটি তাদের প্রতিবেদনে দেখিয়েছে, “প্রতিবেশী বেলারুশ থেকে থেকে লিথুয়ানিয়ায় প্রবেশ করা হাজারো অভিবাসীকে অমানবিক ও বিব্রতকর পরিস্থিতিতে আটকে রাখা হয়েছে। তারা ন্যায্য আশ্রয় পদ্ধতির সুবিধা থেকে বঞ্চিত এবং গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার।”
অ্যামনেস্টির বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “অনেক লোক বলেছে যে তারা জাতিগত বিদ্বেষের কারণে আটক কেন্দ্রের নিরাপত্তা রক্ষীদের হাতে মারধর, অপমান, হয়রানির শিকার হয়েছেন।”
প্রতিবেদনে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল জোর দিয়ে বলেছে, আটকে কেন্দ্রগুলোতে কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠিত আইনি সহায়তার ব্যবস্থাগুলি বিতর্কিত। সেখানে নিযুক্ত আইনজবীরা দেশটির অভিবাসন পরিষেবা দপ্তরের মাধ্যমে নিয়োগ প্রাপ্ত। যেখানে আইনজীবীদের এই দপ্তরের বিরুদ্ধেই মূলত আইনি লড়াই চালিয়ে যাওয়ার কথা সেখানে একই কাঠামো থেকে নিয়োগ দেয়া ব্যক্তিরা কীভাবে কাজ করবেন তা অবিশ্বাস্য।
পড়ুন>>লিথুয়ানিয়ায় নয় মাস ধরে বন্দি আড়াই হাজারেরও বেশি অভিবাসী
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ইউরোপ মিশনের পরিচালক নিলস মুইজনিকস বলেন, “আইনি ব্যবস্থার এই সংঘাত অভিবাসীদের জন্য বিপজ্জনক ঝুঁকি তৈরি করে। সাধারণত শরণার্থী বা অভিবাসীদের সহায়তা ও রক্ষা করার জন্য আইনজীবী নিয়োগ করা হয় তাদের স্বার্থের পক্ষে লড়াইয়ের কথা মাথায় রেখে। এখানে আইনজীবী নিয়োগের সমস্যা সুরক্ষা চাওয়া ব্যক্তিদের জন্য অতিরিক্ত বাধা তৈরি করবে।”
লিথুয়ানিয়ায় খুব কম লোককে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। ইনফোমাইগ্রেন্টসের সম্পাদকীয় দলের সঙ্গে যোগাযোগ করা অনেক অভিবাসী জানিয়েছেন, নিয়মতান্ত্রিকভাবে তাদের আশ্রয় অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে।
আরও পড়ুন>>বেলারুশ সীমান্তে ক্যামেরা স্থাপনের পরিকল্পনা লিথুয়ানিয়ার
২০২১ সালের সুরক্ষা চাওয়া তিন হাজার ২৭২ টি আবেদনের মধ্যে মাত্র ৫৪টি আবেদনকে সুরক্ষার জন্য গ্রহণ করা হয়েছিল। যা মোট আবেদনের দুই শতাংশেরও কম।
এমএইউ/আরকেসি