(ফাইল ছবি) আল্পস পর্বতের ইটালি ফ্রান্স সীমান্ত পার হতে চাওয়া কয়েকজন অভিবাসী। ছবি: রয়টার্স
(ফাইল ছবি) আল্পস পর্বতের ইটালি ফ্রান্স সীমান্ত পার হতে চাওয়া কয়েকজন অভিবাসী। ছবি: রয়টার্স

২০১৮ সালের আল্পস পর্বতের ফরাসি অংশে ব্লেসিং ম্যাথিউ নামে এক নাইজেরীয় তরুণী অভিবাসী মারা যান। অভিবাসন সংস্থা ‘তুস মিগ্রঁ’ এবং নিহতের বোনের অনুরোধ সত্ত্বেও এ ঘটনায় পুনঃতদন্ত শুরুর আবেদন নাকচ করে দিয়েছে গ্রোনোবল শহরের পাবলিক প্রসিকিউটর।

ফরাসি আল্পসের একটি জায়গায় ২০১৮ সালে অজ্ঞাত কারণে নিহত হন নাইজেরীয় অভিবাসী ব্লেসিং ম্যাথিউ। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলার রায় ও আপিল শেষ হলেও নতুন সাক্ষ্য নিয়ে এক মাসে আগে আবারও তদন্ত চালুর আবেদন করেন নিহত তরুণী ব্লেসিংয়ের বোন ক্রিশ্চিয়ানা ওবি ডার্কো এবং অভিবাসন সংস্থা ‘তুস মিগ্রঁ’। 

আবেদনের প্রায় এক মাস পরে এই অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছে স্থানীয় পাবলিক প্রসিকিউটর।

৩০ জুন, বৃহস্পতিবার ‘তুস মিগ্রঁ’ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, “গ্রোনোবল শহরের পাবলিক প্রসিকিউটর তরুণীর মৃত্যুর তদন্ত পুনরায় চালু করার জন্য চেম্বার আদালতের কাছে চাওয়া আদেশ বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”

আরও পড়ুন>>কেন সমুদ্রপথে ইটালিতে হাজারো মিশরীয় অভিবাসী?

২১ বছরের ব্লেসিং ম্যাথিউ ইটালি সীমান্ত অতিক্রম করে ফ্রান্সে এসেছিলেন৷ পরে ২০১৮ সালের ৯ মে দেশটির দুরন্স এলাকায় একটি জলাশয়ে ডুবন্ত অবস্থায় তার রাশ পাওয়া যায়৷ 

অনেকেই মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে ঘটনার দুদিন আগে ইটালি-ফ্রান্স সীমান্তের এই এলাকায় চলা সীমান্ত পুলিশের টহলের দিকে অভিযোগ তুললেও স্থানীয় গ্যাপ প্রসিকিউটর কার্যালয় এই অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছিল। 

এর আগে ক্রিশ্চিয়ানা ওবি ডার্কো একটি নাগরিক উদ্যোগের সহায়তায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছিলেন এবং যার ফলে একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত খোলা হয়ছিল৷ 

আরও পড়ুন>>‘গত তিন মাসে আমার ১২ কেজি ওজন কমেছে”

১৮ জুন ২০২০ তারিখে এই অভিযোগের রায় দেয় আদালত। রায়ে তরুণীর মৃত্যুতে কেউ জড়িত থাকার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করা হয়। পরবর্তীতে আপিল আবেদনেও রায়টি অপরিবর্তিত রাখেন স্থানীয় চেম্বার আদালত। 

কিন্তু, চলতি বছরের মে মাসের শেষের দিকে অভিবাসন সংস্থা তুস মিগ্রঁ এবং ক্রিশ্চিয়ানা ওবি ডার্কো ঘোষণা দেন, তারা এই ঘটনায় অভিযুক্ত পুলিশের জেন্ডারমেরি সদস্যের দেয়া সাক্ষ্যের বিভিন্ন অসঙ্গতি প্রমাণ করতে পারবেন।

মূলত, এই যুক্তির উপর ভিত্তি করে আবারও তদন্ত চালুর করার অনুরোধ করা হয়েছিল। এছাড়া হের্ভে নামক একজন নতুন প্রত্যক্ষদর্শীকে হাজির করে তারা সেই ঘটনার প্রমাণ দিতে পারবেন বলে দাবি করেছিলেন। 

নতুন সাক্ষী হের্ভে দাবি করেন, তিনি একজন পুলিশ সদ্যসকে নিহত ম্যাথিওকে অনুসরণ করতে দেখেছিলেন। সেই পুলিশ সদস্য নিশ্চিতভাবে ম্যাথিও পানিতে পড়ে যাওয়ার শব্দ শুনেছিলেন এবং তাকে কোন প্রকার সাহায্য করতে এগিয়ে আসেননি। 

আরও পড়ুন>> ইটালিতে প্রতিদিন গড়ে ৩০ শিশু নিখোঁজ

ভুক্তভোগীর বোন এবং তুস মিগ্রঁ এর মতে, “হের্ভের সাক্ষ্য প্রথমবারের মতো এই ঘটনায় একটি একটি রহস্যের অস্তিত্ব প্রকাশ করেছে।”

বার্তা সংস্থা এএফপি’র হাতে আসা একটি নথিতে দেখা যায়, “গ্রোনোবল শহরের পাবলিক প্রসিকিউটর চেম্বার আদালতের বিরুদ্ধে গিয়ে পুনরায় তদন্ত চালুর সিদ্ধান্ত থেকে বিরত থেকেছে।” 

তুস মিগ্রঁ তাদের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, “প্রসিকিউটর আমাদের আবেদন প্রত্যাখ্যানের যুক্তি হিসেবে দুটি কারণ উল্লেখ করেছে। এক, তিনি এটিকে প্রাসঙ্গিক বিবেচনা করেন না। দুই, আল্পস পর্বতের লা ভাসেত গ্রামে দৌড়ে পালানো তিন অভিবাসীর বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযানের ব্যাপারে ইতিমধ্যে প্রত্যেককে আলাদা আলাদা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল। যেহেতু প্রত্যেকে ব্যক্তিই আইনি হস্তক্ষেপে তাদের অবস্থান আগেই বর্ণনা করেছেন সে কারণে আবারও তদন্ত চালু সম্ভব নয়।”

পড়ুন>> ইটালি সীমান্তে স্থাপিত ফরাসি কার্যালয়ের বিরুদ্ধে অবৈধ কার্যক্রমের অভিযোগ

এছাড়াও, প্রসিকিউটর নিশ্চিত করেন যে হের্ভে নামক নতুন সাক্ষীর ব্যাপারে এই মামলার একদম শুরু থেকেই আদালতের কাছে তথ্য ছিল। এমনকি তদন্তকারী দল ২০১৮ সালের ১৪ এবং ১৫ মে তার সাথে দুবার ফোনে যোগাযোগ করেছিলেন। সে সময় ঘটনায় পুলিশের হামলার কোন কথা উল্লেখ করেননি এই সাক্ষী।

তুস মিগ্রঁ এই সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়ে জানায়, “প্রসিকিউটরের এই সিদ্ধান্ত অত্যন্ত ছোট এবং অল্প সময়ের মধ্যে নেওয়া হয়েছে। যা আমাদের তদন্তে আসা সমস্ত নতুন উপাদানকে সরিয়ে দেয়।”


এমএইউ/আরআর


 

অন্যান্য প্রতিবেদন