লিবিয়ার উপকূলে নৌকা উল্টে মালি থেকে আসা ২২ জন অভিবাসীর মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার জাতিসংঘ বিবৃতিতে জানায়, মৃতদের মধ্যে তিনটি শিশু রয়েছে।
নয় দিন সমুদ্রে থাকার পর ৬১ জন অভিবাসীকে জন জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করেছে লিবিয়ার উপকূলরক্ষী বাহিনী। এদের বেশিরভাগই মালির নাগরিক। জাতিসংঘ জানিয়েছে, মালি কর্তৃপক্ষ এটি নিশ্চিত করেছে।
জাতিসংঘের অভিবাসন বিষয়ক সংস্থা আইওএম-এর মুখপাত্র সাফা মেসহেলি বলেছেন, ২২ জুন অভিবাসীরা লিবিয়ার জুওয়ারা থেকে রওনা দিয়েছিলেন। জুওয়ারা টিউনিশিয়া সীমান্তের লাগোয়া একটি শহর। স্থানীয় সময় দুপুর একটায় একটি রবারর বোটে রওনা দেয় অভিবাসী দলটি।
মেসহেলি জানান, "নয় দিন সমুদ্রে থাকার পর, লিবিয়ার উপকূলরক্ষী বাহিনী তাদের উদ্ধার করে। শনিবার তাদের তীরে ফিরিয়ে আনা হয়।"
"বেঁচে থাকা অভিবাসীরা জানিয়েছেন, মালি থেকে আসার পথে সহযাত্রীদের মৃত্যু হয়েছে। জলে ডুবে মৃত্যু এবং ডিহাইড্রেশন থেকে শরীরে জল কমে যাওয়া এই দুটি কারণ নথিভুক্ত করা হয়েছে। মৃতদের মধ্যে তিনটি শিশু রয়েছে," জানিয়েছে আইওএম।
মেসহেলি বলেন, অসুস্থ অভিবাসীদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকি অভিবাসীদের আল-মায়া আটক কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
২০১১ সালে লিবিয়ার স্বৈরাচারী নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফির ক্ষমতাচ্যুত হন। গাদ্দাফি হত্যার পর সে দেশের পরিস্থিতি সংকটজনক হয়ে উঠেছে। গত ১০ বছরে ইউরোপে অনিয়মিত অভিবাসনের মূল পথ হয়ে উঠেছে লিবিয়া।

হাজারো অভিবাসীর মৃত্যু হয়েছে সমুদ্রপথে আসার সময়। হাজারো অভিবাসীকে আটক করেছে লিবিয়ার উপকূলরক্ষীবাহিনী। ইউরোপীয় ইউনিয়ন সেই সময় বাহিনীকে সমর্থন জানিয়েছে। কিন্তু লিবিয়া হয়ে ইউরোপে আসা বন্ধ হয়নি।
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) প্রদত্ত তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের শুরু থেকে মধ্য ভূমধ্যসাগরে সমুদ্র পাড়ি দিতে গিয়ে এক হাজারেরও বেশি মানুষ মারা গিয়েছেন।
অভিবাসন ও এনজিও কর্মীরা আশঙ্কা করছেন, “সাগরে আবহাওয়ার পরিস্থিতি যত ভালো হবে ইউরোপের দিকে বিপজ্জনক পারাপারের প্রচেষ্টা আরও বাড়বে।”
মন্ত্রণালয় দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলিকে সমবেদনা জানিয়েছে। মালির সরকার বিবৃতিতে বলেছে, জনগণকে "অনিয়মিত অভিবাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে।"
আইওএম বলছে,২০২১ সালে দুই হাজার জন অভিবাসী ভূমধ্যসাগরে ডুবে গিয়েছেন বা নিখোঁজ হয়েছেন। ২০২০ সালে যা ছিল এক হাজার ৪০১ জন। ঝুঁকি থাকলেও এই পথে বারবার আসছেন অভিবাসীরা।
মালিতে বর্তমানে সামরিক শাসন চলছে। দীর্ঘদিন অস্থিরতা রয়েছে সেখানে। পাশাপাশি আঞ্চলিক জিহাদি গোষ্ঠীর কারণেও ক্ষতির মুখে পড়েছে এ দেশ।
জেহাদিরা ২০১২ সালে উত্তর মালিতে একটি আঞ্চলিক গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে যোগ দেয়। পরবর্তীতে প্রতিবেশী বুরকিনা ফাসো এবং নাইজারে তা ছড়িয়ে পড়ে। এর ফলে হাজারো সাধারণ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন।
দুই লাখেরও বেশি মানুষ তাদের বাড়ি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। গরিব দেশগুলির অর্থনীতির আরো ক্ষতি হয়েছে। বিপজ্জনক পথে ইউরোপে এসে নতুন করে জীবন গড়ে তোলার চেষ্টাও বেড়েছে।
আরকেসি/কেএম (এএফপি)