ভাদিম নামে এক ইউক্রেনীয়র কথা বলব আজ৷ রুশ বোমা হামলা থেকে নিজের মাকে বাঁচানোর চেষ্টা করার সময় মারাত্মকভাবে দগ্ধ হন এই তরুণ৷ ইউক্রেন থেকে চিকিৎসার জন্য রোমে আনা হয় তাকে৷
হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে ভাদিম এখন তার ভবিষ্যতের কথা ভাবছেন৷ তিনি দেশে ফিরতে চান৷ ইটালির রাজধানী রোমের সান্ট' ইউজেনিও হাসপাতালে অস্ত্রোপচার এবং চিকিৎসা করা হয় ভাদিমের৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবতে চাই৷ অতীত বেদনাদায়ক, কিন্তু আমি ইউক্রেনে ফিরে যেতে চাই৷’’
বোমা হামলা থেকে মাকে বাঁচাতে গিয়ে গুরুতর দগ্ধ অবস্থায় ভাদিম রোমে পৌঁছান৷ তিনি ১১ জুলাই হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন৷ সম্পূর্ণ সেরে না ওঠা অবধি তিনি রোমে থাকবেন৷ তবে দ্রুত দেশে ফিরতে চান তিনি৷
ল্যাজিওর আঞ্চলিক স্বাস্থ্য কাউন্সিলর অ্যালেসো ডি'আমাটোর পাশে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলেন ভাদিম, তাঁর কথায়, ‘‘আমি ইউক্রেনে ফিরে যেতে চাই এবং রান্নার কোর্স করতে চাই৷ এখন আমি হাসপাতালের বদলে অন্য কিছু দেখতে চাই৷ তাই রোমে কিছুক্ষণ থাকব৷ আমি দুঃখ ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করি, আমি শুধু সুন্দর জিনিসের কথা ভাবতে চাই৷’’
কাউন্সিলর এবং অন্যদের পাশে হাসিমুখে কথা বলছিলেন ভাদিম৷ তবে ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কারণে তার চোখেমুখে সেই আবেগ এবং যন্ত্রণা রয়েছে৷ ১৭ বছরের তরুণ রোমের সাংবাদিকদের বলেছিলেন, কী যে হয়েছিল তার মনে নেই৷
‘‘শুধু সুন্দর জিনিসের কথা ভাবতে চাই’’
ইটালিয়ান ফিনান্সিয়াল গার্ড ফ্লাইটে তিনি ১৩ মে রোমে পৌঁছান৷ এর আগে মায়ের সঙ্গে বাসে ইউক্রেন ছেড়ে পালিয়ে আসার চেষ্টা করেছিলেন তিনি৷ কিন্তু বোমা হামলার সময় বাসে আগুন লাগে৷
আগুনের শিখা থেকে মাকে বাঁচানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন তিনি৷ ভাদিমের মা অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যান৷ ভাদিম যখন রোমে পৌঁছান, তখন তার শরীরের ৫০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল৷
২০ মে ও ৩০ জুন দুটি অস্ত্রোপচার হয়েছে তার ৷ পোড়ার আঘাতের ফলে ত্বকে গ্রাফ্ট অস্ত্রোপচারও হয়েছে৷ পরে তাকে পুনর্বাসন কেন্দ্রে রাখা হয়৷ এখন স্বাভাবিক জীবনে ফেরার চেষ্টা করছেন এই তরুণ৷
স্থানীয় স্বাস্থ্যসেবা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ‘‘ভাদিম সুস্থ হওয়ায় তাকে হাসপাতাল থেকে ছাড়া হয়েছে৷ উনি স্বাভাবিক জীবন শুরু করতে পারেন৷’’
ভাদিম হাসপাতালে থাকার সময় নাগরিক সুরক্ষার পাশাপাশি রোমের স্বাস্থ্যসেবা কর্তৃপক্ষ তার আত্মীয় এবং তুতো ভাইয়ের যত্ন নিয়েছে৷ সহায়তা নিশ্চিত করতে একজন সাংস্কৃতিক মধ্যস্থতাকারীও রাখা হয়েছিল৷
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ‘‘ইউক্রেনে ফেরার আগে অন্তত দুই বা তিন সপ্তাহের জন্য পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে একটি হোটেলে রাখা হবে ভাদিমকে৷’’
ছয় মাসে, ৮৪ জন ইউক্রেনীয়র চিকিৎসা রোমের সান্ট' ইউজেনিওতে
কাজের জন্য সান্ট' ইউজেনিওকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন ডি'আমাতো৷ এই আঞ্চলিক কাউন্সিলর বলেন, ‘‘সবাই মিলে এই কাজ করা হচ্ছে৷’’ তবে ভাদিমকে নিজের মতো থাকতে ছেড়ে দেওয়া হবে না৷
তার কথায়, ‘‘ভাদিম সব সময় তার আত্মীয়া এবং তুতো ভাইয়ের সঙ্গে রোমেই থাকবেন৷’’
স্যান্ট'ইউজেনিও-তে ভাদিমই একমাত্র ভর্তি ছিলেন এমন নয়৷ গত ছয় মাসে হাসপাতালে ৮৪ জন ইউক্রেনীয় ভর্তি হয়েছেন৷ মৃত্যুর হার ১০.৭ শতাংশ৷ মঙ্গলবার ইউক্রেন থেকে আরো দুই জন শরণার্থী হাসপাতালে এসেছেন৷তাদের হাতে অস্ত্রোপচার করতে হবে৷
আরকেসি/এআই