রাশিয়ার একজন কৃষকের হাতে গম। মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার বহু দেশ ইউক্রেন ও রাশিয়া থেকে আসা গমের উপর নির্ভরশীল। ছবি: রয়টার্স
রাশিয়ার একজন কৃষকের হাতে গম। মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার বহু দেশ ইউক্রেন ও রাশিয়া থেকে আসা গমের উপর নির্ভরশীল। ছবি: রয়টার্স

ইউক্রেনে উৎপাদিত শস্যের উপর একচেটিয়াভাবে নির্ভরশীল অনেক দেশে দেশটিতে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে কোনো শস্য সরবরাহ করা হয়নি। ফলে বিশ্বের অনেক দেশে খাদ্য সংকট এবং লক্ষ লক্ষ মানুষকে অভিবাসী হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে বলে সতর্ক করেছে ইউরোপীয় সীমান্তরক্ষী সংস্থা ফ্রন্টেক্স।

ইইউ বহিঃসীমান্ত নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে থাকা সংস্থা ফ্রন্টেক্সের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক আইজা কালনাজা সোমবার সতর্ক করে বলেছেন, “ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী সৃষ্ট খাদ্য সংকটের কারণে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দিকে উদ্বাস্তুদের নতুন ঢেউ ঠেকাতে ইইউকে এখন থেকে প্রস্তুতি নিতে হবে।”

আরও পড়ুন>>হাঙ্গেরিতে ইউক্রেনীয় শরণার্থীরা স্বাগত, বাকিরা?

ইইউ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীদের নিয়ে চেক প্রজাতন্ত্রের রাজধানী প্রাগে আয়োজিত এক বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি আরও বলেন, “ইউক্রেনীয়দের পাশাপাশি খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার কারণে ইউরোপের অন্যান্য অঞ্চল থেকে আসা শরণার্থীদের জন্যও ইইউকে প্রস্তুত থাকতে হবে।”

মূল্যবৃদ্ধি এবং খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা

ইউরোপের দরজায় অভিবাসী প্রবাহের উপর নজরদারির দায়িত্বে থাকা ইউরোপীয় এজেন্সি ফ্রন্টেক্স বিভিন্ন সময় সৃষ্ট অভিবাসন ঢেউ নিয়ে ইইউকে সতর্ক করে থাকে। সংস্থাটির সর্বশেষ সতর্কতায় উদ্বেগ দেখা দিয়েছে ব্রাসেলসে। 

তবে ভবিষ্যতে অভিবাসন সংকট নিয়ে এমন উদ্বেগের পেছনের কারণটি বেশ যুক্তিসংগত। ইউক্রেনের যুদ্ধের কারণে বিশ্বের অন্যতম প্রধান শস্য রপ্তানিকারক এই দেশটিতে গম উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। গত বছরের উৎপাদিত ফসল থেকে প্রায় ২০ মিলিয়ন টন শস্য এখনও কৃষ্ণ সাগরের ইউক্রেনীয় বন্দরে আটকে আছে। যার কারণে আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোসহ বিশ্বব্যাপী খাদ্য সংকটের ঝুঁকি বাড়ছে এবং খাদ্যদ্রব্যের লাগামহীন দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে।

পড়ুন>>ইটালিতে চিকিৎসায় সুস্থ, দেশে ফিরতে চান ইউক্রেনীয়

প্রকৃতপক্ষে, শস্যের জন্য অনেক দেশ প্রায় একচেটিয়াভাবে ইউক্রেন এবং রাশিয়া উপর নির্ভরশীল৷ যেমন, চলমান সংঘাতের কারণে টিউনিসিয়া এবং মিশরের লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রধান খাদ্য রুটির তীব্র সংকট সৃষ্টি হতে পারে। ২০২১ সালে টিউনিসিয়া ২.৪২ মিলিয়ন টন গম ব্যবহার করেছে, যেখানে দেশটির স্থানীয় উৎপাদন মাত্র ছয় লাখ ৮২ হাজার টন।

দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি এবং খাদ্য ঘাটতির ফলে সৃষ্ট অস্থিরতার কারণে আরও বেশি লোক তাদের দেশ ছেড়ে চলে যেতে পারে। অর্থনৈতিক সংকট এবং কাজের সম্ভাবনার অভাবের কারণে মূলত প্রতিবছর হাজার হাজার অভিবাসী তাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অনিয়মিত পথে অভিবাসনের চেষ্টা করতে বাধ্য হয়। 

বিশ্বে জোরপূর্বক স্থানচ্যুত ১০ কোটি মানুষ

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার পর বিশ্বে জোরপূর্বক স্থানচ্যুত মানুষের সংখ্যা ১০ কোটি স্পর্শ করেছে। তবে তার আগে গত বছরই এমন ভাগ্যাহত মানুষের সংখ্যা আগের রেকর্ড ভেঙেছে।

পড়ুন>>ইউক্রেনীয়দের পাচারের চক্র শনাক্ত 

ইউএনএইচসিআর এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, নিজ ঠিকানা ছাড়তে বাধ্য হওয়া মানুষের সংখ্যা ২০২১ সালের শেষে এসে দাঁড়িয়েছিল আট কোটি ৯৩ লাখে, যা আগের বছরে চেয়ে আট শতাংশ এবং দশ বছর আগের তুলনায় দ্বিগুণ বেশি। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এই মানুষদের দুই কোটি ৭১ লাখ বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নেয়া শরণার্থী এবং পাঁচ কোটি ৩২ লাখ অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত মানুষ (ঘর ছেড়ে পালালেও যারা নিজ দেশে অবস্থান করছেন)। 

পরিসংখ্যানে বিদেশে আশ্রয় নেয়া ৪৪ লাখ ভেনেজুয়েলার মানুষ ও ৪৬ লাখ আশ্রয়প্রার্থীও আছেন।

২০২১ সালে আগস্টে তালেবানের আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখলের প্রেক্ষিতে স্থানচ্যুত মানুষের সংখ্যায় বড় উল্লম্ফন হয়েছে। এছাড়াও ইথিওপিয়ার ট্রিগ্রে অঞ্চলের সংঘাতে অন্তত ২৫ লাখ মানুষ দেশটির ভিতরে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। এর মধ্যে ১৫ লাখ পরবর্তীতে তাদের বাসস্থানে ফিরে আসতে সক্ষম হন। আফ্রিকার বুরকিনা ফাসো ও শাদেও বহু মানুষ অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে সামরিক অভ্যুত্থানে মিয়ানমারে গৃহহীন হয়েছেন অনেকে।

আরও পড়ুন>>‘মাইগ্রেন্টস’: ইউক্রেনীয় শরণার্থীদের কাজ খুঁজে দিতে নতুন অ্যাপ

জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাই কমিশনার ফিলিপ্পো গ্রান্ডি জুনে বলেছিলেন, “এই মানবিক ট্র্যাজেডি মোকাবিলা, সংঘাত দূর করা এবং দীর্ঘস্থায়ী সমাধান খোঁজায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এক হতে হবে, নয়ত এই মর্মান্তিক এই প্রবণতা চলতেই থাকবে।”

অপরদিকে ফ্রন্টেক্স ইইউকে ভবিষ্যৎ অভিবাসন প্রবাহ নিয়ে সতর্ক করলেও কয়েক বছর ধরে অভিবাসীদের প্রতি দমনমূলক নীতির কারণে অত্যন্ত সমালোচিত সংস্থাটি।


এমএইউ/এআই 


 

অন্যান্য প্রতিবেদন