২০২২ সালের ট্রাফিকিং ইন পারসনস (টিআইপি) প্রতিবেদন প্রকাশকালে ওয়াশিংটনে বক্তব্য রাখছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন। ছবি: রয়টার্স
২০২২ সালের ট্রাফিকিং ইন পারসনস (টিআইপি) প্রতিবেদন প্রকাশকালে ওয়াশিংটনে বক্তব্য রাখছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন। ছবি: রয়টার্স

২০২২ সালের ট্র্যাফিকিং ইন পারসনস (টিআইপি) প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর। তাতে যে তিন স্তরে দেশগুলোকে ভাগ করা হয়, তার মধ্যে দ্বিতীয় স্তরে (টিয়ার-২) রাখা হয়েছে বাংলাদেশকে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, করোনা মহামারিতে বাংলাদেশের মানবপাচার প্রতিরোধ সক্ষমতার ওপর প্রভাব পড়েছে৷ তবে গতবারের তুলনায় মানব পাচার রোধে সরকারের সার্বিক প্রচেষ্টা বেড়েছে৷ এরপরও প্রতিবেদনে বাংলাদেশকে দ্বিতীয় ধাপের নজরদারির তালিকায় রাখা হয়েছে৷

১৯ জুলাই ‘ট্র্যাফিকিং ইন পারসনস রিপোর্ট’ শীর্ষক এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর৷ 

২০১৮, ২০১৯ ও ২০২০ সালে, বাংলাদেশকে টিয়ার-২ এর পর্যবেক্ষণ শ্রেণিতে রাখা হয়েছিল, যা বর্তমান অবস্থার চেয়েও খারাপ৷

প্রতিবেদনে আগের মতো এবারও দেশগুলোর পরিস্থিতি তিনটি ধাপে তুলে ধরা হয়েছে৷ মানবপাচারের শিকার ব্যক্তিদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সুরক্ষা আইনের (টিভিপিএ) বিষয়গুলোকে ভিত্তি হিসেবে ধরে ধাপগুলো তৈরি করা হয়েছে৷

পড়ুন>>অনিয়মিত পথে কেন মধ্যপ্রাচ্য থেকে ইউরোপে বাংলাদেশিরা?

মানবপাচার বন্ধে যেসব দেশ টিভিপিএর ন্যূনতম মানদণ্ড অর্জন করতে পেরেছে, সেগুলোকে প্রথম ধাপে রাখা হয়েছে৷ যেসব দেশ ন্যূনতম মানদণ্ড অর্জন করতে পারেনি কিন্তু প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে উল্লেখযোগ্যভাবে, সেগুলোকে রাখা হয়েছে দ্বিতীয় ধাপে৷

আর যেসব দেশ টিভিপিএর ন্যূনতম মানদণ্ডও অর্জন করতে পারেনি এবং পাশাপাশি পাচার বন্ধে উল্লেখযোগ্য চেষ্টাও চালাচ্ছে না সেগুলোকে রাখা হয়েছে শেষ ধাপে৷ বাংলাদেশের সঙ্গে ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা রয়েছে দ্বিতীয় ধাপে।




প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে মানব পাচারকারীদের বিরুদ্ধে তদন্ত ও শাস্তি প্রদানে সরকারের প্রচেষ্টা বেড়েছে৷ এ ঘটনায় একজন সংসদ সদস্যের পদ বাতিল হয়েছে৷ মানবপাচারের বিচারে ২০২১ সালের আগস্টে সাতটি ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম পুনরায় শুরু হয়েছে৷ এ ছাড়া জোরপূর্বক শ্রমে বাধ্য করার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার লক্ষ্যে সরকার আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) শ্রম কনভেনশনের প্রটোকল অনুসমর্থন করেছে।

আরও পড়ুন>>ইটালির আদালতে দুই বাংলাদেশির ২০ বছরের কারাদণ্ড

তবে বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে টিভিপিএর ন্যূনতম মান অর্জন করতে পারেনি বাংলাদেশ৷ আগের বছরের তুলনায় পাচারের শিকার হওয়ার ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের শনাক্ত করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পিছিয়েছে৷ পাচারের শিকার ব্যক্তিদের সেবায় ঘাটতি রয়েছে৷ রিক্রুটমেন্ট এজেন্সিগুলোর অভিবাসী শ্রমিকদের ওপর বাড়তি ফি নেওয়ার সুযোগ এখনো রয়ে গেছে৷ অবৈধভাবে শ্রমিক পাঠানো প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধেও যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি৷ এতে শ্রমিকেরা পাচারের শিকার হওয়ার ঝুঁকিতে পড়ছেন৷

মানবপাচার রোধে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সঙ্গে অংশীদারিত্ব বাড়ানোসহ একগুচ্ছ প্রস্তাব দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর৷

সম্প্রতি এক ব্রিফিংয়ে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের কর্মকর্তারা বলেন, মানবাধিকার প্রতিবেদন ও ধর্মীয় স্বাধীনতার উপর বৈশ্বিক প্রতিবেদন প্রকাশ করলেও গুরুত্বের বিবেচনায় স্টেট ডিপার্টমেন্টের এই মানবপাচার প্রতিবেদন বেশ এগিয়ে থাকে৷ এটা একমাত্র প্রতিবেদন যেখানে দেশগুলোকে র‌্যাংকিংয়ের আওতায় আনা হয় এবং এর ‍উপর ভিত্তি করে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন সহায়তার তারতম্য ঘটে৷




মানবপাচার প্রতিবেদন তৈরির প্রক্রিয়া তুলে ধরে জানানো হয়, প্রতিবেদনে থাকা বেশির ভাগ তথ্য ও পরিসংখ্যান বিভিন্ন দেশের সরকারগুলোর কাছ থেকে নিয়ে থাকে যুক্তরাষ্ট্র৷ এরপর সংশ্লিষ্ট দেশে থাকা দূতাবাস, অন্যান্য সংস্থা ও ব্যক্তিদের সঙ্গে ওই তথ্য মিলিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করা হয়৷

ব্রিফিংয়ে আরও বলা হয়, “বাংলাদেশে এসব তথ্য পেতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কাজ করে যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃপক্ষ৷ পাশাপাশি বাংলাদেশের অন্যান্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদেরর সঙ্গেও তথ্য সংগ্রহের জন্য কথা বলা হয়৷’’


এমএইউ/এফএফ (দ্য ডেইলি স্টার/ বিডিনিউজ২৪/যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস ঢাকা) 




































 

অন্যান্য প্রতিবেদন