১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটের চাবি পাওয়ার লড়াইয়ে দুই প্রার্থী লিজ ট্রুস ও ঋষি সুন্ক৷ ছবি: পিকচার অ্যালায়েন্স
১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটের চাবি পাওয়ার লড়াইয়ে দুই প্রার্থী লিজ ট্রুস ও ঋষি সুন্ক৷ ছবি: পিকচার অ্যালায়েন্স

সেপ্টেম্বরে নতুন প্রধানমন্ত্রী পেতে যাচ্ছে ব্রিটেন৷ রক্ষণশীল দলের প্রধানমন্ত্রী বাছাইয়ের দৌড়ে এখন টিকে রয়েছেন দুইজন, লিজ ট্রুস ও ঋষি সুনাক৷ দুইজনই কঠোর অভিবাসন নীতি গ্রহণ এবং অনিয়মিত উপায়ে আসাদের রুয়ান্ডাসহ অন্য দেশে পাঠানোর কৌশল বাস্তবায়নের ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন৷

বিদায়ী ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের স্থলাভিষিক্ত হতে যাচ্ছেন তার দলের দুই নেতা লিজ ট্রুস বা ঋষি সুনাক৷ চূড়ান্ত হওয়ার আগে তিন দফা টেলিভিশন বিতর্কে মুখোমুখি হচ্ছেন তারা৷ সেখানে নিজেদের নীতি আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্তিতর্ক দিয়ে তুলে ধরবেন৷ তবে এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরব এই দুই প্রার্থী৷ কী হবে তাদের নীতি? সমর্থক ও ভোটারদের কাছে সে বিষয়ে অনেকটাই আভাস দিয়ে রেখেছেন তারা৷ এর মধ্যে অন্যতম অভিবাসী ও শরণার্থী ইস্যু৷

কঠোর পদক্ষেপ

২৪ জুলাই লিজ ট্রুস এক টুইটে জানিয়েছেন, ক্ষমতায় এলে তিনি ‘(ইংলিশ) চ্যানেলে অবৈধ পারাপার ঠেকাতে কঠোর ব্যবস্থা চালু’ করবেন৷ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্য বৃদ্ধি, ইউরোপীয় মানবাধিকার আদালতের কাছে নতজানু না হওয়ারও বার্তা দিয়ে রেখেছেন৷ টোরি পার্টির এই নেতা জানিয়েছেন, সার্বিকভাবে এমন অভিবাসন নীতি নেবেন তিনি যা ‘ব্রিটেনের জন্য কার্যকর’৷  

এই টুইটে তিনি ব্রিটেনের ডানপন্থি ধারার সংবাদ মাধ্যম হিসেবে পরিচিত ‘ডেইলি মেইল’-এর একটি লিংকও জুড়ে দিয়েছেন, যেখানে তার অভিবাসন নীতিগুলোর উল্লেখ ছিল৷


ট্রুস সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সম্মুখসারির সদস্য সংখ্যা ২০ শতাংশ বাড়াতে চান৷ 

রুয়ান্ডা চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন

অনিয়মিতভাবে ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে ব্রিটেন আসা আশ্রয়প্রার্থীদের পাঠাতে জনসন প্রশাসন রুয়ান্ডার সঙ্গে যে চুক্তি করেছে, সেটি সমর্থন করেন ট্রুস৷ শুধু তাই নয়, এ ধরনের চুক্তি আরো দেশের সঙ্গে করার পরিকল্পনা তার৷ সেইসঙ্গে ‘অবৈধ অভিবাসন’ ঠেকাতে যথাযথ আইনি ভিত্তির জন্য একটি ‘শক্তিশালী বিল’ চান তিনি৷ 

ট্রুস বলেছেন, চ্যানেল পাড়ি দিয়ে ব্রিটেনে আসার প্রবণতা কমানো তার নীতিতে অন্যতম প্রাধান্য পাবে৷ চলতি বছর এমন লোকের সংখ্যা এরই মধ্যে ১৫,০০০ ছাড়িয়েছে৷ মেইলকে তিনি বলেন, ‘‘আমার অধীনে ব্রিটেনের সীমান্ত নিরাপদ থাকবে এবং রুয়ান্ডা চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়নে আমি যা করার করবো, সেই সঙ্গে অন্য দেশের সঙ্গে অন্য ব্যবস্থাও নেবো৷’’

ব্রিটেনে কারা আশ্রয়প্রার্থীর যোগ্যতা পাবেন, তার নতুন মাপকাঠি নির্ধারণের পাশাপাশি বছরে কতজনকে শরণার্থী হিসেবে গ্রহণ করা হবে তার একটি সীমা বেঁধে দিতে চান ট্রুস৷ কোনো দেশ যদি অভিবাসীদের প্রত্যাবাসনে সহায়তা না করে তাহলে তাদের উন্নয়ন সহায়তা বন্ধ করে দিবেন ট্রুস৷ 

পড়ুন: রুয়ান্ডায় কেমন থাকবেন ব্রিটেন থেকে যাওয়া আশ্রয়প্রার্থীরা

সুনাকের দশ দফা

বরিস জনসন প্রশাসনের চ্যান্সেলর পদে ছিলেন ঋষি সুনাক, যিনি সস্প্রতি পদত্যাগ করেছেন৷ বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী ভারতীয় বংশদ্ভুত এই ব্রিটিশ রাজনীতিবিদও অভিবাসন ইস্যুতে বেশ কঠোর৷ ইংলিশ চ্যানেল হয়ে ব্রিটেনমুখী নৌকা আগমন ঠেকাতে ফ্রান্সকে জবাবদিহিতার আওতায় আনার কথা বলেছেন তিনি৷ 

২৪ জলাই বেশ কয়েকটি টুইটে ‘দশ দফা অভিবাসন পরিকল্পনা’ প্রকাশ করেছেন সুনাক৷ তার মতে ব্রিটেনের ‘সীমান্ত রক্ষার আকাঙ্খা কোনোভাবেই বর্ণবাদী আচরণ হতে পারে না’৷ তার দশ দফার মধ্যে একটি, ‘ভঙ্গুর আশ্রয়প্রার্থী আইনের সংস্কার’৷ যার মধ্যে আছে কারা আশ্রয়ের যোগ্য হবেন সেই সংজ্ঞার পরিবর্তন এবং ইউরোপীয় কোর্ট অব হিউম্যান রাইটসের পরিবর্তে শরণার্থী সনদের উপর বেশি জোর আরোপ৷ এজন্য সংশ্লিষ্ট কর্তপক্ষকে ‘আটক ও অবৈধ অভিবাসন নজরদারির ক্ষমতা’ দিবেন তিনি৷

ট্রুসের মতো তিনিও চান আইনগতভাবে আসা শরণার্থীদের গ্রহণের একটি বার্ষিক সীমা বেধে দিতে, যার নিয়ন্ত্রণ থাকবে পার্লামেন্টের হাতে৷

পড়ুন: আশ্রয়প্রার্থীদের রুয়ান্ডা পাঠাতে চায় ডেনমার্কও 

টাস্কফোর্স, রুয়ান্ডা নীতির সমর্থন

যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি, গোয়েন্দা সংস্থা ও সামরিক বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি টাস্কফোর্স গঠন করবেন সুনাক৷ এর লক্ষ্য হবে অবৈধ অভিবাসন বন্ধে সমন্বিত পদক্ষেপ নেয়া৷ ২০২০ সালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রীতি প্যাটেল সাবেক এক সামরিক কর্মকর্তাকে ‘চ্যানেলের গোপন হুমকি মোকাবিলার কমান্ডার’ হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন৷ 

অভিবাসীদের হোটেলে রাখার নীতিকে প্রহসন হিসেবে উল্লেখ করেন সুনাক৷ চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে বিবিসিসহ বিট্রেনের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী ৩৭ হাজার অভিবাসীকে হোটেল রাখা হয়েছে যাদের পেছনে সরকারের দৈনিক খরচ ৪৭ লাখ পাউন্ড৷

বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রীতি প্যাটেলের মতো তিনিও মনে করেন, ব্রিটেনের বিদ্যমান অভিবাসন ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে৷ প্যাটেলের রুয়ান্ডা নীতিকে সমর্থন করে তা কার্যকর করার কথা বলেছেন সুনাক৷ ট্রুসের মতো তিনিও আরো দেশের সঙ্গে এমন চুক্তি করতে আগ্রহী৷ 

পড়ুন: ব্রিটেনে গৃহ নির্যাতনের শিকার অভিবাসী নারীদের যাওয়ার জায়গা নেই

অভিযান, কঠিন জরিমানা ও কারাদণ্ড

‘অবৈধ শ্রম শোষণের বিরুদ্ধে আরো অভিযান, পরিদর্শন, কঠোর জরিমানা ও কারাদণ্ডের বিধান’ রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সুনাক৷ তার মতে অভিবাসন হতে হবে ‘বৈধ ও নিয়ন্ত্রিত’৷ 

মেইলের প্রতিবেদন অনুযায়ী তিনি বলেছেন, ‘‘বর্তমানে ব্রিটেনের অভিবাসন ব্যবস্থা বিশৃঙ্খল যেখানে আইন প্রতি শ্রদ্ধাশীল নাগরিকরা দেখতে পাচ্ছে ফ্রান্সের মতো নিরাপদ দেশ থেকে অবৈধ অভিবাসীভর্তি নৌকা আসছে, তাদের থামানোর জন্য ক্ষমতা নেই আমাদের নাবিক আর কোস্ট গার্ডদের হাতে৷ এই পরিস্থিতি থামাতে হবে এবং আমি প্রধানমন্ত্রী হলে অবশ্যই এটা থামাব৷’’ 

বর্তমানে ব্রিটেনে আশ্রয় আবেদনের সুরাহা হতে দীর্ঘ সময় লাগে৷ সুনাক বলেছেন, তিনি এমন উদ্যোগ নেবেন যাতে ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রে ছয় মাসের মধ্যে সিদ্ধান্ত দেয়া যায়৷ 

ব্রিটেনের রক্ষণশীল দলের সদস্যরা ৫ সেপ্টেম্বর পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনে ভোট দিবেন৷ তবে দুই প্রার্থীর যিনিই জনসনের স্থলাভিষিক্ত হোন না কেন শরণার্থী, আশ্রয়প্রার্থীদের প্রতি কঠোর অবস্থানে কেউ কারো চেয়ে কম নন৷ 

পড়ুন: নতুন নতুন দেশে মৌসুমি শ্রমিকের সন্ধানে যুক্তরাজ্য

এমা ওয়ালিস/এফএস

 

অন্যান্য প্রতিবেদন