পোল্যান্ডের রাজধানী ওয়ারশ তে অবস্থিত ফ্রন্টেক্সের কার্যালয়। ছবিঃ এএফপি
পোল্যান্ডের রাজধানী ওয়ারশ তে অবস্থিত ফ্রন্টেক্সের কার্যালয়। ছবিঃ এএফপি

ইউরোপীয় ইউনিয়নের বহিঃসীমান্ত নিয়ন্ত্রণ সংস্থা-ফ্রন্টেক্স সেনেগাল এবং মৌরিতানিয়ায় কার্যক্রম চালুর পরিকল্পনা করছে বলে দাবি করেছে স্টেটওয়াচ নামে একটি এনজিও৷ সংস্থাটির মতে, আফ্রিকার এই দুই দেশ থেকে ইউরোপ অভিমুখে ‘অনিয়মিত অভিবাসন’ বন্ধ করার চেষ্টা করবে ফ্রন্টেক্স৷

বেসরকারি এনজিও স্টেটওয়াচ ২১ জুলাই এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করেছে, আফ্রিকার সেনেগাল এবং মৌরিতানিয়ায় টহল জাহাজ এবং নজরদারি সরঞ্জাম মোতায়েনের পরিকল্পনা করছে ফ্রন্টেক্স৷

এনজিওটি বলছে, “ইউরোপে রাষ্ট্রগুলোর সীমান্ত এবং নাগরিক স্বাধীনতার নজরদারির দায়িত্বে থাকা ইইউর এই সংস্থাটি আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই মৌরিতানিয়ার রাজধানী নুওয়াকশুতে একটি সেল খুলবে৷’’

পড়ুন>> এজিয়ান সাগরে পুশব্যাক: ফ্রন্টেক্স প্রধানের পদত্যাগ

স্টেটওয়াচের দাবি তাদের হাতে ফ্রন্টেক্সের এই সংক্রান্ত কর্মপরিকল্পনার দুইটি নথি রয়েছে৷ সেগুলোতে আফ্রিকার উপকূল থেকে স্পেনের ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জের দিকে অনিয়মিত পারাপার প্রতিরোধের উপর ব্যাপক জোর দেয়া হয়েছে৷ পাশাপাশি, সীমান্ত ব্যবস্থাপনা এবং মানবপাচার বিরোধী কার্যকলাপে সহযোগিতা বৃদ্ধির উপর গুরত্ব আরোপ করা হয়েছে৷

দারিদ্র্য এখনও পিছু ছাড়েনি আফ্রিকার দেশ সেনেগালের। দেশটির বহু নাগরিকের স্বপ্ন সমুদ্র পাড়ি দিয়ে স্প্যানিশ দ্বীপপুঞ্জ ক্যানারিতে পৌঁছা। ছবি: ইনফোমাইগ্রেন্টস।
দারিদ্র্য এখনও পিছু ছাড়েনি আফ্রিকার দেশ সেনেগালের। দেশটির বহু নাগরিকের স্বপ্ন সমুদ্র পাড়ি দিয়ে স্প্যানিশ দ্বীপপুঞ্জ ক্যানারিতে পৌঁছা। ছবি: ইনফোমাইগ্রেন্টস।


ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জ এবং ভূমধ্যসাগর পেরিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নে প্রবেশে অভিবাসীদের জন্য সেনেগাল ও মৌরিতানিয়া গুরুত্বপূর্ন দুইটি ট্রানজিট দেশ৷

২০১৯ সালের সংশোধিত ইন অনুসারে, ফ্রন্টেক্স শুধু ইইউ দেশের সীমান্তবর্তী তৃতীয় দেশে কাজ করতে পারবে৷ কিন্তু স্টেটওয়াচের দাবিকৃত নথি অনুযায়ী সীমান্ত সংস্থাটি সংশ্লিষ্ট অঞ্চলগুলিতে স্থানীয় চুক্তির মাধ্যমে যেকোন জায়গায় কাজ করার অধিকার পাচ্ছে৷

স্টেটওয়াচের উদ্ধৃতি দিয়ে জার্মান সংবাদ সংস্থা ইপিডি জানিয়েছে, নতুন চুক্তির মাধ্যমে ভিন্ন দেশে কর্মরত ফ্রন্টেক্স কর্মীরা আইনি বা অন্য সমস্যার মুখোমুখি হতে পারেন৷

চুক্তির উদ্যোগ

স্টেটওয়াচ দাবি করেছে, ইইউ জুলাইয়ের শুরুতে উভয় দেশের সাথে চুক্তি নিয়ে আলোচনা শুরু করেছে৷ তাদের উদ্দেশ্য একটি আইনি ভিত্তি তৈরি করা যা ফ্রন্টেক্সকে উভয় দেশে কাজ করার অনুমতি দিবে৷

পড়ুন>> ফ্রন্টেক্সের বিরুদ্ধে ইউরোপের আদালতে মামলা


নতুন চুক্তির জন্য ফ্রন্টেক্স দুইটি অ্যাকশন প্ল্যান বা কর্মপরিকল্পনার উদ্যোগ নিয়েছে, যা সংস্থাটির ওয়েবসাইটে সারাংশ আকারে প্রকাশ করা হয়েছে৷

প্রথম পরিকল্পনার অধীনে মূলত সেনেগালের সাথে হতে যাওয়া চুক্তির বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য রয়েছে৷ এই পরিকল্পনায় চারটি প্রধান ধাপ রয়েছে৷

প্রথম ধাপে, সেনেগালের জাতীয় অগ্রাধিকার ও চাহিদার আলোকে কীভাবে ফ্রন্টেক্স দেশটির কর্তৃপক্ষের সাথে অভিবাসন মোকাবিলায় কাজ শুরু করতে পারে তা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে৷

আরও পড়ুন>>ইউক্রেন যুদ্ধ ইউরোপে অভিবাসন সংকট বৃদ্ধি করবে: ফ্রন্টেক্স

ইইউ কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডেয়ার লাইয়েন ও অন্যান্য কমিশনাররা চলতি বছরের ৯ থেকে ১১ ফেব্রুয়ারি তিনদিন সেনেগাল সফর করেন৷ এই সফরের নথিতেও ফ্রন্টেক্সের বিষয়টির উল্লেখ রয়েছে৷ 

নথির তথ্য অনুযায়ী, “ইইউ ও সেনেগালের কর্মকর্তাদের মধ্যে আলোচনার কেন্দ্রে অনিয়মিত অভিবাসনের বিষয়টি ছিল৷”

ইইউ-সেনেগাল অংশীদারিত্ব

এই সফরের পর ফ্রন্টেক্সের প্রথম কর্মপরিকল্পনায়, সেনেগালের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে৷ পাশাপাশি অভিবাসন ইস্যুতে ইইউ-সেনেগাল অংশীদারিত্বের কথাও উল্লেখ রয়েছে। 

এছাড়া দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপে, ফ্রন্টেক্সের সাথে সেনেগালের স্বল্প মেয়াদে সরাসরি যৌথ অভিযানেরও প্রস্তাব দেয়া হয়েছে৷ যদিও এটি নির্ভর করছে সেনেগাল কর্তৃপক্ষের ইচ্ছা এবং আগ্রহের উপর৷

স্টেটওয়াচের হাতে আসা নথি অনুযায়ী, চতুর্থ ধাপে সেনেগাল কর্তৃপক্ষের প্রতিক্রিয়ার উপর নির্ভর করে সরাসরি সহায়তার অনুমতি সম্পর্কিত একটি চুক্তিতে পৌঁছার কথা বলা হয়েছে৷ চুক্তির অধীনে নিয়মিত অভিবাসন প্রতিরোধ, মানবপাচারের বিরুদ্ধে লড়াইসহ বেশ কিছু বিষয় যোগ করার কথা রয়েছে৷

ইইউ-মৌরিতানিয়া অংশীদারিত্ব

ফ্রন্টেক্সের নেয়া দ্বিতীয় অ্যাকশন প্ল্যানে মুলত মৌরিতানিয়ার সাথে কাজের কৌশল নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এই নথিটিও ৭ জুন, ২০২২ তারিখের৷ সেনেগালের মতো এই ক্ষেত্রেও চারটি ধাপে চুক্তি সম্পন্ন করা ও বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে৷ 


ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জ থেকে মৌরিতানিয়ার দূরত্ব প্রায় এক হাজার কিলোমিটার। ছবি: গুগল ম্যাপ।
ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জ থেকে মৌরিতানিয়ার দূরত্ব প্রায় এক হাজার কিলোমিটার। ছবি: গুগল ম্যাপ।


প্রথম ধাপে, দুই পক্ষের মধ্যে অভিবাসন সম্পর্কের ক্ষেত্রে প্রধান অগ্রাধিকারগুলো ও অভিবাসন ব্যবস্থাপনা কৌশল নির্ধারণের বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে৷

সেইসাথে শরণার্থী ও আশ্রয়প্রার্থীদের সুরক্ষা, মানবপাচার নেটওয়ার্কের বিরুদ্ধে লড়াই, নজরদারি ইউনিট স্থাপন, মৌরিতানিয়ার তরুণদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং দেশটির উন্নয়নে প্রবাসীদের সম্পৃক্ত করার পরিকল্পনা নিয়ে ইইউ-মৌরিতানিয়া অংশীদারিত্ব চুক্তি এগিয়ে নেয়ার কথা বলা হয়েছে৷ 

দ্বিতীয় ধাপে, মানবপাচার এবং সীমান্ত ব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের উপর গুরুত্ব দিয়ে,  মৌরিতানিয়ার কর্তৃপক্ষের সাথে একটি অনানুষ্ঠানিক অভিবাসন সংলাপ আয়োজনের প্রস্তাব রয়েছে৷ 

পড়ুন>>সীমান্তরক্ষীদের আরো অস্ত্র দেবে ফ্রন্টেক্স

যদি মৌরিতানীয় কর্তৃপক্ষ এই পদক্ষেপে আগ্রহ দেখায়, সবশেষ পদক্ষেপে কূটনৈতিক কার্যক্রম শুরু করে আলোচনাধীন এই চুক্তি সম্পন্ন করতে হবে বলে পরিকল্পনায় বলা হয়েছে৷ 

এর ফলে মৌরিতানিয়া সীমান্তে ফ্রন্টেক্স সরাসরি অভিযান পরিচালনার অনুমতি পাবে৷ বিশেষ করে অনিয়মিত অভিবাসন প্রতিরোধের ক্ষেত্রে এটি কার্যকর হবে৷

মৌরিতানিয়ায় ফ্রন্টেক্সের সম্ভাব্য কার্যক্রমসহ ইইউ ও মৌরিতানিয়ার মধ্যে চুক্তির বিষয়ে আলোচনার অনুমোদন দিয়েছে ইইউ।

পড়ুন>>অবৈধ ‘পুশব্যাকের’ ঘটনা লুকিয়েছেন ফ্রন্টেক্সের কর্মকর্তারা: প্রতিবেদন

তবে এসব চুক্তি কখন হবে বা বাস্তবায়ন হবে এ নিয়ে নির্দিষ্ট কোন তারিখ উল্লেখ করা নেই নথিগুলোতে৷

এরিমধ্যে ইইউ’র সাথে একাধিক বিষয়ে সেনেগাল এবং মৌরিতানিয়া মধ্যে বিভিন্ন চুক্তি রয়েছে৷  

এর সাহায্যে অনুমান করা যায় যে ভবিষ্যতে অভিবাসন ও ফ্রন্টেক্স নিয়ে নতুন চুক্তি হওয়া অসম্ভব নয়৷


এমএইউ/এফএস 


 

অন্যান্য প্রতিবেদন