নেদারল্যান্ডসের একটি আশ্রয়কেন্দ্রের সামনে অভিবাসী শিশুরা। ছবি: পিকচার এলায়েন্স
নেদারল্যান্ডসের একটি আশ্রয়কেন্দ্রের সামনে অভিবাসী শিশুরা। ছবি: পিকচার এলায়েন্স

ইউরোপীয় অন্যান্য দেশগুলোর মতো নেদারল্যান্ডসও আশ্রয়প্রার্থীদের রাখার জন্য স্থান সংকটে ভুগছে৷ পরিস্থিতি সামলাতে আশ্রয়কেন্দ্রে জায়গা না হওয়াদের প্রমোদতরী হিসেবে ব্যবহৃত জাহাজে রাখার ঘোষণা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ৷ জাতিসংঘসহ বেশ কয়েকটি এনজিও এই প্রস্তাবের সমালোচনা করেছে৷

নেদারল্যান্ডস জানিয়েছে, তারা দেশটিতে আশ্রয় কাঠামোর জায়গা সংকুলান নিয়ে সমস্যার সমাধান খুঁজে পেয়েছে৷ গত সপ্তাহে দেশটির অভিবাসন বিষয়ক মন্ত্রী এরিক ফন দেয়ার বুর্গ ঘোষণা করেছেন, ‘‘সরকার আশ্রয়প্রার্থীদের ক্রুজ জাহাজে বা প্রমোদতরীতে রাখার পরিকল্পনা করছে৷’’

এজন্য তিনটি বড় জাহাজ বাছাই করা হয়েছে৷ জাহাজগুলোকে কোনো নির্দিষ্ট বন্দরে রাখা সম্ভব না হলে মাঝ সমুদ্রে নোঙর করার কথাও বিবেচনা করছে কর্তৃপক্ষ৷ 


সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী, প্রথম জাহাজটি আগস্টে, দ্বিতীয়টি সেপ্টেম্বরে এবং তৃতীয়টি নভেম্বরে আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য চালু করা হতে পারে৷ প্রতিটি জাহাজে প্রায় এক হাজার আশ্রয়প্রার্থীকে স্থান দেওয়া সম্ভব হবে৷

ঠাঁই নেই আশ্রয়কেন্দ্রে

দীর্ঘদিন ধরে আশ্রয়প্রার্থীদের থাকার জন্য ব্যবহৃত বিদ্যমান কেন্দ্রগুলোতে চাপ বেড়েছে৷ নেদারল্যান্ডসের বিচার ও নিরাপত্তা মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গকে বলেন, ‘‘বিদ্যমান কাঠামোগুলোতে কোনো জায়গা না থাকায় সরকার বিকল্প প্রস্তাবের সন্ধানে ছিল৷ আমাদের সমস্ত আবাসনগুলোতে এখন উপচে পড়া ভীড়৷’’ তার মতে, পরিস্থিতি এখন সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে৷

আরও পড়ুন>> ইটালিতে প্রমোদতরীতে কোয়ারেন্টাইনের নিয়ম বাতিল

ইউক্রেন থেকে বাস্তুচ্যুত শরণার্থীদের আগমনে নেদারল্যান্ডসের আশ্রয় কাঠামোগুলো দ্রুত পূর্ণ হয়ে গেছে৷ ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার হামলা শুরুর পর ৬০ হাজারেরও বেশি ইউক্রেনীয় নাগরিক নেদারল্যান্ডসে এসেছেন৷ সাম্প্রতিক সময়ে পরিবারসহ শত শত আশ্রয়প্রার্থী উত্তর-পূর্বে অবস্থিত টের অ্যাপেল আশ্রয়কেন্দ্রের বাইরে তাঁবুতে বা মাটিতে ঘুমাতে বাধ্য হয়েছেন৷ সেসব ছবি ডাচ গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়৷

এছাড়া, পুরো নেদারল্যান্ডসের পুরো আশ্রয় ব্যবস্থাতে এক ধরনের অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে৷ আশ্রয় আবেদনের প্রক্রিয়ায় ধীর গতির কারণে, অল্প সংখ্যক মানুষ সুরক্ষা পেতে সক্ষম হচ্ছেন৷ এই কারণেও আশ্রয়কেন্দ্রগুলোর উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ছে৷ যাচাইয়ে সময় লাগায় আগের আবেদনকারীরা দীর্ঘদিন ধরে সেগুলোতে অবস্থান করছেন৷ যার ফলে নতুন আগতদের এসব আশ্রয়কেন্দ্রে স্থান দেয়া সম্ভব হচ্ছে না৷ 

আশ্রয়প্রার্থীরা ‘একঘরে’

বেশ কয়েকটি অভিবাসন সংস্থা ও এনজিও আশ্রয়প্রার্থীদের জাহাজে রাখার প্রস্তাবটির কঠোর সমালোচনা করেছে৷ জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশন (ইউএনএইচসিআর) এই সিদ্ধান্তকে ‘অনাকাঙ্খিত’ বলে মন্তব্য করেছে৷

ইউএনএইচসিআর-এর ডাচ শাখা টুইটে লিখেছে, “আশ্রয়প্রার্থীদের মূল সমাজের বাইরে রাখলে তাদের চলাচলের কোনো স্বাধীনতা থাকবে না৷ এক্ষেত্রে তাদের বিদ্যমান মানসিক সমস্যাগুলো বৃদ্ধি পেতে পারে৷’’


মাঝ সমুদ্রে জাহাজে আশ্রয়প্রার্থীদের অবস্থানের ক্ষেত্রে চলাচলের স্বাধীনতার বিষয়ে উদ্বেগের সমাধান খুঁজছে অ্যামস্টারডামও৷ এজন্য তাদের উপকূলীয় এলাকা এবং বন্দরে চলাচলের অনুমতি দেয়ার সম্ভাবনা যাচাই বাছাই করছে কর্তৃপক্ষ৷

পড়ুন>> ডাচ সাংবাদিকের সঙ্গে তর্কে জড়ালেন গ্রিক প্রধানমন্ত্রী

তা সত্ত্বেও এই উদ্যোগকে ভালো চোখে দেখছে না জাতিসংঘ ও এনজিওগুলো৷ নেদারল্যান্ডসে অবস্থানরত শরণার্থীদের পরামর্শদানকারী একটি এনজিও টুইটারে বলেছে, “যুদ্ধ এবং সহিংসতা থেকে পালিয়ে আসা মানুষদের উপর এই ব্যবস্থা চাপিয়ে দেয়া পুরোপুরি অন্যায়৷ এটি বুঝতে গবেষণার প্রয়োজন নেই৷ আমরা জানি এই সংকটের সমাধান অত্যন্ত কঠিন৷ তবে এই প্রস্তাবটি সবচেয়ে বাজে৷’’


এমএইউ/ এফএস


 

অন্যান্য প্রতিবেদন