চলতি বছরের মার্চে বাংলাদেশি সহ বিভিন্ন দেশের অভিবাসীদের উদ্যোগে আয়োজিত একটি প্রতিবাদ সমাবেশের দৃশ্য। ছবি: মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম।
চলতি বছরের মার্চে বাংলাদেশি সহ বিভিন্ন দেশের অভিবাসীদের উদ্যোগে আয়োজিত একটি প্রতিবাদ সমাবেশের দৃশ্য। ছবি: মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম।

দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা চুক্তি অনুযায়ী গ্রিসে অবস্থানরত অনিয়মিত বাংলাদেশিদের বৈধতাপ্রাপ্তির প্রয়োজনীয় শর্তগুলো প্রকাশ করেছে এথেন্সের বাংলাদেশ দূতাবাস৷ শর্তপূরণের মাধ্যমে দ্রুতই অনলাইনে আবেদনের সুযোগ পাবেন আগ্রহীরা৷

বাংলাদেশ ও গ্রিসের মধ্যে স্বাক্ষরিত ‘জনশক্তি রপ্তানি এবং অনিয়মিত বাংলাদেশিদের বৈধতা প্রদান’ বিষয়ক স্মারক চুক্তির আওতায় দেশটিতে অবস্থানরত ১৫ হাজার অনিয়মিত বাংলাদেশি বৈধতা পাবেন৷ এজন্য কী ধরনের শর্ত পূরণ করতে হবে তার একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে এথেন্সে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস৷

২৮ জুলাই বাংলাদেশ দূতাবাস প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গ্রিসে অবস্থানরত মোট ১৫ হাজার অনিয়মিত বাংলাদেশি এই চুক্তির আওতায় বৈধতার সুযোগ পাবেন৷ বছরে চার হাজার শ্রমিক বাংলাদেশ থেকে গ্রিসের কৃষিখাতে নিয়োগ পাবেন৷ তবে অনিয়মিত অভিবাসীদের বৈধতার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কোনো খাতের উল্লেখ করা হয় নি৷ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী,

বৈধতা প্রাপ্তির জন্য গ্রিসে অবস্থানরত অনিয়মিত বাংলাদেশিদের একটি অনলাইন পোর্টালের মাধ্যমে আবেদন করতে হবে৷ যার ফলে কোনো মধ্যসত্বভোগী ও দালালের শরণাপন্ন হতে হবে না তাদের৷ 

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট প্লাটফর্মটি চালু হলে সেখানে আবেদন ও নথি জমা দেয়ার ক্ষেত্রে প্রয়োজনে হলে দূতাবাস থেকে কারিগরি সহায়তা দেয়া হবে। 

আবেদনে যে তিন ধরনের নথি লাগবে 

বৈধতা দাবির জন্য অনলাইন সাইটটিতে মূলত তিনটি নথি চাওয়া হবে৷ সেগুলো হলো: 

  • নূন্যতম দুই বছর মেয়াদ আছে এমন বাংলাদেশি পাসপোর্ট
  • ২০২২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারির আগে থেকে গ্রিসে বসবাস করছেন এমন প্রমাণ জমা দিতে হবে৷ তবে এক্ষেত্রে কী ধরণের নথিকে আমলে নেয়া হবে সেটির উল্লেখ করা হয়নি৷ তবে গ্রিসের প্রশাসনিক নথি, চিকিৎসা সেবা থাকলে সেটির প্রমাণ অথবা গণপরিবহণের মাসিক টিকেট ইত্যাদিকে আমলে নেয়ার সম্ভাবনা আছে বলে জানিয়েছেন গ্রিসে দীর্ঘদিন অবস্থানরত বাংলাদেশিরা৷ কেননা ২০১৪ সালের অভিবাসন ও আশ্রয় আইনের আওতায় সাত বছর ধরে থাকা অভিবাসীদের আবেদনের ক্ষেত্রে এমন নথি বিবেচনায় নেয়া হয়৷
  • বৈধতার পর চাকরি পাবেন সম্ভাব্য নিয়োগকর্তার কাছ থেকে এমন একটি প্রত্যয়নপত্র জমা দিতে হবে৷ এক্ষেত্রে অনিয়মিত অভিবাসীরা নিয়োগকর্তা থেকে কেমন পত্র নিবেন সেটির একটি একটি নির্দিষ্ট ফরম্যাট দূতাবাস সূত্রে জানিয়ে দেয়া হবে৷ 

দ্রুত পাসপোর্টের নবায়ন ও সংগ্রহের পরামর্শ

আইন অনুযায়ী অনলাইন প্লাটফর্ম চালু সাপেক্ষে সংসদে বিলটি কার্যকর হওয়ার ছয় মাসের মধ্যেই অনিয়মিত অভিবাসীদের বৈধতার জন্য আবেদন করতে হবে৷ এই সময়সীমা বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে বলে উল্লেখ করেছে বাংলাদেশ দূতাবাস৷ 

পড়ুন>>সিলেট থেকে গ্রিস: বাংলাদেশি অভিবাসীর দীর্ঘ ও দুঃসহ যাত্রা

তবে, আবেদনের প্রস্তুতির জন্য অনিয়মিত অভিবাসীদের প্রয়োজন অনুযায়ী পাসপোর্টের জন্য দ্রুত আবেদনের পরামর্শ দিয়ে দূতাবাস৷ যাদের পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ কিংবা যাদের দ্রুতই শেষ হবে সবাইকে ন্যূনতম দুই বছর মেয়াদি পাসপোর্ট নিশ্চিত করতে দূতাবাসে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে৷ 

যেসব বাংলাদেশি অভিবাসীরা গ্রিসের বিভিন্ন দ্বীপ এবং দূরবর্তী শহরের শরণার্থী ক্যাম্পে অবস্থান করছেন তাদের জন্য দূতাবাস সেখানে গিয়ে বিশেষ পাসপোর্ট নিবন্ধন কার্যক্রমের পরিকল্পনা করছে বলে দূতাবাসের ফেসবুক পেইজে উল্লেখে করা হয়েছে৷ 

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কবে থেকে অনলাইন প্লাটফর্মটি চালু হবে এবং আবেদনের প্রক্রিয়া ও ফি সম্পর্কে দ্রুতই গ্রিক কর্তৃপক্ষ অবহিত করবে৷ এছাড়া, বৈধতা পেতে যাওয়া অভিবাসীরা পাঁচ বছর মেয়াদি অস্থায়ী যেই বিশেষ রেসিডেন্স পারমিট পেতে যাচ্ছেন সেটির ধরন ও শর্তগুলো গ্রিসের আশ্রয় ও অভিবাসন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাথে আলোচনার পর প্রকাশ করা হবে৷

চার হাজার বাংলাদেশির নয় মাসের কাজের সুযোগ 

জনশক্তি রপ্তানি নিয়ে ৯ ফেব্রুয়ারি হওয়া গ্রিক বাংলাদেশের এই চুক্তির মাধ্যমে অনিয়মিতদের বৈধতা প্রদান ছাড়াও গ্রিসের কৃষিখাতে প্রতি বছর চার হাজার বাংলাদেশির আসার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে৷ 

তবে এক্ষেত্রে সঠিক নিয়োগকর্তা এবং গ্রিক সরকারের শর্তগুলোর উপর নির্ভর করছে বাংলাদেশিদের গ্রিসে আসার পরবর্তী পদক্ষেপ৷ 


তবে , যারা বৈধতা পাবেন কিংবা নতুন করে কাজের ভিসায় আসবেন সবাই সর্বোচ্চ পাঁচ বছর গ্রিসে অবস্থান করার সুযোগ পাবেন বলে নিশ্চিত করেছে দেশটির উভয় কর্তৃপক্ষ। এক্ষেত্রে, বারবার ভিসা জটিলতা এড়াতে পাঁচ বছর মেয়াদি অস্থায়ী রেসিডেন্স পারমিট প্রণয়নের ব্যাপারে গ্রিক সংসদে মত দিয়েছেন গ্রিসের অভিবাসন ও শরণার্থী বিষয়ক মন্ত্রী নোতিস মিতারাচি৷ 

এই বিশেষ অনুমতির আওতায় বছরে নয় মাস গ্রিসে থাকার সুযোগ পাবেন অভিবাসীরা এবং তিন মাস বাংলাদেশে ছুটি কাটানোর সুযোগ পাবেন৷ 

পাঁচ বছর মেয়াদ শেষে কোনো অভিবাসী গ্রিসে স্থায়ী অভিবাসন কিংবা জাতীয়তার জন্য আবেদনের সুযোগ পাবেন না বলে চুক্তিতে স্পষ্ট করা হয়েছে। 


  এমএইউ/এফএস 









 

অন্যান্য প্রতিবেদন