তুরস্ক থেকে নদী পার হয়ে গ্রিসে প্রবেশ করতে চাওয়া এক অন্তঃসত্ত্বা নারী গ্রিক বাহিনীর পুশব্যাকের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। গ্রিক বাহিনী অভিবাসী নৌকাটিকে তুরস্কের দিকে ঠেলে দিলে সেই আফগান নারী নৌকায় সন্তান জন্ম দিয়েছেন বলে জানিয়েছে একাধিক তুর্কি গণমাধ্যম।
তুরস্কের এডিরন প্রদেশ থেকে মারিতসা (তুর্কি ভাষায় ‘মেরিক’) নদী পার হওয়ার চেষ্টা করছিলেন অভিবাসী নৌকায় থাকা এক সন্তানসম্ভবা নারী অভিবাসী।
কিন্তু গ্রিক কর্তৃপক্ষ নৌকাটিকে তুরস্ক উপকূলের দিকে ঠেলে দিলে নৌকায় সন্তান প্রসব করেন ভুক্তভোগী আফগান নারী।
তুরস্কের বার্তা সংস্থা ইহলাস নিউজ এজেন্সি (আইএইচএ) জানিয়েছে, তুর্কি সীমান্তরক্ষী ইউনিট গ্রিস থেকে পুশব্যাক হওয়া অভিবাসীদের উদ্ধার করার আগেই আফগান নারী অভিবাসী সুহেলা রিজাই মাঝ নদীতে নৌকায় সন্তান প্রসব করেছিলেন। উদ্ধারের পর মা ও শিশুকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে এবং তারা সুস্থ রয়েছে বলে জানা গেছে।
পড়ুন>>যেকোনো ধরনের পুশব্যাক অবৈধ: ইইউ স্বরাষ্ট্র বিষয়ক কমিশনার
তুরস্ক এবং আন্তজার্তিক মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো বারবার অনিয়মিত অভিবাসীদের পুশব্যাক করে তুরস্কে ঠেলে দেওয়ার জন্য গ্রিসের বেআইনি অনুশীলনের নিন্দা করে আসছে।
অধিকার সংগঠনগুলোর মতে, এই অনুশীলন নারী ও শিশুসহ দুর্বল এবং ঝুঁকিতে থাকা অভিবাসীদের জীবনকে বিপন্ন করে মানবিক মূল্যবোধ এবং আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে।
সাম্প্রতিক বছরগুলিতে হাজার হাজার অভিবাসন প্রত্যাশী উন্নত জীবনের সন্ধানে উত্তর ও পশ্চিম ইউরোপে পৌঁছানোর লক্ষ্যে সর্বোচ্চ ঝুঁকি নিয়ে গ্রিক তুর্কি সীমান্তে অবস্থিত এজিয়ান সাগর পাড়ি দেয়ার লক্ষ্যে বিপজ্জনক যাত্রা করেছে।
আরও পড়ুন>>বুলগেরিয়া থেকে ৮৪ অভিবাসীকে অর্ধনগ্ন অবস্থায় তুরস্কে পুশব্যাকের অভিযোগ
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে শরণার্থী ও আশ্রয়প্রার্থীদের বহনকারী অনেক নৌকা ডুবে যাওয়ায় সাগরে শতাধিক মানুষ মারা গেছে। এছাড়া তুর্কি কোস্টগার্ড প্রতি বছর হাজারের বেশি অভিবাসীকে উপকূল থেকে উদ্ধার করছে।
তুরস্ক এবং গ্রিস নতুন জীবন শুরু করার জন্য যুদ্ধ এবং নিপীড়ন থেকে পালিয়ে ইউরোপে পাড়ি দিতে চাওয়া শরণার্থীদের জন্য মূল ট্রানজিট দেশ হয়ে দাড়িয়েছে।
পড়ুন>>অভিবাসীদের গণহারে পুশব্যাকের নিন্দা কাউন্সিল অব ইউরোপের
আঙ্কারা কর্তৃপক্ষ নিয়মিত এথেন্সের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে বড় আকারের পুশব্যাক এবং শরণার্থী ও অভিবাসীদের আশ্রয় প্রক্রিয়ার সুযোগ দিতে অস্বীকার করার অভিযোগ করেছে।
পাশাপাশি ইউরোপীয় ইউনিয়নও এধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতি দৃষ্টি না দিয়ে চোখ বন্ধ রেখেছে বলেছে অভিযোগ করেছে আঙ্কারা।
পুশব্যাকগুলি আন্তর্জাতিক শরণার্থী সুরক্ষা চুক্তির বিপরীত, যা নির্দেশ করে যে মানুষকে বহিষ্কার করা বা এমন দেশে ফেরত পাঠানো উচিত নয় যেখানে তাদের জাতিগত, ধর্মীয়, জাতীয়তা, সামাজিক বা রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে তাদের জীবন এবং নিরাপত্তা হুমকির মধ্যে পড়তে পারে।
পড়ুন>>সীমান্তরক্ষীদের আরো অস্ত্র দেবে ফ্রন্টেক্স
চলতি বছরের জানুয়ারিতে ইইউ সীমান্ত ব্যবস্থাপনা নিয়ে লিথুয়ানিয়ার রাজধানী ভিলনিয়াসে আয়োজিত সম্মেলনে বেআইনি পুশব্যাকের কথা উঠে আসে।
সম্মেলনে ১৪টি ইইউ দেশের মন্ত্রীদের সামনে ইইউ স্বরাষ্ট্র বিষয়ক ইউরোপীয় কমিশনার ইলভা জোহানসন জোর দিয়ে বলেছিলেন, “যেকোনো প্রকার পুশব্যাক স্পষ্টতই অবৈধ।”
গ্রিস, লাটভিয়া, পোল্যান্ড এবং লিথুয়ানিয়া অবৈধভাবে ইইউ সীমান্তে প্রবেশ করতে চাওয়া ব্যক্তিদের নিয়মিত পুশব্যাক করছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
এমএইউ/এআই (ডেইলি সাবাহ)