মাছ ধরার নৌকায় ভারত মহাসাগরে অবস্থিত ফরাসি ডিপার্টমেন্ট রেউনিওঁতে আসা শ্রীলঙ্কার সব নাগরিকরা ফ্রান্সে আশ্রয় আবেদনের অনুমতি পেয়েছেন। শুরুতে ছয় অভিবাসীর মধ্যে শুধু একজনকে আশ্রয় আবেদন করার অনুমতি দিয়েছিল আশ্রয় বিষয়ক ফরাসি দপ্তর অফপ্রা। রেউনিওঁ প্রশাসনিক আদালত অফপ্রার এই সিদ্ধান্ত বাতিল করেছে।
শ্রীলঙ্কার পতাকাবাহী একটি মাছ ধরার নৌকায় ৩১ জুলাই ছয়জন অভিবাসী রেউনিওঁর পশ্চিমের পোয়া-দে-গালেত বন্দরে পৌঁছালে তাদের মধ্যে মাত্র একজনকে ফ্রান্সে আশ্রয়ের আবেদন করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। অন্যরা দ্বীপের প্রধান বিমানবন্দরে অবস্থিত প্রশাসনিক আটককেন্দ্র বা ডিটেনশন সেন্টারে বন্দি ছিল।
লা রেউনিওঁ ভারত মহাসাগরে মাদাগাস্কার দ্বীপের পূর্বে অবস্থিত একটি ফরাসি প্রশাসনিক কেন্দ্র। মূল ইউরোপীয় ভূখণ্ডের বাইরে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে ফ্রান্সের দশটি উপনিবেশ আছে, যেগুলোর বেশিরভাগই সাবেক ফরাসি সাম্রাজ্যের অংশ। এরকম একটি ডিপার্টমেন্ট বা প্রশাসনিক অঞ্চল হলো লা রেউনিওঁ।
শ্রীলঙ্কায় চলা নজিরবিহীন অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকট থেকে পালিয়ে আসা এই অভিবাসীদের মধ্যে পাঁচজনের আশ্রয় আবেদন শুরুতে জমা নিতে অস্বীকৃতি জানায় শরণার্থী এবং রাষ্ট্রহীন ব্যক্তিদের সুরক্ষার জন্য নির্ধারিত ফরাসি দপ্তর।
পড়ুন>>শ্রীলঙ্কা থেকে নৌকায় ‘রেউনিওঁ’ দ্বীপে ছয় অভিবাসী
প্রত্যাখ্যানের পর তারা ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দ্বীপের প্রশাসনিক আদালতে একটি আপিল আবেদন দায়ের করেন। গত ১০ আগস্ট প্রশাসনিক আদালতের বিচারক তাদের পক্ষে রায় দেন এবং অফপ্রার সিদ্ধান্ত বাতিল করেন।
তাদের আইনজীবী দ্বীপের সংবাদ মাধ্যম লা প্রমিয়েরকে বলেন, “২৫ দিনেরও বেশি সমুদ্রে বিপজ্জনক যাত্রা এবং ১০ দিনেরও বেশি সময় বিমানবন্দরের বেসমেন্টের আটক কেন্দ্রে থাকার পরে, তারা এখন মুক্ত।’’
আরেক আইনজীবী ইয়ানিক মার্ডেনালোম সন্তুষ্টি প্রকাশ করে বলেন, “শুক্রবার সকালে তারা আশ্রয়ের আবেদন জমা দিতে প্রিফেকচারে যাবে এবং ফাইলের গ্রহণযোগ্যতার ভিত্তিতে মূল্যায়ন করা হবে।”
আরও পড়ুন>>ফরাসি আশ্রয় আদালতের সুরক্ষা প্রাপ্তিতে পিছিয়ে বাংলাদেশি আশ্রয়প্রার্থীরা
এর আগে ২০১৮ সাল থেকে এখন পর্যন্ত শ্রীলঙ্কা থেকে প্রায় চার হাজার কিলোমিটার দূরে অবস্থিত লা রেউনিওঁ দ্বীপে নারী ও শিশুসহ ছয়টি নৌকায় মোট ৩৫৬ জন অভিবাসী পর্যায়ক্রমে পৌঁছেছিল। তাদের সবাই সে সময় ফরাসি কর্তৃপক্ষের কাছে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন জানায়।
তাদের মধ্যে কয়েকডজন অভিবাসী এখনও দ্বীপটিতে বসবাস করছেন। অন্যদের আশ্রয় আবেদন নাকচ হওয়ায় শ্রীলঙ্কায় ফেরত পাঠানো হয়।
সমগ্র ফরাসি ভূখণ্ডে অফপ্রা ছাড়াও আশ্রয় আদালত থেকে সুরক্ষা পাওয়ার দিক দিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে আফগানিস্তানের পর এগিয়ে আছে শ্রীলঙ্কা।
পড়ুন>>ফ্রান্স: শরণার্থী শিক্ষার্থীরা যে যে বৃত্তি পেতে পারেন
২০২১ সালে দেশটির দুই হাজার দুশো ৫০ জনকে সুরক্ষা মর্যাদা দিয়েছে ফরাসি আশ্রয় আদালত সিএনডিএ। যা মোট রায়ের বিপরীতে ২২ দশমিক সাত শতাংশ।
এমএইউ/এআই