উত্তর ফ্রান্স উপকূলে নিহত অভিবাসীদের কবর। ছবি:  দালিয়া বুর্জেরি।
উত্তর ফ্রান্স উপকূলে নিহত অভিবাসীদের কবর। ছবি: দালিয়া বুর্জেরি।

সড়ক দুর্ঘটনা, আত্মহত্যা কিংবা ইংলিশ চ্যানেলে ডুবে যাওয়ার কারণে প্রতি বছর ফ্রান্স-ব্রিটিশ সীমান্তে প্রাণ হারান অনেক অভিবাসী৷ অভিবাসন বিষয়ক সংস্থাগুলোর মতে, উভয় দেশের কর্তৃপক্ষ যদি একটি নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ ‘অভ্যর্থনা’ ব্যবস্থার উদ্যোগ নেয় তাহলে এসব দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব হবে৷

দক্ষিণ সুদান থেকে আসা ২২ বছর বয়সি অভিবাসী হাসান (ছদ্মনাম)৷ ১০ আগস্ট উত্তর ফ্রান্সের গ্রন্দ-সান্থেতে একটি অনানুষ্ঠানিক শিবিরের কাছে অবস্থিত বোরবুর্গ খালে ডুবে তিনি মারা যান৷

এ অঞ্চলে সক্রিয় অভিবাসন সংস্থা ইতুপিয়া৫৬ এর সমন্বয়কারী মারি শ্যাপেল বলেন, হাসানের সাথে থাকা অন্য অভিবাসীরা তাকে খালে ডুবে যেতে দেখে৷ তারপর দ্রুত সেখান থেকে উদ্ধার করে বারবার বুকে চাপ দিয়ে সুস্থ্য করে তোলার চেষ্টা করে৷ তারা উপায় না দেখে দ্রুত স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে সাহায্যের জন্য ফোন দিলেও তখন খুব দেরি হয়ে যায়৷

উত্তর সাগর ম্যারিটাইম প্রেফেকচুর বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানিয়েছে, ‘‘দুর্ঘটনায় পানিতে পড়ে এই অভিবাসী তরুণের মৃত্যু হয়েছে৷’’


মারি শাপেল আরও বলেন, “পরিস্থিতি যাই হোক না কেন এই দুর্ঘটনা এড়ানোর সুযোগ ছিল৷ যদি ভুক্তভোগী অভিবাসীকে একটি মর্যাদাপূর্ণ আশ্রয় ব্যবস্থার সুবিধা দিয়ে গোসলের সুযোগ দেয়া যেত, তাহলে তাকে এই নোংরা ও বিপজ্জনক খালে নামতে হতো না৷ এই খালটিতে পণ্যবাহী জাহাজ চলাচল করায় দৈনন্দিন ব্যবহারের জন্য তা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ৷’’

পড়ুন>> চলতি বছরে ১৫ হাজারের বেশি অভিবাসীর চ্যানেল পাড়ি

ফ্রান্সের উত্তরে কালে উপকূলসহ পুরো অঞ্চলজুড়ে যুক্তরাজ্যে পৌঁছাতে ইচ্ছুক হাজার হাজার অভিবাসী ট্রানজিট অঞ্চলগুলোতে অপেক্ষমান রয়েছেন৷ 

ইংলিশ চ্যানেল এবং ইউরোটানেল পাড়ি দিয়ে যুক্তরাজ্য পৌঁছাতে গিয়ে প্রতি বছর হাজারো অভিবাসী প্রাণ হারাচ্ছেন৷

৩০শে জুন, উত্তর ফ্রান্সের ‘লুন’ সৈকতের পাশে একটি হাইওয়েতে দুর্ঘটনায় মারা যান আরেক অভিবাসী ওসমান* (ছদ্মনাম)৷ একটি ট্রাকের ধাক্কায় মারা যাওয়ার আগে ২৫ বছর বয়সি এই সোমালীয় ডানকের্কের কাছে অবস্থিত অস্থায়ী ক্যাম্পে কয়েক সপ্তাহ ধরে বাস করছিলেন তিনিভ

পড়ুন>> অভিবাসন ইস্যুতে কঠোর ব্রিটেনের দুই প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী

কয়েক দিনের টানা তদন্তের পর পুলিশ জানায়, এটি একটি আত্মহত্যা৷

এই ঘটনার এক মাস আগে, ২৯ মে, ২৮ বছর বয়সি এক ইথিওপীয় নাগরিক কালেতে একটি মালবাহী ট্রেনের ধাক্কায় মারা যান৷ তিনি রেল লাইনের কাছেই একটি স্লিপিং ব্যাগে ঘুমাচ্ছিলেন৷

এই অঞ্চলে বছরের পর বছর ঘুরে ক্লান্ত হয়ে এক পর্যায়ে তিনি ফরাসি অফিস ফর ইমিগ্রেশন অ্যান্ড ইন্টিগ্রেশন (অফি)-এর মাধ্যমে নিজ দেশে ফিরতে স্বেচ্ছায় প্রত্যাবর্তন প্রক্রিয়ার আশ্রয় নেন৷

চলতি বছরের ১০ মার্চ, ওমর ইসমাঈল নামে এক সুদানের অভিবাসী কালের কাছে নুভেল-ইগ্লিস নামক এলাকায় একটি হাইওয়েতে গাড়ির ধাক্কায় মারা যানভ৷

‘কঠিন অভিবাসন নীতি’

উত্তর ফ্রান্স এবং চ্যানেলে সক্রিয় অভিবাসন সংস্থাগুলোর মতে, আত্মহত্যা কিংবা দুর্ঘটনার মতো মৃত্যুগুলোর পেছনে দায়ী ‘ফ্রান্সের কঠিন আশ্রয় নীতি’, ‘আরোপিত বিচরণ ব্যবস্থা’ এবং অমানবিক আচরণ৷

পড়ুন>> শিশু গৃহভৃত্য থেকে অলিম্পিক তারকা মো ফারাহ

অভিবাসন সংস্থা জিস্তির সদস্য মেল গ্যালিসনও অনুশোচনা করে বলেন, ‘‘যদি লোকদের যথাযথভাবে গ্রহণ করা হতো, যদি তাদের উপর এই স্থায়ী পুলিশি চাপ না থাকত, তাহলে আমাদের এখানে কার্যক্রম চালাতে হতো না৷


ডানকের্কের নিকটে একটি অস্থায়ী শরণার্থী শিবির। ছবি: মেহেদি শেবিল/ইনফোমাইগ্রেন্টস
ডানকের্কের নিকটে একটি অস্থায়ী শরণার্থী শিবির। ছবি: মেহেদি শেবিল/ইনফোমাইগ্রেন্টস


জিস্তি এই অঞ্চলে মারা যাওয়া অভিবাসীদের উপর একটি গুরুত্বপূর্ণ ডেটাবেস তৈরি করেছে৷ 

ট্রানজিট জোনে থাকা অভিবাসীরা কী খাবেন, কীভাবে বিনামূল্যে গোসল করবেন, কোথায় খাবার পানি পাওয়া যাবে এসব তথ্যের চেয়ে পুলিশি অভিযানের দিকেই নজর থাকে বেশি৷ যার কারণে অভিবাসীরা ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় যেতে বাধ্য হন৷

পড়ুন>> পরিত্যক্ত বিমান ঘাঁটিতে আশ্রয়কেন্দ্রের পরিকল্পনা বাতিল

বিশেষজ্ঞদের মতে, “এই কট্টর অভিবাসন নীতিটি হিতে বিপরীত হবে৷ উত্তর ফ্রান্সের অভিবাসীদের জন্য যতই নরক বানিয়ে ফেলা হোক না কেন, কিছুই পরিবর্তন হবে না৷ আপনি এমন ব্যক্তিদের বাধা দিতে পারেন না যারা তাদের লক্ষ্য অর্জন করতে সবকিছু ছেড়ে দিয়ে এসেছে৷’’


এমএইউ/এফএস 











 

অন্যান্য প্রতিবেদন