গ্রিস তুর্কি সীমান্তের এভ্রোসে কাঁটাতারের বেড়া। ছবি: ইনফোমাইগ্রেন্টস/ডানা আলবোজ
গ্রিস তুর্কি সীমান্তের এভ্রোসে কাঁটাতারের বেড়া। ছবি: ইনফোমাইগ্রেন্টস/ডানা আলবোজ

নানা নাটকীয়তার পর অবশেষে এভ্রোস নদীর চরে আটকা পড়া ৩৮ সিরীয় অভিবাসীকে উদ্ধার করেছে গ্রিক পুলিশ৷ সোমবার অভিবাসীদের উদ্ধার করলেও সেখানে থাকা একটি শিশুর মৃত্যুর খবরও নিশ্চিত করেছে গ্রিক কর্তৃপক্ষ ৷ গত সপ্তাহে জাতিসংঘ জানিয়েছিল, বেশ কিছুদিন ধরে অভিবাসীদের এই দলটি তুরস্কের সীমান্তে এভ্রোস নদীর চরে আটকে ছিল৷

গ্রিসের এভ্রোস নদীর মধ্যে একটি চরে আটকা পড়া ৩৮ সিরীয় অভিবাসীর দুঃস্বপ্নের অবসান হয়েছে৷ ১৫ আগস্ট গ্রিক পুলিশ জানিয়েছে, সংশ্লিষ্ট অভিবাসীরা গ্রিক-তুর্কি সীমান্তের লাভরা অঞ্চলে অবস্থান করছে৷ তাদের মধ্যে একজন গর্ভবতী নারী ও সাত শিশু রয়েছে৷

পুলিশ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘‘প্রাথমিকভাবে ঘোষিত এলাকা থেকে প্রায় চার কিলোমিটার দূরে অভিবাসীরা অবস্থান করছিল, যেটি গ্রিক অঞ্চলের বাইরে ছিল৷’’

পড়ুন>>গ্রিসে পাকিস্তানি অভিবাসীকে পিটিয়ে হত্যা

গ্রিসের অভিবাসন ও আশ্রয় বিষয়ক মন্ত্রী নোটিস মিতারাচি জানিয়েছেন, উদ্ধারের সময় অভিবাসীরা সবাই সুস্থ্য ও স্বাভাবিক অবস্থায় ছিলেন৷ অতিরিক্ত সতর্কতার অংশ হিসেবে গর্ভবতী নারীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে৷’’

নোটিস মিতারাচি টুইটারে জানান, উদ্ধারকৃত অভিবাসীদের কাছ থেকে একটি নৌকা জব্দ করা হয়েছে৷



গত সপ্তাহে এই আটকে পড়া অভিবাসীদের ‘সংকটজনক পরিস্থিতি’ নিয়ে সতর্ক করে দ্রুত তাদের সরিয়ে নেওয়ার আহবান জানিয়েছিল জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক উদ্ধার কমিটি (আইআরসি)৷ 


এথেন্স অবশ্য রোববার জানিয়েছে, গ্রিক সীমান্তে বারবার অনুসন্ধান চালিয়েও অভিবাসীদের শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি৷ বরং তুর্কি কর্তৃপক্ষকে তারা সীমান্তের তুর্কি অংশে অভিবাসীদের শনাক্ত করতে অনুসন্ধান শুরু করার কথা বলে৷

তবে এ বিষয়ে তুরস্কের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি৷

গ্রিক পুলিশ জানায়, “অভিবাসী দলটির অবস্থান নিশ্চিত হওয়ার পরপরই গ্রিক পুলিশ বাহিনী এবং অন্যান্য সরকারি পরিষেবাগুলি তাদের উদ্ধারে ছুটে এসেছে৷ পাশপাশি অভিবাসীদেরকে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা, খাবার এবং খাবার পানি সরবরাহ করে একটি অস্থায়ী আশ্রয় কাঠামোতে স্থানান্তর করা হয়েছে৷’’

শিশু মৃত্যুর ঘটনাও নিশ্চিত করল গ্রিস

গণমাধ্যম ও অভিবাসীদের অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলো জানিয়েছে, তুরস্ক ও গ্রিসের সীমান্তে অবস্থিত এই এলাকায় বেশ কিছু দিন ধরে অভিবাসীরা আটকে ছিল৷ 

শনিবার, জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার (ইউএনএইচসিআর) একটি দ্বীপে আটকা পড়া প্রায় চল্লিশ জন অভিবাসীকে বাঁচাতে জরুরি ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিল৷

পড়ুন>>এজিয়ান সাগরে অভিবাসী নৌকা ডুবিতে নিখোঁজ ৫০

আটকা পড়া এক অভিবাসী ৬ আগস্ট অভিবাসন সংস্থা এলার্মফোনকে বলেছিলেন, “দ্বীপটি সত্যিই নরক৷ আজ একটি শিশুও মারা গেল৷ তাকে একটি বিচ্ছু কামড় দিয়েছে৷ কিন্তু আমরা কিছুই করতে পারিনি৷’’

পরবর্তীতে, জাতিসংঘ এবং গনামধ্যমের অনেকগুলো সূত্র শিশুটির মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে৷ 

ইউএনএইচসিআর গত সপ্তাহে টুইট করে জানায়, “গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী একটি শিশু এরইমধ্যে মর্মান্তিকভাবে মারা গেছে৷ আমরা আশঙ্কা করছি জরুরি পদক্ষেপ না নিলে আরও জীবন ঝুঁকিতে পড়তে পারে৷’’

তবে ৩৮ অভিবাসীকে উদ্ধার করলেও শুরুর দিকে গ্রিক কর্তৃপক্ষ পাঁচ বছর বয়সি শিশুটির মৃত্যুর ঘটনা নিশ্চিত করেনি৷

পর্বর্তীতে অভিবাসন মন্ত্রী নোটিস মিতারাচি টুইটারে শিশুটির মৃত্যুর ঘটানা নিশ্চিত করে বলেন, “আমাদের ধারণা পাঁচ বছর বয়সি শিশুটি সীমান্তে তুরস্ক অংশে মারা গেছে। আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটি এবং রেড ক্রিসেন্টের সহযোগিতায় শিশুটির মরদেহটি তার পরিবারের মাধ্যমে যথাযোগ্য মর্যাদার সমাহিত করতে সমস্ত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”


এভ্রোসের মাঝখানে অভিবাসীদের আটকা পড়ার ঘটনা এটিই প্রথম নয়৷ সর্বশেষ জুন মাসে, ইউরোপীয় আদালতের সুরক্ষায় থাকা সত্ত্বেও আট শিশুসহ ২৮ অভিবাসীর একটি দলকে পুশব্যাক করা হয়৷ এভ্রোস নদীর একটি দ্বীপে তারা বেশ কয়েকদিন ধরে আটকে ছিল৷ 


পড়ুন>>গ্রিস থেকে ফ্রান্সে যাওয়ার পথে বাংলাদেশি অভিবাসীর মৃত্যু




এমএইউ/এফএস


 

অন্যান্য প্রতিবেদন