আফগানিস্তানে তালেবানের ক্ষমতা নেওয়ার এক বছর পর পূর্ণ হলেও এখনও ফ্রান্সে আশ্রয়ের আবেদন থেকে প্রত্যাখ্যাত এবং ফরাসি অঞ্চল ছেড়ে যাওয়ার বাধ্যবাধকতা (ওকিউটিএফ) নোটিশ পাচ্ছেন অনেক আফগান শরণার্থী। এধরনের নোটিশ ফরাসি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেরা দারমানার সাম্প্রতিক ঘোষণার সাথে সাংঘর্ষিক।
চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে অন্তত চারজন আফগানকে ফরাসি অঞ্চল ছেড়ে যাওয়ার বাধ্যবাধকতা বা (ওকিউটিএফ) নোটিশ প্রদান করেছে বেশ কয়েকটি ফরাসি প্রেফেকচুর।
অভিবাসন সংস্থা লা সিমাদের আইনজীবী এবং ডিটেনশন বিশেষজ্ঞ পল শিরন এই সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়ে বলেন, “প্রেফেকচুরের দেয়া বহিষ্কারের বিজ্ঞপ্তিগুলোতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে প্রয়োজনে সংশ্লিষ্টদের আফগানিস্তানে বহিষ্কার করা যেতে পারে।”
এক বিবৃতিতে লা সিমাদা জানিয়েছে, “এই চার আফগান প্রশাসনিক আটক কেন্দ্র (সিআরএ) আটক থাকায় তাদের বিষয়টি সামনে এসেছে। এর বাইরে বহিষ্কারের নোটিশ পাওয়া আরও অনেকেই থাকতে পারেন।”
পড়ুন>>গাড়িতে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলি, তুরস্কে হত আফগান শিশু
তবে সিমাদ স্বীকার করেছে, এক বছর আগে তালেবানের ক্ষমতায় ফিরে আসার পর থেকেই ফ্রান্সে আফগানদের ডিটেনশন সেন্টারে আটক রাখার হার একেবারেই কমে এসেছে।
তবে প্রেফেকচুর থেকে (ওকিউটিএফ) নোটিশ ইস্যুর ঘটনা অব্যাহত রয়েছে।
লা সিমাদ চিহ্নিত চারজনের মধ্যে তিনজনের বহিষ্কারাদেশ বাতিল করে মুক্তির নির্দেশ দিয়েছে ফরাসি বিচার আদালত। সরকার তাদেরকে নিজদেশে বহিষ্কারের জন্য উপযুক্ত প্রমাণ ও যুক্তি দিতে ব্যর্থ হওয়ায় এই রায় দেয় আদালত।
তবে, চতুর্থ ব্যক্তি এখনও আটক আছেন।
কমেছে সাবসিডিয়ারি প্রটেকশন প্রদানের হার
আফগান আশ্রয়প্রার্থীদের আশ্রয়ের অধিকারের ক্ষেত্রে একই নীতি অনুসরণ করছে শরণার্থী ও রাষ্ট্রহীন ব্যক্তিদের জন্য নির্ধারিত ফরাসি দপ্তর অফপ্রা এবং ফরাসি জাতীয় আশ্রয় আদালত (সিএনডিএ)।
অফপ্রা এবং সিএনডিএ দীর্ঘদিন ধরে আফগানদের জন্য জারি করা সহায়ক সুরক্ষার ক্ষেত্রে দেশটিতে চলা ‘তীব্র সহিংসতা’ এর ব্যাপারটি আমলে নিলেও তালেবানের ক্ষমতায় ফিরে আসার পর থেকে এই দুই আইনি কাঠামো মনে করছে, বর্তমানে আফগানিস্তানে একটি স্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
পড়ুন>>গ্রিসে প্রবেশে ব্যর্থ নারীর নৌকায় সন্তান প্রসব
আশ্রয় অধিকার আইনজীবী ভানসঁ সুতি ইনফোমাইগ্রেন্টসকে বলেন, ‘‘নতুন এই সিদ্ধান্তের ফলে আক্রমণ, নির্বিচারে সহিংসতাকে আর বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে না।”
ফরাসি জাতীয় আশ্রয় আদালত মনে করে, “দেশটিতে আর তীব্রতর এবং নির্বিচার সহিংসতার পরিস্থিতি নেই।”
অভিবাসন বিষয়ক আইনজীবী সিলভিয়ান সালিগিরি বলেন, ‘‘আশ্রয় আইনে এই পরিবর্তনের ফলে এখন আফগান আশ্রয়প্রার্থীদের আদালতে প্রমাণ করতে হবে তিনি রাজনৈতিক, সামাজিক বা জাতিগত সংঘর্ষের কারণে ঝুঁকিতে রয়েছেন। সাম্প্রতিক দিনগুলোতে অনেক আফগান আশ্রয়প্রার্থীর আপিল খারিজ হতে দেখা গেছে। এটা নজিরবিহীন!”
ডাবলিন বিধিমালায় বহিষ্কারের ঝুঁকি
আফগান আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য আরেকটি বড় প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে ডাবলিন বিধিমালা।
ইনফোমাইগ্রেন্টসকে সাক্ষাত্কার দেওয়া আইনজীবীদের মতে, ডাবলিন বিধিমালার অধীনে প্রথম আশ্রয়ের আবেদনের জন্য নির্ধারিত সদস্য রাষ্ট্রগুলিতে বহিষ্কার অব্যাহত রয়েছে।
পড়ুন>>ফাঁদ টিকটকেও, মাদকপাচারে অভিবাসীদের ‘ব্যবহার’
আইনজীবী ভানসঁ সুতি বলেন, ‘‘রুয়ো প্রেফেকচুর অত্যন্ত সতকর্তার সাথে লোকেদের ফ্লাইটের ২৪ ঘণ্টারও কম সময় আগে আটকে রাখে। তারপর তাদেরকে বিমানে তুলতে মাঝরাতে জাগিয়ে তোলা হয়। তালেবানের কাবুল দখলের আগে এবং পরে এই নিয়মে কোন পরিবর্তন হয়নি। এই গ্রীষ্মে অনেক আফগানকে জার্মানি এবং অন্য ইইউ দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে।”
গত বছর থেকে অনেক এনজিও ডাবলিন বিধিমালার মাধ্যমে আফগানদের তাদের মূল দেশে ফেরত পাঠানোর এসব সম্ভাব্য এবং পরোক্ষ বহিষ্কারের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে।
কাবুলে আফগানদের বহিষ্কারের প্রশ্নে বুলগেরিয়া, অস্ট্রিয়া বা ক্রোয়েশিয়ার মতো দেশগুলির এখনও কোন স্পষ্ট অবস্থান না থাকায় জার্মানি বা ফ্রান্স থেকে আফগান আশ্রয়প্রার্থীদের এসব দেশে স্থানান্তরকে সমালোচনার চোখে দেখা হচ্ছে।
পড়ুন>>জার্মানির পারিবারিক পুনর্মিলন ভিসা পেতে দীর্ঘ অপেক্ষা
অভিবাসন বিষয়ক আইনজীবী একেতেরিনা সাবাতাকাকিসক ইনফোমাইগ্রেন্টসকে ব্যাখ্যা করেন, “এই দেশগুলোতে ফেরত পাঠানোর পর সেখানে আফগানদের আশ্রয়ের আবেদন যাচাই করা হবে তা কোনো নিশ্চয়তা নেই। সেখান থেকে তাদেরকে বহিষ্কারের ব্যবস্থা নেয়ার ঝুঁকি রয়েছে। প্যারিস এসব দেশে আশ্রয়প্রার্থীদের পাঠিয়ে দেয়া ‘সম্পূর্ণ ভণ্ডামি’।”
এমএইউ/এআই