আফগানিস্তানের সঙ্গে সংহতি প্রকাশে ইউরোপের বিভিন্ন শহরে ‘ফ্লাই উইথ মি’ শীর্ষক ঘুড়ি উড়ানো উৎসব অনুষ্ঠিত হলো। অংশগ্রহণকারীরা হাতে তৈরি ঘুড়ি আকাশে ওড়ানোর আগে সঙ্গীত, কবিতা এবং নৃত্যসহ আফগান সংস্কৃতির প্রদর্শনীও উপভোগ করেছেন।
‘ফ্লাই উইথ মি’ শীর্ষক ঘুড়ি উৎসবে আফগান সংস্কৃতি উদযাপন করতে ইউরোপ, যুক্তরাজ্য এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ ৩০টিরও বেশি শহরে মানুষ জড়ো হয়েছিলেন।
বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম ভয়াবহ মানবিক সংকটের সম্মুখীন আফগানিস্তান। তালেবানরা কাবুলের মসনদে বসার এক বছর হয়ে গিয়েছে।
দেশে একাধিক নিষেধাজ্ঞা, খাদ্য সংকট, কর্মসংস্থানের আকাল সবমিলিয়ে পরিস্থিতি ভয়াবহ। এই অনুষ্ঠানের লক্ষ্য ছিল আফগান জনগণের প্রতি সংহতি প্রদর্শন এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আফগানিস্তানের কথা মনে করিয়ে দেওয়া।জার্মান এবং দারি উভয় ভাষায় বক্তব্য পেশ করেন বার্লিনের এক অভিনেত্রী বারান হাশেমি।
বার্লিনের শরণার্থী গির্জায় জনতার উদ্দেশে তিনি বলেন, “ফ্লাই উইথ মি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং জার্মান সরকারের কাছে একটি সতর্কবাণী যাতে সহিংসতা থেকে পালিয়ে আসা প্রত্যেক ব্যক্তির সঙ্গে ন্যায্য এবং সমান আচরণ করা হয়৷ আফগানিস্তানের অনেক মানুষ স্বাধীনতা হারিয়ে ফেলেছেন, আমরা সেই স্বাধীনতাকে স্মরণ করি। আফগানদের প্রাচীন সংস্কৃতি ফের হুমকির মুখে পড়েছে।”
শিশুদের কলকাকলি, ঐতিহ্যবাহী আফগান পোশাক পরিহিত নারীদের সুস্বাদু মিষ্টি এবং চা পরিবেশনে পরিপূর্ণ হয়ে উঠেছিল গির্জার গোটা হল।
আফগান-জার্মান লেখক মরিয়ম টি. আজিমি আফগান সংস্কৃতি সংরক্ষণের বিষয়ে বক্তৃতা দেন।
আজিমি বলেন, “আমাদের গল্প বলতে হবে৷ আমাদের সঙ্গীত, কবিতাকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে কারণ এগুলো সেখানে নিষিদ্ধ। আমাদের এগুলোর বিকাশ ঘটাতে হবে এবং এটিকে মূল্য দিতে হবে যাতে একদিন আমরা মুক্ত আফগানিস্তানে এই সব ফিরিয়ে দিতে পারি৷ আসুন আমরা আমাদের নিজস্ব পরিচয় সংজ্ঞায়িত করি।”

আজিমি আফগান জনগণের প্রতি আরও সমর্থনের আহ্বান জানিয়ে বলেন, “আফগানিস্তান এবং আফগান নারীদের পরিস্থিতি জটিল। দয়া করে এই দিকে মনোযোগ দিন। আপনার হতাশা এবং ক্রোধকে কাজে লাগিয়ে আফগানিস্তান এবং সেখানকার মানুষগুলোকে সাহায্য করুন। আফগান সংস্কৃতি এবং আফগান পরিচয় রক্ষা করতে হবে। আমাদের নিজের দেশে সেগুলো না থাকতে পারে, তবে আমরা নিশ্চিত করব যে এই সব কিছু যেন বেঁচে থাকে।
তরুণদের আহ্বান জানান তিনি। তার কথায়, তরুণ প্রজন্ম যেখানেই থাকুন না কেন, এই সমৃদ্ধ সংস্কৃতিকে আপন করে নিতে হবে। সারা বিশ্ব যেন আমাদের পূর্বপুরুষদের এই সংস্কৃতি জানতে পারে। আমাদের সন্তানদের এবং আমাদের শিশুদের সন্তানদের জন্য এটাই তালেবানের বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিরোধ।”
নাতাশা মেলেরশ/আরকেসি