২০২১ সালের ২৭ জুলাই তুরস্কের ভ্যানে তুরস্ক-ইরান সীমান্তের কাছে আফগান, পাকিস্তানি এবং বাংলাদেশি অভিবাসীরা | ছবি: মেসুত ভারোল/এএ/ছবি-জোট
২০২১ সালের ২৭ জুলাই তুরস্কের ভ্যানে তুরস্ক-ইরান সীমান্তের কাছে আফগান, পাকিস্তানি এবং বাংলাদেশি অভিবাসীরা | ছবি: মেসুত ভারোল/এএ/ছবি-জোট

গত বছর অন্তত ১৪ জন আফগান শরণার্থীকে হত্যা করেছে ইরান ও তুরস্কের সীমান্ত কর্তৃপক্ষ, এমন অভিযোগ করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল৷ সেই সঙ্গে নিরাপত্তার জন্য দেশটির সীমান্ত পেরিয়ে আসা আফগানদের অবৈধ পুশব্যাকের বেশ কিছু ঘটনাও তারা নথিভুক্ত করেছে৷

তুরস্ক ও ইরান সীমান্তে আফগান শরণার্থীদের ‘আইনবহির্ভূতভাবে হত্যার’ কয়েকটি ঘটনা নথিভুক্ত করেছে মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল৷ তাদের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর ইরানি নিরাপত্তা বাহিনী ১১ জন আফগানকে এবং তুর্কি নিরাপত্তা বাহিনী তিনজন আফগানকে হত্যা করেছে৷ ‘তারা আমাদের সঙ্গে মানুষের মতো আচরণ করেনি’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদনে বুধবার এই তথ্য জানিয়েছে অ্যামনেস্টি৷

প্রতিবেদনে আফগান শরণার্থীদের সঙ্গে এই দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর বেশ কিছু বেআইনী ও অমানবিক আচরণের ঘটনার উল্লেখ করা হয়েছে৷ এরমধ্যে ইরানের নিরাপত্তা বাহিনী দেশটিতে প্রবেশ করা আফগানদের বহনকারী গাড়ি লক্ষ্য করে অনবরন গুলি ছোঁড়ে৷ তুর্কি সীমান্তরক্ষীরা শরণার্থীদের বিপক্ষে বেআইনিভাবে গোলাবারুদ ব্যবহার করেছে৷ 

২০২১ সালের আগস্টে তালেবানরা আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখলের পর দেশটির মানবিক পরিস্থিতি উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছায়৷ এই পরিস্থিতিতে দেশ ছাড়তে বাধ হন লাখো আফগান৷

২০২১ সালের নভেম্বর থেকে ২০২২ সালের মে মাসের মধ্যে ৭৪ জন আফগান এবং পাঁচজন সরকারি কর্মকর্তা, আইনজীবী ও অন্যান্য বিশেষজ্ঞের সাক্ষাৎকার নিয়েছে অ্যামনেস্টি৷ মানবাধিকার সংস্থাটি ২০২১ সালের মার্চ থেকে ২০২২ সালের মে পর্যন্ত মোট ২৫৫টি ‘অবৈধ মামলার’ খোঁজ পেয়েছে৷ জেনেভা কনভেনশনে অনুযায়ী যে দেশে নিপীড়নের সম্ভাবনা রয়েছে, শরণার্থীদের সেখানে প্রত্যাবাসনে বাধ্য না করার কথা বলা হয়েছে৷ কিন্তু ইরান ও তুরস্ক এই নিয়ম না মেনে অভিবাসীদের অবৈধভাবে বিপদের মুখে ফেলেছে বলে প্রতিবেদনে অভিযোগ করা হয়েছে৷

২০২১ সালের ১৭ আগস্ট তুরস্কের বিটলিসে ইরানের সীমান্তের কাছে আফগান নারী শরণার্থী | ছবি: আলি এহসান ওজতুর্ক/ডেমিরোরেন ভিজ্যুয়াল মিডিয়া/এবিএসিএ/পিকচার-অ্যালায়েন্স
২০২১ সালের ১৭ আগস্ট তুরস্কের বিটলিসে ইরানের সীমান্তের কাছে আফগান নারী শরণার্থী | ছবি: আলি এহসান ওজতুর্ক/ডেমিরোরেন ভিজ্যুয়াল মিডিয়া/এবিএসিএ/পিকচার-অ্যালায়েন্স


জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী, ইউরোপীয় দেশগুলোর নাগরিকদের শরণার্থী মর্যাদা দেয় তুরস্ক৷ কিন্তু সিরীয় শরণার্থীদের শুধু অস্থায়ী সুরক্ষা মর্যাদা দেয় তারা৷ অন্যান্য এনজিওর অসংখ্য প্রতিবেদনে তা ইঙ্গিত করা হয়েছে৷ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আফগানদেরও শরণার্থী মর্যাদা অস্বীকার করা হয় তুরস্কে৷ তুর্কি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর এখন পর্যন্ত ৪৩ হাজার আফগানকে আফগানিস্তানে ফেরত পাঠানো হয়েছে৷

 আফগান শিশুকে হত্যার অভিযোগ

 এদিবে পূর্ব তুরস্কে নিরাপত্তা বাহিনী অভিবাসীদের গাড়ি লক্ষ্য করে গুলি চালানোর ফলে চার বছরের এক আফগান শিশুর মৃত্যু হয়েছে৷ মানবাধিকারকর্মীদের মতে, পূর্ব ভ্যান প্রদেশে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলি এসে লাগে ছেলেটির হৃদপিণ্ডে৷ প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান দিয়ে অধিকারকর্মীরা সোমবার ডিপিএকে জানিয়েছে, শিশুটির মা সহ আরো ১২ জন আহত হয়েছেন৷

সন্দেহভাজন গাড়িটি দেখে টায়ারে গুলি চালায় পুলিশ৷ একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গাড়িটি থামানোর অনুরোধ উপেক্ষা করেছিল চালক৷ মানবাধিকার কর্মী কারাতাসের মতে, দুজন কর্মকর্তা গাড়ি লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছেন৷ ঘটনাটিকে তিনি ‘কর্তব্য লঙ্ঘন’ এবং ‘বেঁচে থাকার অধিকার লঙ্ঘন’ বলে উল্লেখ করেছেন৷

আরকেসি/এফএস (ডিপিএ, এপি)

 

অন্যান্য প্রতিবেদন