এরাসমুস শিক্ষা কর্মসূচির আওতায় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পড়াশোনায় যেতে কড়াকড়ি আরোপ করেছে তুরস্ক৷ দেশটির সরকারের দাবি, শিক্ষার্থীরা তুরস্ক থেকে পালাতে এই কর্মসূচি ব্যবহার করছে৷
এরাসমুস নামের শিক্ষা কর্মসূচির সুযোগ নিয়ে তুরস্কের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আশ্রয় আবেদন করছে বলে অভিযোগ করছে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়৷ বিষয়টি শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেছে তারা৷ তুরস্কের শিক্ষা মন্ত্রণালয় এই বিষয়ে স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করে বলেছে কারো বিদেশে থেকে যাওয়ার ঝুঁকি থাকলে তাকে এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের অনুমতি দেয়া যাবে না৷ দেশটির স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সজচু তাদের প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে৷
ডুভার নামের আরেকটি ইংরেজি সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, তুরস্কের ৮১টি প্রদেশের পরিচালকদের কাছে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে অবহিত না করেই জার্মানি, অস্ট্রিয়া, চেক প্রজাতন্ত্রসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ইন্টার্নশিপ করতে যাচ্ছে৷ চিঠিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা হাসান উনসাল লিখেছেন, ‘‘শিক্ষার্থী ও শিক্ষকেরা দেশে ফিরে আসছেন না এমন অনেক ঘটনা রয়েছে৷ এই ধরনের ঘটনা বেড়ে চলায় আমাদের পরিচালিত কর্মসূচি ও পাসপোর্টে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে৷’’
পড়ুন: আফগান শরণার্থীদের ‘ঢুকতে দিচ্ছে না’ ইরান ও তুরস্ক
এক বছরে ২০ হাজার শিক্ষার্থী
কোভিড-১৯ মহামারির আগে ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে প্রায় ১৭ হাজার ৪০০ তুর্কি শিক্ষার্থী ও প্রশিক্ষক এবং তিন হাজার ২৬০ জন শিক্ষক এরাসমুস কর্মসূচির অধীনে বিদেশে যান৷ তুরস্কের নির্বাসিত সাংবাদিকদের সংগঠন স্টকহোম সেন্টার ফর ফ্রিডমের (এসসিএফ) তথ্য অনুযায়ী, গত ১৫ বছরে দেশটির পাঁচ লাখ শিক্ষার্থী বিদেশে আশ্রয় আবেদন করেছেন৷
এসসিএফ-এর অভিযোগ, শিক্ষার্থী ও শিক্ষাবিদরা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তুরস্ক সরকারের চাপের মধ্যে রয়েছে৷ দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে শিক্ষার্থীদের কার্যক্রম নজরদারির নির্দেশ দিয়েছে৷ পাশাপাশি প্রতিবাদে অংশ নেয়া বা ভিন্নমতের কারণে শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তারের ঘটনা ক্রমশ বেড়ে চলেছে বলে জানিয়েছে তারা৷
এরাসমুস কর্মসূচিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য দেশগুলো ছাড়াও রয়েছে আইসল্যান্ড, লিশ্টেনস্টাইন, নরওয়ে এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যপ্রার্থী মেসিডোনিয়া, সার্বিয়া এবং তুরস্ক৷ এছাড়া সুইজারল্যান্ড ও যুক্তরাজ্যও এই কর্মসূচিতে অংশ নেয়৷ এর আওতায় একবারে সর্বোচ্চ ১২ মাস এই দেশগুলোতে পড়াশোনায় অংশ নিতে পারে তারা৷ যেতে পারে একাধিকবার৷
গত বছরের শেষ দিকে এরাসমুস কর্মসূচিতে অংশ নেয়া তুরস্কের শিক্ষার্থীদের আর্থিক সহায়তা বন্ধ করে দেয়া হয়৷ অনেক শিক্ষার্থী তিন মাস পর্যন্ত টাকা পাচ্ছে না বলে প্রতিবেদনে উঠে এসেছে৷ চেক রিপাবলিকে পড়াশোনারত এসলেম গুলার নামের এক শিক্ষার্থী সংবাদ মাধ্যম ডুভারকে জানান তুরস্কের মুদ্রার বিনিময় হার কমে যাওয়ায় তাদের অবস্থা আরো শোচনীয় হয়েছে৷ সাম্প্রতিক সময়ে তুরস্কের অর্থনীতিও যথেষ্ট সংকটে রয়েছে, যার কারণে অনেক শিক্ষার্থী দেশটিতে ফিরে নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুর্ভাবনায় রয়েছেন৷
এফএস/এআই