ফাইল ফটো: ইউক্রেন থেকে পোল্যান্ডে প্রবেশ করছেন একদল শরণার্থী | ছবি: পিকচার অ্যালায়েন্স
ফাইল ফটো: ইউক্রেন থেকে পোল্যান্ডে প্রবেশ করছেন একদল শরণার্থী | ছবি: পিকচার অ্যালায়েন্স

ইউক্রেন থেকে আসা সব শরণার্থী ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে অবস্থানের ক্ষেত্রে একই ধরনের সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেন না৷ ইউক্রেন থেকে আসা ইউক্রেনীয় নন এমন শরণার্থীরা জার্মানিতে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত অবস্থানের অনুমতি পেয়েছিলেন৷ তাদের ভবিষ্যৎ কী?

এই শরণার্থীদের আইনি অবস্থান এবং তারা কী কী করতে পারেন তা জানার চেষ্টা করেছে ইনফোমাইগ্রেন্টস৷

রাশিয়া হামলা চালানোর সময় ইউক্রেনীয় নন কিন্তু ইউক্রেনে বসবাসের অনুমতি আছে এমন তৃতীয় দেশের নাগরিকের সংখ্যা ছিল সাড়ে চার লাখের মতো৷ তাদের মধ্যে তিন লাখ নয় হাজার মানুষ যুদ্ধ শুরুর পর এখন অবধি দেশটি ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের অভিবাসন বিষয়ক সংস্থা আইওএম৷ 

জার্মান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইউক্রেনে থাকা তৃতীয় কোনো দেশের (টিসিএন) ২৯ হাজার নাগরিক দেশটি থেকে পালিয়ে জার্মানিতে এসে আশ্রয় নিয়েছিলেন৷

ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সাময়িক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় ইউক্রেনীয় শরণার্থীদের জোটভুক্ত দেশগুলোতে তিনবছর অবধি সব সুযোগ সুবিধাসহ বসবাসের সুযোগ দেয়া হচ্ছে৷ কিন্তু যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটি থেকে আসা টিসিএনদের এই সুবিধা পাওয়া বেশ কঠিন ব্যাপার৷

জার্মানিও এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম নয়৷ দেশটির সরকার শুরুতে বলেছিল যে ইউক্রেন থেকে আসা সব শরণার্থীকেই আশ্রয় দেবে, কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে টিএনসিদের অনেকে হয়ত ইউরোপের দেশটিতে আগস্টের পর বসবাসের আর অনুমতি পাবেন না৷ তৃতীয় দেশের নাগরিকরা কী কী করতে পারেন তা পাবেন এখানে:

টিসিএনদের আইনি পরিস্থিতিতে পহেলা সেপ্টেম্বর থেকে কী কী পরিবর্তন এসেছে?

তথাকথিত ‘ইউক্রেন রেসিডেন্স ইনটেরিম ডিক্রির’ আওতায় ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে থাকা এবং পরবর্তীতে সেখান থেকে পালিয়ে আসা প্রত্যেক ব্যক্তি জার্মানিতে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত বসবাসের অনুমতি পেয়েছিলেন৷  

তবে, ৩১ আগস্টের পরও জার্মানিতে থাকতে চাইলে তাদের কিছু উদ্যোগ নিতে হবে৷ ব্যক্তিবিশেষে এক্ষেত্রে পদ্ধতি আলাদা হতে পারে৷ 

রেসিডেন্স পারমিট কারা পাবেন?

  • ইউক্রেনের নাগরিকদের বাইরে তৃতীয় দেশের নাগরিকদের মধ্যে নির্দিষ্ট কিছু গোষ্ঠী জার্মানিতে বসবাসের অনুমতি চাইতে পারেন৷
  • জার্মানির রেসিডেন্স অ্যাক্ট এর ২৪ ধারার মধ্যে পড়েন এমন ব্যক্তির পরিবারের সদস্যরা দেশটিতে সাময়িকভাবে বসবাসের অনুমতি পেতে পারেন৷
  • যারা ইউক্রেনে শরণার্থীর মর্যাদা পেয়েছিলেন, জার্মানিতেও তারা তা পাবেন৷ নিজ দেশে ফেরা নিরাপদ নয় এমন টিসিএনরাও আশ্রয় পাবেন৷
  • ইউক্রেনে যারা সাময়িকভাবে বসবাসের অনুমতি পেয়েছিলেন তাদের আবার জার্মান কর্তৃপক্ষের মুখোমুখি হয়ে জানাতে হবে যে কেন তারা নিজের দেশে ফিরে যেতে পারবেন না৷
  • জার্মান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইরিত্রিয়া, সিরিয়া এবং আফগানিস্তানের নাগরিকেরা নিজ নিজ দেশে ফেরত যাওয়ার উপযুক্ত বিবেচিত হবেন না৷
  • ইউক্রেন থেকে আসা তৃতীয় দেশের নাগরিকদের মধ্যে যারা রেসিডেন্স অ্যাক্টের ২৪ ধারা অনুযায়ী জার্মানিতে বসবাসের উপযুক্ত নন, তারা আনুষ্ঠানিকভাবে পহেলা সেপ্টেম্বর থেকে বৈধ অনুমতি ছাড়া বসবাস করছেন হিসেবে বিবেচিত হবেন৷ তবে দেশটির বিভিন্ন রাজ্য এক্ষেত্রে কী পদক্ষেপ নেবে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি৷ 

তৃতীয় দেশের নাগরিকদের মধ্যে যারা শিক্ষার্থী হিসেবে জার্মানিতে থাকতে চান তাদের কী মনে রাখতে হবে?

  • সরল হিসেবে টিসিএনরা জার্মানিতে পড়াশোনা করার জন্য বসবাসের অনুমতি চাইতে পারবেন৷ তবে এক্ষেত্রে কিছু শর্ত রয়েছে:
  • প্রথমত, তাদের জার্মানির কোনো একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে হবে এবং দেখাতে হবে যে একটি ‘ব্লকড একাউন্টে’ প্রত্যেকের ১০ হাজার ইউরো রয়েছে যা দিয়ে তারা নিজেদের খরচ নিজেরাই চালাতে পারবেন৷
  • জার্মানির অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার জন্য সি-ওয়ান পর্যায়ে জার্মান জানা থাকতে হবে এবং এ সংক্রান্ত সনদ দেখাতে হবে৷
  • জার্মানির ১৬টি রাজ্যের মধ্যে এখন অবধি তিনটি রাজ্য ইউক্রেন থেকে আসা তৃতীয় কোনো দেশের শিক্ষার্থীদের আরো ছয়মাস থাকার অনুমতি দিতে রাজি হয়েছে৷ রাজ্যগুলো হচ্ছে বার্লিন, ব্রেমেন ও হামবুর্গ৷ এই অনুমতিপত্র দিয়ে তারা সামাজিক সুযোগ-সুবিধা এবং কাজও করতে পারবেন৷
  • বাড়তি এই ছয়মাসের মধ্যে তাদেরকে প্রমাণ দিতে হবে যে তারা জার্মানির একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে সক্ষম হয়েছেন এবং নিজেদের খরচ চালাতে পারবেন৷ তখন তাদের দীর্ঘমেয়াদে শিক্ষা ভিসা দেয়া হবে৷

টিসিএনরা আর কী করতে পারেন?

  • চাকুরি অথবা শিক্ষানবিশ: সরল হিসাবে তৃতীয় দেশের নাগরিকেরা জার্মানিতে চাকুরি কিংবা শিক্ষানবিশ হিসেবে প্রশিক্ষণে যোগ দিতে পারেন৷ তবে প্রশিক্ষণ নিতে বি-ওয়ান পর্যায়ের জার্মান জানা থাকতে হবে৷
  • টিসিএনদের যারা রেসিডেন্স অ্যাক্টের ২৪ ধারা অনুযায়ী বসবাসের অনুমতি পাবেন না, তারা শিক্ষার্থী হিসেবে থাকার চেষ্টার পাশাপাশি মানবিক কারণেও থাকার অনুমতি চাইতে পারেন৷ সেক্ষেত্রে তাদের আশ্রয় আবেদন করতে হবে৷

আরেকটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে৷ তা হচ্ছে জার্মানির সব রাজ্যে একই নিয়ম প্রযোজ্য নয়৷ তাই আপনি যে রাজ্যে আছেন সেখানকার নিয়মকানুন সম্পর্কে খোঁজ নিন৷

এআই/এফএস


 

অন্যান্য প্রতিবেদন