আশ্রয়প্রার্থীদের রুয়ান্ডায় পাঠানোর পরিকল্পনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে বিভিন্ন সংগঠন৷ ছবি: জুমা ওয়্যার/পিকচার অ্যালায়েন্স
আশ্রয়প্রার্থীদের রুয়ান্ডায় পাঠানোর পরিকল্পনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে বিভিন্ন সংগঠন৷ ছবি: জুমা ওয়্যার/পিকচার অ্যালায়েন্স

ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে আসাদের রুয়ান্ডা পাঠানো হবে, যুক্তরাজ্য সরকারের এমন পরিকল্পনা জানার পর আশ্রয়প্রার্থীদের মধ্যে বেড়েছে আত্মহত্যার প্রবণতা৷ একটি দাতব্য সংস্থা তাদের গবেষণা থেকে এমন তথ্য তুলে ধরে সরকারকে নীতিটি বাতিল করার আহ্বান জানিয়েছে৷

সম্প্রতি যুক্তরাজ্যে পৌঁছানো ৩৬ জন আশ্রয়প্রার্থীর উপর একটি জরিপ চালিয়েছে ব্রিটিশ দাতব্য সংস্থা মেডিক্যাল জাস্টিস৷ এই আশ্রয়প্রার্থীদের সবাই একটি আটককেন্দ্রে বন্দি এবং পরিকল্পনামাফিক তাদেরকে রুয়ান্ডায় পাঠাতে চায় কর্তৃপক্ষ৷

‘রুয়ান্ডায় পাঠানোর মানবিক খরচ’, এমন শিরোনামে প্রকাশিত মেডিক্যাল জাস্টিসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই ৩৬ আশ্রয়প্রার্থীর ১১ জনের মধ্যে আত্মঘাতী চিন্তা রয়েছে৷ এর মধ্যে একজন দুইবার আত্মহত্যার চেষ্টাও করেছেন৷

প্রতিবেদনটির লেখকের দায়িত্বে থাকা চিকিৎসকদের মতে, রুয়ান্ডায় পাঠানোর হুমকিতে থাকা কোনো কোনো আশ্রয়প্রার্থীর মধ্যে তীব্র আত্মহত্যার প্রবণতা রয়েছে৷

বাড়ছে মানসিক সমস্যা

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে আসা অভিবাসীদের মধ্যে যে বিদ্যমান মানসিক সমস্যা থাকে রুয়ান্ডায় পাঠানোর হুমকি সেই সমস্যাকে আরো জটিল করে তুলেছে৷

জরিপে অংশ নেয়া ৩৬ জন আশ্রয়প্রার্থীর ২৬ জনই যুক্তরাজ্য পৌঁছানোর আগে নির্যাতনের শিকার হওয়ার চিহ্ন দেখিয়েছেন৷ ১৫ জনের মধ্যে ট্রমা পরবর্তী স্ট্রেসে (পিটিএসডি) ভোগার প্রমাণ রয়েছে৷ মানবপাচার সংক্রান্ত পরিস্থিতির শিকার হয়ে সমস্যায় ভুগেছেন আরো ছয়জন৷ অভিবাসন পর্যায়ে তাদেরকে নিজেদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিভিন্ন কাজে বাধ্য করা হয়েছে৷ এরমধ্যে জোরপূর্বক যৌনকর্ম অথবা চুক্তিভিত্তিক দাসত্ব মেনে নেয়ার মতো ঘটনাও রয়েছে৷

এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাজ্য সরকারের ‘রুয়ান্ডা নীতি’ এই অভিবাসীদেরকে হতাশাজনক পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে৷ তাদের আত্মহত্যার এই প্রবণতার দিকটি সম্প্রতি এক আশ্রয়প্রার্থীর ভিডিও বার্তাতেও উঠে আসে৷ ৪০ বছর বয়সি এই ইয়েমেনি চলতি বছরের শুরুতে যুক্তরাজ্য পৌঁছান৷ এপ্রিলে তিনি রুয়ান্ডা নীতির কথা জানার পর বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রীতি প্যাটেলকে উদ্দেশ্য করে জানান, ‘‘এই পরিস্থিতির ফলে আমার নিজেকে হত্যা করা ছাড়া আর কোনো বিকল্প থাকবে না৷’’


ভুল মনে করে না সরকার

তবে এই প্রতিবেদনে মোটেও বিচলিত নয় যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়৷ তারা বরং গবেষণাটির প্রাপ্ত ফলাফল নিয়েই প্রশ্ন তুলেছে৷

মেডিক্যাল জাস্টিসের গবেষণার প্রতিক্রিয়ায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেন, ‘‘এতে আমাদের উত্থাপিত নীতিটি নিয়ে অনেক ভুল উপস্থাপনা রয়েছে৷ কারো জন্য অনিরাপদ বা যথাযথ না হলে তাকে পাঠানো হবে না৷ আমাদের পরীক্ষায় রুয়ান্ডাকে আমরা সম্পূর্ণ নিরাপদ ও সুরক্ষিত বলেই চিহ্নিত করেছি, যাদের আশ্রয়প্রার্থীদের সহায়তার পূর্ব নজির রয়েছে৷’’

তবে মেডিক্যাল জাস্টিসের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, এই নীতি বাস্তবায়িত হলে কাদেরকে রুয়ান্ডায় পাঠানো হবে তার বাছ-বিচার থাকবে না৷ এক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যাদেরকে অগ্রহণযোগ্য মনে করবে তাদেরকেই আফ্রিকার দেশটিতে পাঠানো হবে৷ তবে ১৮ বছরের নীচে অভিভাবকহীনদের বাদ দেয়া হবে৷ আদালতের নিষেধাজ্ঞায় স্থগিত হওয়ার আগ পর্যন্ত ১৩০ জনকে দেশটিতে পাঠানোর জন্য বাছাই করা হয়েছে বলে জানা গেছে৷

পড়ুন:অভিবাসন ইস্যুতে কঠোর ব্রিটেনের দুই প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী

‘ন্যাক্কারজনক পরিকল্পনা’ বাতিলের আহ্বান

সম্প্রতি আশ্রয়প্রার্থীদের একটি দলকে রুয়ান্ডায় পাঠানোর পরিকল্পনা বাস্তবায়নের শেষ মুহূর্তে ইউরোপীয় আদালতের সিদ্ধান্তে সেটি স্থগিত করতে বাধ্য হয়েছে যুক্তরাজ্য সরকার৷ তবে এতে পরিকল্পনাটি থেকে সরকার সরে আসছে না বলে জানিয়েছে৷

রুয়ান্ডা পাঠানোর এই পরিকল্পনা প্রশাসন কীভাবে বাস্তবায়ন করবে সে সম্পর্কে খুব কমই জানা যায় বলে উল্লেখ করেছেন মেডিক্যাল জাস্টিসের পরিচালক এমা গিন৷

তিনি রুয়ান্ডায় পাঠানোর লক্ষ্যে ‘অভিবাসীদের নির্বিচারে আটকে রাখা অবিলম্বে বন্ধের’ আহ্বান জানান৷ সেই সঙ্গে এই নীতি থেকে সরে আসতেও সরকারকে পরামর্শ দেন৷ বলেন, ‘‘চিকিৎসা সংক্রান্ত প্রমাণ থাকার পরও এটা না করার অর্থ হলো সরকার পূর্বপরিকল্পিতভাবে ক্ষতি করতে যাচ্ছে৷’’

শুধু মেডিক্যাল জাস্টিস নয়, এর আগে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানেও রুয়ান্ডায় পাঠানোর হুমকিতে থাকা আশ্রয়প্রার্থীদের আত্মহত্যার ঝুঁকির বিষয়টি উঠে এসেছিল৷ প্রতিবেদনে একজন ইরানি আশ্রয়প্রার্থীর বর্ণনা দেয়া হয়েছে৷ রুয়ান্ডায় পাঠানোর আশঙ্কা থেকে তিনি আত্মহত্যার চেষ্টা করেন৷

এসব বিবেচনায় মেডিক্যাল জাস্টিস রুয়ান্ডা নীতিকে ‘নিষ্ঠুর ও ন্যাক্কারজনক স্কিম’ হিসেবে অভিহিত করেছে৷

এফএস/আরআর

 

অন্যান্য প্রতিবেদন