ডেনমার্কের একটি শরণার্থী শিবির। ছবি: ইপিএ
ডেনমার্কের একটি শরণার্থী শিবির। ছবি: ইপিএ

যুক্তরাজ্যের মতো ডেনমার্কও দেশটির ভূখণ্ডে আসা আশ্রয়প্রার্থীদের স্থানান্তর করতে রুয়ান্ডার সাথে একটি চুক্তি করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। চুক্তির খসড়া প্রস্তাবনাও চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ডেনিশ কর্তৃপক্ষ। তবে এই প্রকল্পের সমালোচনা করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।

ডেনমার্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শুক্রবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, “দুই দেশ আশ্রয়প্রার্থী স্থানান্তর নিয়ে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার অংশ হিসেবে একটি প্রাথমিক ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করেছে।”

ঘোষণাপত্রে একটি যৌথ কর্মসূচি প্রতিষ্ঠার বিষয়টি বিবেচনার কথা বলা হয়েছে। যার মাধ্যমে ডেনমার্কে আসা আশ্রয়প্রার্থীদের আশ্রয় আবেদনগুলো রুয়ান্ডায় স্থানান্তর করা যেতে পারে।”


কোপেনহেগেন জানিয়েছে, সম্ভাব্য চুক্তির প্রস্তাবনাতে আশ্রয়প্রার্থীদের মধ্যে যারা শরণার্থী মর্যাদা পাবেন তাদেরকে রুয়ান্ডায় বসতি স্থাপনের প্রস্তাবও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

আরও পড়ুন>> ‘শরণার্থীদের রুয়ান্ডা পাঠাতে ডেনমার্কের নেয়া পরিকল্পনা ব্যর্থ হতে পারে’

যুক্তরাজ্যের পর দ্বিতীয় দেশ হিসেবে নর্ডিক এই দেশটি নিজেদের ভূখণ্ডে অনিয়মিত উপায়ে আসা আশ্রয়প্রার্থীদের আশ্রয় আবেদন প্রক্রিয়া স্থানান্তর করতে চায়।

ডেনিশ ইন্টিগ্রেশন বিষয়ক মন্ত্রী কারে ডিবভাদ বেক বলেছেন, “আমি এই নতুন পদক্ষেপে অত্যন্ত আনন্

ডেনমার্ক ২০২১ সালের জুন মাসে আশ্রয়প্রার্থীদের ইউরোপের বাইরে স্থানান্তরের অনুমোদন দিতে একটি আইনি উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল।

এই আইনি উদ্যোগের একটি খসড়া প্রস্তাবনাও চূড়ান্ত করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, আশ্রয়প্রার্থীরা ড্যানিশ সীমান্তে বা ভূখণ্ডে আসার পর সশরীরে আশ্রয় আবেদন জমা করার পরই তাদের রুয়ান্ডায় পাঠানো হবে। 

রুয়ান্ডায় আশ্রয়প্রার্থীদের সুরক্ষা নিয়ে শঙ্কা

এর আগে ডেনমার্কের ক্ষমতাসীন সোশ্যাল ডেমোক্রেট সরকার রুয়ান্ডাসহ আরও বেশ কয়েকটি দেশের সাথে আশ্রয়প্রার্থী স্থানান্তরের ব্যাপারে আলোচনা করেছে। 

পড়ুন>> ডেনমার্ক থেকে প্রত্যাবাসনের ঝুঁকিতে সিরীয় তরুণীরা

ডেনিশ গণমাধ্যমগুলো দাবি করেছে, সরকার মিশর, ইরিত্রিয়া এবং ইথিওপিয়ার সাথেও কথা বলেছিল, তবে রুয়ান্ডার প্রস্তাবটিকেই সর্বশেষ গ্রহণ করা হয়েছে। 

তবে, ইউরোপীয় কমিশন এই প্রকল্প থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নিয়েছে। 

ইইউ কমিশনের মতে, এই প্রকল্পটিতে আশ্রয় আইন অনুযায়ী আশ্রয়প্রার্থীদের সকল সুযোগ এবং সুরক্ষার কার্যকর সুবিধা পাওয়ার বিষয়ে বেশ কিছু মৌলিক প্রশ্ন রয়েছে।

আশ্রয়প্রার্থীদের কিগালিতে স্থানান্তর করার জন্য চলতি বছরের এপ্রিল মাসে একই উদ্যোগ নেয় যুক্তরাজ্য। 

আরও পড়ুন>>ফুটবল বিশ্বের নতুন তারকা সিরীয় শরণার্থী রুনি

যদিও আইনি জটিলতায় এখনও কোনো উচ্ছেদ কার্যক্রম ঘটেনি তবে এনজিও এবং অভিবাসন সংস্থাগুলো এই প্রকল্পের তীব্র বিরোধিতা করেছে।

বৈধতা এবং সম্ভাব্যতার প্রশ্ন ছাড়াও প্রকল্পটি অভিবাসীদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর মারাত্মক প্রভাব রাখছে দাবি করে নিন্দা জানিয়েছে অভিবাসন সংস্থাগুলো। 

গত সপ্তাহে ব্রিটিশ সংস্থা মেডিকেল জাস্টিসের প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাজ্য সরকারের রুয়ান্ডা পরিকল্পনা জানার পর আশ্রয়প্রার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়েছে৷

পড়ুন>> ডেনমার্ক: অভিবাসীদের জন্য ‘বাধ্যতামূলক কাজের’ প্রস্তাব

ডেনমার্ক ইউরোপের সবচেয়ে কট্টর অভিবাসন নীতি অনুসরণ করা দেশ হিসেবে পরিচিত। 

গত বসন্তে সরকার সিরিয়ার শরণার্থীদের তাদের দেশে ফিরে যেতে বলেছিল যদিও সেখানে এখনও যুদ্ধ চলছে। এছাড়া, ২০২১ সালে ২৩ আশ্রয়প্রার্থী দম্পতিকে আলাদা করার দায়ে সাবেক ডেনিশ মন্ত্রী ইনগার স্টোজবার্গকে দুই মাসের কারাদণ্ড দেয় দেশটির আদালত।

আরও পড়ুন>> ডেনমার্কে কঠোর হচ্ছে অভিবাসীদের নাগরিকত্ব আবেদনের শর্ত

২০২০ সালের শেষ দিকে ডেনমার্কের অভিবাসন নীতিকে ‘বৈষম্যমূলক’ দাবি করে অবিলম্বে কোপেনহেগেনকে এই ব্যবস্থা রোধ করার আহবান জানিয়েছিল জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশন। 


এমএইউ/এআই 


 

অন্যান্য প্রতিবেদন