২০২১ সালে এপ্রিল থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে সুইজারল্যান্ডে সংগঠিত ৩৩ টি বিতাড়ন উড়ান বা ফ্লাইটের উপর চলতি মাসের শুরুতে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে একটি মানবাধিকার সংস্থা। সংস্থাটির প্রতিবেদনে একটি উড়ানের আগে একজন অন্তঃসত্ত্বা নারীকে বেঁধে সিঁড়ি দিয়ে নামানোর ঘটনায় সুইস পুলিশের ভূমিকার তীব্র নিন্দা জানানো হয়।
ন্যাশনাল কমিশন ফর দ্য প্রিভেনশন অফ টর্চার (সিএনপিটি) নামে একটি সুইস অধিকার সংস্থা চলতি মাসের শুরুতে সুইজারল্যান্ড থেক বহিষ্কারের সময় অভিবাসীদের সাথে কর্তৃপক্ষের আচরণের ঘটনায় একটি তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
২০২১ সালের এপ্রিল থেকে ডিসেম্বর মাসের মধ্যে সংগঠিত ৩৩ টি বহিষ্কারের মধ্যে একটি ঘটনায় একজন অন্তঃসত্ত্বা নারীকে বেঁধে সিঁড়ি দিয়ে উঠানো এবং হাতকড়া পরা অবস্থায় তার সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়াতে বাধ্য করা হয়েছিল বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
পড়ুন>>সুইজারল্যান্ডে বাংলাদেশিসহ আটক ২৩
ভুক্তভোগী অভিবাসীদের বরাত দিয়ে সিএনপিটিজানায়, “সবগুলো প্রত্যাবাসন ফ্লাইট সামগ্রিকভাবে পেশাদার এবং সম্মানজনক পদ্ধতিতে সম্পন্ন হয়েছে। তবে অভিবাসীদের পরিবহনের সময় এবং বিমানবন্দরে নানা প্রকারের আংশিক নিষেধাজ্ঞার ঘন ঘন ব্যবহার উদ্বেগজনক।”
হাতকড়া পড়া অবস্থায় বুকের দুধ খাওয়াতে বাধ্য করা
পুরো প্রতিবেদনে সবগুলো ঘটনার মধ্যে চারমাসের অন্তঃসত্ত্বা এই নারীর ঘটনাকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। এই নারীকে বহিষ্কার করার পদ্ধতিকে অত্যন্ত ‘অপমানজনক ও অমানবিক’ বলে মনে করছে ন্যাশনাল কমিশন ফর দ্য প্রিভেনশন অফ টর্চার।
আরও পড়ুন>>সুইজারল্যান্ডে আশ্রয় কেন্দ্রে র্নিযাতনের শিকার শরণার্থীরা, অ্যামনেস্টির প্রতিবেদন
প্রতিবদনের মতে, “চারমাসের অন্তঃসত্ত্বা এই মাকে তার সন্তানদের উপস্থিতিতে হাতকড়া পরানো হয়েছিল। তাকে হাতকড়া পড়া অবস্থায় আরেক সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়াতে হয়েছিল।”
সংস্থাটির পর্যবেক্ষকের মতে, “এই নারীকে তিন বা নারী পুলিশের উপস্থিতিতে অত্যন্ত অনুপযুক্তভাবে সিঁড়ি দিয়ে নামানো হয়েছিল। এ সময় তিনি বারবার তার পেটে ব্যথা পাওয়ার অভিযোগ করছিলেন।”
কমিশনের মতে, প্রত্যাবাসনের সময় শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কারণ থাকা সত্ত্বেও অনেক অভিবাসীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এ জাতীয় ঘটনা অবশ্যই এড়ানো উচিত।”
পড়ুন>>দুই বছরের মধ্যে ১৬০০ শরণার্থী নেবে সুইজারল্যান্ড
সিএনপিটির সুপারিশে আরও বলা হয়, “এসব ক্ষেত্রে অভিবাসীদের সন্তানদের উপস্থিতিতে শারীরিক প্রতিবন্ধকতার ক্ষেত্রে অপমানজনক আচরণ এড়ানো উচিৎ। কারণ এই ধরনের পরিস্থিতি একটি শিশুর জন্য আঘাতমূলক হতে পারে।”
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২১ সালে সিএনপিটি ১৫ শিশুসহ ১৩০ অভিবাসীকে সুইজারল্যান্ড থেকে বহিষ্কারের ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে। তাদের মধ্যে মাত্র তিনজন ব্যক্তি স্বেচ্ছায় তাদের দেশে ফিরে যেতে রাজী হয়েছিলেন। বাকিদের বসবাসের অনুমতি না থাকায় জোরপূর্বক ফেরত পাঠানো হয়।
আরও পড়ুন>> সুইজারল্যান্ডে শরণার্থীদের নিয়ে প্রতীকী সংসদ
সুইজারল্যান্ড সরকার পরিচালিত বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয়প্রার্থীদের উপর নিয়মিত সহিংসতার অভিযোগ করে আসছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সুইজারল্যান্ড শাখা।
সংস্থাটির প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, জানুয়ারি ২০২০ থেকে এপ্রিল ২০২১ এর মধ্যে বাসেল, শেভ্রিলস, বউড্রি, আল্টস্টাটেন এবং ভ্যালোর্ব শহরে অবস্থিত আশ্রয়কেন্দ্রগুলিতে এসব ঘটনা ঘটেছে।
প্রতিবেদনে আশ্রয়প্রার্থীদের উপর যেসব নির্যাতনের অভিযোগ উঠে এসেছে সেগুলোর মধ্যে শারীরিক আঘাত, গলা চেপে ধরে শ্বাসপ্রশ্বাসে বাধা সৃষ্টি, চোখে মরিচের স্প্রে মারা এবং অত্যন্ত নাজুক কিছু ধাতব কন্টেইনারে আটকে রাখা অন্যতম।
এমএইউ/এআই