অভিবাসীবিরোধী বক্তব্যকে কেন্দ্রে রেখে ২৫ সেপ্টেম্বরের নির্বাচনের প্রচারণা চালাচ্ছে ইটালির কট্টর ডানপন্থী দলগুলো৷ যদিও অভিবাসী ছাড়া ইটালির অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়বে বলে মনে করছেন অনেকে৷
ইটালির রক্ষণশীল দল ব্রাদার্স অব ইটালির নেত্রী জর্জা মেলোনি আর দ্য লিগ নেতা মাত্তেও সালভিনির রাজনৈতিক এজেন্ডার মূলে রয়েছে ‘ইটালিয়ান ফাস্ট’ বা ইটালীয়দের অগ্রাধিকারের বিষয়টি৷ তার অংশ হিসেবে তারা দেশটিতে ‘গণহারে অভিবাসন’ বন্ধের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিকে সামনে নিয়ে আসছেন৷
সালভিনির শুরুর নির্বাচনী প্রচারগুলোর একটি ছিল লাম্পেদুসায়৷ উপকূলটিতে প্রতি বছর উত্তর আফ্রিকা থেকে সমুদ্র পাড়ি দিয়ে আসা কয়েক হাজার অভিবাসী ঠাঁই নেন৷ সেখানে গিয়ে সালভিনি বলেছেন লাম্পেদুসা ‘ইউরোপের শরণার্থী ক্যাম্পে’ পরিণত হতে পারে না৷ দলের সমর্থকদের আয়োজিত জনসভায় তিনি বলেন, ‘‘শুধু যাদের অনুমতি থাকবে তাদেরই ইটালিতে প্রবেশ করা উচিত৷’’
অন্যদিকে মেলোনি বলছেন, সংঘাতময় অঞ্চল থেকে পালিয়ে আসা মানুষ আর অনিয়মিত অর্থনৈতিক অভিবাসীদের মধ্যে পার্থক্য টানতে চান তিনি৷
গত সপ্তাহে তিনি একজন অভিবাসীর ধর্ষণের শিকার এক নারীর ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করে সমালোচিত হন৷ নিয়ম ভঙ্গের কারণে পরে সেই ভিডিওটি সরিয়ে নেয়া হয়৷
মিলান বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানী মাউরিৎসিও অ্যামব্রোসিনি বলেন, ‘‘দুর্ভাগ্যবশত অভিবাসন নিয়ে আমাদের রাজনৈতিক বিতর্ক বিশাল স্রোতের ধারণা তৈরি করছে...কিন্তু প্রকৃতপক্ষে অভিবাসীদের আগমনের প্রকৃত সংখ্যা এক যুগ ধরে স্থিতিশীল রয়েছে৷’’
পড়ুন: ইটালিতে বসবাসের অনুমতিতে বাংলাদেশিরা চতুর্থ
রাজনৈতিক নেতাদের এই দৃষ্টিভঙ্গি দেশটির অনেক নাগরিকরাও সমর্থন করেন৷ গত ডিসেম্বরে করা এক জরিপ অনুযায়ী, ৭৭ শতাংশ ইটালীয় মনে করেন দেশটিতে অভিবাসনের মাত্রা খুবই উচ্চ পর্যায়ে রয়েছে৷
জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৫৩ শতাংশ মনে অভিবাসীদের কারণে দেশটিতে অপরাধের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে৷ ব্রাদার্স অব ইটালির সমর্থকদের ৭৬ শতাংশ আর লিগের ৬৭ শতাংশ এই ধরনের মনোভাব পোষণ করেন৷
তবে এ নিয়ে বিপরীত অবস্থান রয়েছে মধ্য বামপন্থী ধারার গণতন্ত্রী দলের৷ অ্যামব্রোসিনি বলেন, ‘‘তারা অভিবাসনকে দেখেন ইটালির অর্থনীতির জন্য সম্পদ হিসেবে৷’’কিন্তু বিষয়টিকে ভোটারদের কাছে তুলে ধরতে গিয়ে তারা সমস্যায় পড়ছে বলে মনে করেন তিনি৷ ‘‘কেননা এটা অজনপ্রিয় একটি বিষয়৷ কাউকে বাদ দেয়া বা শত্রুতা সবসময়ই সহজ বিতর্ক, যা সহজেই বোধগম্য’’, বলেন তিনি৷
অভিবাসন ইটালির জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ সেটি পরিসংখ্যান থেকেও বোঝা যায়৷ সরকারি হিসাবে, নিম্ন জন্মহারের কারণে আগামী ৫০ বছরে ইটালির জনসংখ্যা ২০ শতাংশ হ্রাস পেতে পারে৷
এই প্রবণতার নেতিবাচক প্রভাব দেশটির শ্রম বাজারে পড়বে বলে সতর্ক করেছে জাতীয় পরিসংখ্যান দপ্তর৷ এর ফলে অবসর ভাতা ও স্বাস্থ্য খাতের বাজেট বরাদ্দে চাপ তৈরি হতে পারে বলেও উল্লেখ করেছে তারা৷
ইটালির শ্রমবাজার এরইমধ্যে অভিবাসন নির্ভর হয়ে পড়েছে৷ কৃষি, নির্মাণ, গৃহস্থালী কাজ ও আতিথেয়তা, সেবাখাতের নিম্ন-দক্ষ শ্রমখাতে অভিবাসীদেরই প্রাধাণ্য রয়েছে৷
দেশটিতে বর্তমানে ২৫ লাখ বৈধ অভিবাসী রয়েছেন, যা শ্রমশক্তির ১০ শতাংশ৷
এফএস/কেএম (এএফপি)