অনথিভুক্ত অভিবাসীদের বিরুদ্ধে অভিযানে গত এক মাসে ১৬৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দ্বীপরাষ্ট্র মাল্টা৷ এরমধ্যে আছেন বাংলাদেশিরাও৷ এদিকে গ্রেপ্তারকৃতদের দ্রুত নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী৷
অনিয়মিতভাবে বসবাস করা অভিবাসীদের বিরুদ্ধে যৌথ অভিযান চালাচ্ছে মাল্টার পুলিশ ও ডিটেনশন সার্ভিস বা অভিবাসীদের আটক দপ্তর৷ দেশটির যেসব অঞ্চলে বিদেশিরা বেশি বসবাস করেন সেসব জায়গায় তল্লাশি চালাচ্ছে তারা৷ এর অংশ হিসেবে গত সোমবার পাওলা ও এফগুরা নামক এলাকায় পঞ্চম অভিযানে ২৫ অভিবাসীকে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী৷ এই অভিবাসীরা ভারত, বাংলাদেশ, সিরিয়া ও কলোম্বিয়ার নাগরিক বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা আনসা৷
এর আগে মারসা থেকে আগস্টের শুরুতে ২৭ জনকে ও গত সপ্তাহে ৪৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়৷ ২১ আগস্ট গজোতে অভিযানে আটক করা হয় ২৪ জনকে৷ এছাড়াও ১৬ সেপ্টেম্বর হামরুন থেকে ৪০ জনকে গ্রেপ্তারের তথ্য জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ৷ সব মিলিয়ে এক মাসের বেশি সময় ধরে চলা এই অভিযানে এখন পর্যন্ত ১৬৫ জন অভিবাসীকে আটক করেছে মাল্টা৷ তাদের মধ্যে কোন দেশের কতজন সেই তথ্য এখনও পাওয়া যায়নি৷
গ্রেপ্তারকৃতদের নিজ দেশে প্রত্যাবাসন
এই অভিযান সামনের দিনেও অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিয়র্ন কামিলারি৷ তিনি বলেন, ‘‘অবৈধ অভিবাসন বন্ধ, ফেরত পাঠানো ও স্থানান্তরের লক্ষ্যে কর্তৃপক্ষের লড়াই অব্যাহত থাকবে৷’’ গ্রেপ্তারকৃতদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে বলেও সুনির্দিষ্ট করে উল্লেখ করেছেন তিনি৷
সোমবার ২৫ জনকে গ্রেপ্তারের তথ্য জানিয়ে ফেসবুকে দেয়া পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘‘তারা (গ্রেপ্তারকৃতরা) যাতে আমাদের দেশে অবস্থান করতে না পারে তার জন্য দ্রুত প্রক্রিয়া শুরু করা হবে৷’’
এর আগে ২৩ সেপ্টেম্বরের অভিযানে ৪৯ জনকে আটকের পরও তিনি একই কথা বলেছেন৷ অভিযানে আটককৃতদের সম্পত্তি জব্দ করা এবং বসবাসের স্থানের পানি ও বিদ্যুত সেবা বন্ধ করে দেয়ার তথ্যও জানিয়েছেন বিয়র্ন কামিলারি৷ তিনি বলেন, ‘‘অনিয়মিত অভিবাসন প্রতিহত করা ও অবৈধভাবে আমাদের দেশে বসবাসকারীদের বিরুদ্ধে পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এই অভিযান চালানো হয়েছে৷ এর মাধ্যমে একটি পরিস্কার বার্তা আমরা দিচ্ছি, আমাদের দেশ আইন অমান্যকারীদের জন্য উন্মুক্ত নয়৷ আসছে সপ্তাহগুলোতে এটি অব্যাহত ও জোরদার করা হবে এবং দেশজুড়ে পরিচালিত হবে৷’’
ক্ষমতার প্রদর্শনী?
এদিকে এই অভিযানে মাত্রাতিরিক্ত শক্তির ব্যবহার হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন মাল্টার মানবাধিকারকর্মীরা৷ তাদের অভিযোগ পুলিশি অভিযানে ক্ষমতার অপ্রয়োজনীয় প্রদর্শনের মাধ্যমে অভিবাসীদের মনে ভীতি ছাড়ানো হচ্ছে৷
জেসুইট রিফিউজি সার্ভিসের পরিচালক ও আইনজীবী ক্যাটিরন কামিলেরি টাইমস অব মাল্টাকে বলেন, অভিযানে ক্ষমতার ব্যবহার মাধ্যমে অভিবাসীদের মনে নিরাপত্তাহীনতা তৈরি করা হচ্ছে৷ এর সঙ্গে অভিবাসী সমস্যার প্রকৃত সমাধানের কোনো সম্পর্ক নেই বলে মনে করেন তিনি৷
গত সপ্তাহে মারসাতে অভিযান চলাকালে ভারী সরঞ্চাম ব্যাবহার করে একটি অ্যাপার্টমেন্ট ফটক ভেঙ্গে ৪৯ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ৷ এতে গোটা ভবনের কাঠামোই ক্ষতিগ্রস্ত হয়৷ এই ঘটনার নিন্দা জানান মানবাধিকার আইনজীবী থেরেসে ক্যামোডিনি ক্যাচিয়া৷ তিনি মনে করেন, এক্ষেত্রে পুলিশ তাদের প্রদত্ত ক্ষমতার বাইরে গিয়ে অতিরিক্ত শক্তির ব্যবহার করছে৷
এফএস/কেএম (আনসা, টাইমস অব মাল্টা)
পড়ুন: গ্রিসে বাংলাদেশি মৌসুমি কর্মী নিয়োগের শর্তগুলো সামনে শিথিল হতে পারে