সার্বিয়ায় ভিসামুক্ত ভ্রমণের সুযোগ নিয়ে বিভিন্ন দেশের নাগরিকেরা পরে ইইউ দেশগুলোতে ঢুকে পড়ছে বলে অভিযোগ অস্ট্রিয়ার৷ ছবি: সার্বিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
সার্বিয়ায় ভিসামুক্ত ভ্রমণের সুযোগ নিয়ে বিভিন্ন দেশের নাগরিকেরা পরে ইইউ দেশগুলোতে ঢুকে পড়ছে বলে অভিযোগ অস্ট্রিয়ার৷ ছবি: সার্বিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

পশ্চিম বলকান দেশগুলো হয়ে অনিয়মিত অভিবাসীদের আগমন ঠেকাতে একসঙ্গে জোরদার কার্যক্রম চালাবে অস্ট্রিয়া ও সুইজারল্যান্ড৷ বুধবার দুই দেশের সরকারের এক বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে৷

অভিবাসীরা যাতে অনিয়মিত পথে অবাধে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য সীমান্তে পুলিশি কার্যক্রম বাড়াবে অস্ট্রিয়া ও সুইজারল্যান্ড৷ এর অংশ হিসেবে আন্তঃসীমান্ত তল্লাশি এবং মানবপাচার বিরোধী যৌথ অভিযান পরিচালনা করবে দেশ দুইটির আইন-শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী৷ রেল পরিবহণে থাকবে যৌথ নজরদারি দল৷ পাশাপাশি দুই দেশের মধ্যে এই সংক্রান্ত যোগাযোগ বাড়াতে আলাদা কর্মকর্তাও নিয়োগ দিবে তারা৷ কার্যক্রমগুলো বাস্তবায়িত হবে চলতি বছরের মধ্যেই৷ 


২৮ সেপ্টেম্বর জুরিখে এক বৈঠকে অস্ট্রিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গেরহার্ড কার্নার এবং সুইস ফেডারেল কাউন্সিলের সদস্য কারিন কেলার সুটার এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন৷ তাদের সমঝোতার সারসংক্ষেপ তুলে ধরে কারিন কেলার সুটার বলেন, ‘‘সংক্ষেপে বলতে গেলে যেসব মানুষের সুরক্ষা প্রয়োজন তারা আগের মতো উভয় দেশেই তা পেতে থাকবেন৷ দ্বিতীয়ত, আমরা অনিয়মিত অভিবাসন তখনই বন্ধ করতে পারব যদি আমরা প্রতিবেশী হিসেবে দ্বিপাক্ষিক ও আন্তর্জাতিকভাবে একে অন্যকে সহযোগিতা করি৷ কোনো দেশই অভিবাসন সমস্যা এককভাবে সমাধান করতে পারবে না৷’

বলকান দেশগুলোর ভিসা নীতির সমালোচনা

সাম্প্রতিক সময়ে অনিয়মিত অভিবাসনের বিষয়ে কঠোর হয়ে উঠছে অস্ট্রিয়া৷ বলকান দেশগুলোতে ভিসা ছাড়া ভ্রমণের সুযোগ নিয়ে বিভিন্ন দেশের নাগরিকেরা সেখান থেকে পরবর্তীতে অনিয়মিত উপায়ে অস্ট্রিয়ায় ঢুকে পড়ছে বলে অভিযোগ করে আসছে দেশটির সরকার৷ এজন্য সবচেয়ে বেশি অভিযোগের তীর সার্বিয়ার দিকে৷ ভিয়েনা বলছে ভারত, পাকিস্তান, টিউনিশিয়া, বুরুন্ডি ও অন্যান্য দেশের নাগরিকরা ভিসামুক্ত সুবিধা নিয়ে ফ্লাইটে সার্বিয়ায় আসছে৷ তারপর পাচারকারীদের যোগসাজশে তারা অস্ট্রিয়াসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের ধনী দেশগুলোতে আশ্রয় নিচ্ছে৷ 

বলকান দেশগুলো হয়ে পশ্চিম ইউরোপে অনিয়মিত অভিবাসন রুট৷ সূত্র: ডয়চে ভেলে
বলকান দেশগুলো হয়ে পশ্চিম ইউরোপে অনিয়মিত অভিবাসন রুট৷ সূত্র: ডয়চে ভেলে

অস্ট্রিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গেরহার্ড কার্নার সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘আমাদের এই সমস্যার আরো গভীরে যেতে হবে৷ কারণ বেলগ্রেডের ভিসামুক্ত সুবিধা নিয়ে ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ অবৈধ অভিবাসী আসছে৷ পাচারকারীদের তিন হাজার, পাঁচ হাজার বা সাত হাজার ইউরো পর্যন্ত দিয়ে তারা (পশ্চিম ইউরোপে দেশগুলোতে) ভ্রমণ অব্যাহত রাখছে৷’’

এই পথে ‘অবৈধ অভিবাসন’ বন্ধে ইউরোপীয় ইউনিয়ন মাধ্যমে এবং দ্বিপক্ষিকভাবে দেশগুলোকে চাপ দেয়া প্রয়োজন বলেও উল্লেখ করেন গেরহার্ড কার্নার৷ 

পশ্চিম বলকান রাষ্ট্র সার্বিয়া, বসনিয়া অ্যান্ড হার্ৎসেগোভিনা এবং কসোভোর সঙ্গে অভিবাসন বিষয়ে সুইজারল্যান্ডের অংশিদারিত্ব চুক্তি রয়েছে৷ অনিয়মিত অভিবাসন ঠেকাতে এই সম্পর্ককে কাজে লাগানো হবে বলে কর্মপরিকল্পনায় উল্লেখ করা হয়েছে৷ 


অস্ট্রিয়ায় আট মাসে ৩২ হাজার আবেদন প্রত্যাখ্যান

অনিয়মিত অভিবাসন নিরুৎসাহিত করতে গিয়ে কার্নার দেশটির আশ্রয় আবেদনের তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরেন৷ তিনি জানান, গত আগস্ট পর্যন্ত অস্ট্রিয়ায় ৫৬ হাজার আশ্রয় আবেদন জমা পড়েছে৷ অন্যদিকে চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ৩২ হাজার আবেদন প্রত্যাখ্যাত হয়েছে৷ 

বলকান হয়ে আসা অনিয়মিত অভিবাসন ঠেকাতে এরইমধ্যে ভিয়েনা ইউরোপীয় কমিশনে চিঠি পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানিয়েছে অস্ট্রিয়ার গণমাধ্যম ভিনডোবোনা৷ দেশটির ভিসা বিধি যাতে শেঙ্গেন অঞ্চলের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয় সে বিষয় চাপ দিতে বলা হয়েছে চিঠিতে৷ দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে গণমাধ্যমটি জানিয়েছে এরইমধ্যে সুইজারল্যান্ড, স্লোভেনিয়া, ক্রোয়েশিয়া ও জার্মানি এতে স্বাক্ষর করেছে৷

এফএস/এআই 

পড়ুন: সিলেট থেকে সার্বিয়া: দালালচক্রের খপ্পরে সর্বস্ব হারানোর গল্প

 

অন্যান্য প্রতিবেদন