পশ্চিম বলকান হয়ে অভিবাসন স্রোত ঠেকাতে নতুন ব্যবস্থা নিবে হাঙ্গেরি, অস্ট্রিয়া ও সার্বিয়া৷ সোমবার এক বৈঠক থেকে এমন অঙ্গীকার করেছেন দেশগুলোর নেতারা৷
গ্রিস বা তুরস্ক থেকে বসনিয়া, কসভো, নর্থ মেসিডোনিয়া, সার্বিয়ার মতো পশ্চিম বলকান দেশগুলো পাড়ি দিয়ে পশ্চিম ইউরোপের ধনী রাষ্ট্রগুলোতে পৌঁছানোর চেষ্টা করেন অনিয়মিত অভিবাসীরা৷ ২০২১ সালে ভূমধ্যসাগরের পর এই পথেই সবচেয়ে বেশি অভিবাসী অনিয়মিত উপায়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে প্রবেশ করেছেন৷
ইইউ এর বহিঃসীমান্তরক্ষী বাহিনী ফ্রন্টেক্সের হিসাবে গত বছর এই সংখ্যা ছিল প্রায় ৬২ হাজার যা ২০১৫ সালের অভিবাসন সংকটের পর এই পথে পাড়ি দেয়া সর্বোচ্চ অভিবাসীর সংখ্যা৷ কিন্তু চলতি বছরের আট মাসেই এই সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে৷ ফ্রন্টেক্সের হিসাব বলছে, আগস্ট পর্যন্ত সাড়ে ৮৬ হাজারের বেশি অভিবাসী অনিয়মিতভাবে পশ্চিম বলকান পাড়ি দিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নে প্রবেশ করেছেন, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় চারগুণ বেশি৷
যেসব ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে
বলকান দেশগুলোর প্রতিবেশী ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো সম্প্রতি এ নিয়ে নড়েচড়ে বসেছে৷ হাঙ্গেরি বরাবরই অনিয়মিত অভিবাসনের বিষয়ে তার সীমান্তে কড়া অবস্থান নিয়ে রেখেছে৷ এবার তার সঙ্গে যোগ দিচ্ছে অস্ট্রিয়াও৷ সাথে আছে বলকান দেশ সার্বিয়া৷ অনিয়মিতভাবে সীমান্ত পাড়ি ঠেকাতে এই তিন দেশ মিলে বেশ কিছু কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার অঙ্গীকার করেছে সোমবার৷
এর অংশ হিসেবে সীমান্তে কড়াকড়ি আরোপ, অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত পাঠানো বা পুশব্যাকের মতো ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছে৷ সাধারণত অনিয়মিত অভিবাসীরা ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোনো দেশে প্রবেশের পর আশ্রয় আবেদনের সুযোগ পান৷ কিন্তু অভিবাসীরা যাতে জোটের সীমান্তের বাইরে এই আবেদন করেন সেই ব্যবস্থা নিতে চান তারা৷ এজন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের এ সংক্রান্ত আইন বদলানোর কথা বলেছেন হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবান৷

সার্বিয়ার প্রেসিডেন্ট আলেকসান্ডার ভুচিচ ও অস্ট্রিয়ার চ্যান্সেলর কার্ল নেহামাকে সঙ্গে নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন তিনি৷ বলেন, ‘‘আমরা যদি ইউরোপীয় ইউনিয়নের আইন পরিবর্তন করি...যাতে ইইউর বাইরে হটস্পটগুলোতে আশ্রয় আবেদন পেশ করা যায় এবং এই আবেদন পরীক্ষার আগে ইউরোপে প্রবেশের অনুমতি কোনভাবেই দেয়া না হয় তাহলে আমাদের সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে৷’’
এই অবস্থানের পক্ষে কার্ল নেহামা বলেন, ‘‘ইইউতে আশ্রয় প্রক্রিয়া দক্ষ করে তুলতে আমাদের আইনী অবস্থার বদল ঘটাতে হবে৷ এবং অভিবাসীদের ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত হলে তার জন্য একটি দক্ষ প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া থাকতে হবে৷’’ অবিলম্বে এইসব ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন বলেও মত দেন তিনি৷
ভিসা ব্যবস্থা বদলাবে সার্বিয়া
ভারত, টিউনিশিয়াসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের মানুষকে ভিসামুক্ত ভ্রমণের সুবিধা দেয় সার্বিয়া৷ সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে অনেকে পর্যটনের জন্য এসে পরবর্তীতে বলকান দেশটি থেকে অনিয়মিত পথে ইউরোপীয় ইউনিয়নে প্রবেশ করছেন বলে অভিযোগ করে আসছে অস্ট্রিয়া৷ দেশটির ভিসার নিয়ম পরিবর্তনের জন্য চাপও দিয়ে আসছিল তারা৷
এই বিষয়ে সার্বিয়ার রাষ্ট্রপতি ভুচিচ সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, তারা ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে মিল রেখে ভিসা নীতি ঠিক করবেন, যাতে অভিবাসীরা ইইউতে প্রবেশের জন্য সার্বিয়াকে প্রথম দেশ হিসেবে ব্যবহার করতে না পারে৷ এর বাইরে অনিয়মিত পথে সিরিয়া, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে দেশটিতে আসাদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য বেড়েছে বলেও যোগ করেন তিনি৷ বলেন, ‘‘সার্বিয়া অভিবাসীদের হটস্পট হতে চায় না৷’’
বেলগ্রেডে তাদের আসন্ন সম্মেলনে বিষয়গুলোকে নির্দিষ্ট করা এবং অর্থের উৎস কী হবে সে বিষয় ঠিক করা হবে বলে জানান অরবান৷
সীমান্তে তৎপরতা
অনিয়মিত অভিবাসীদের প্রবেশ ঠেকাতে স্লোভাকিয়া সীমান্তে ১০ দিনের জন্য নজরদারি ব্যবস্থা চালু করেছে প্রাগ৷ চেক কর্মকর্তারা গত সোমবার এই ঘোষণা দিয়ে জানিয়েছেন, অনিয়মিত অভিবাসন বৃদ্ধির প্রতিক্রিয়া হিসাবে স্লোভাকিয়ার সাথে থাকা সীমান্তে অস্থায়ীভাবে নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা পুনঃস্থাপন করা হবে৷ নতুন এই ব্যবস্থাটি ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর করেছে তারা৷
প্রাগের এই ঘোষণার একদিন পরই স্লোভাকিয়া সীমান্তে নিয়ন্ত্রণ আরোপের ঘোষণা দেয় অস্ট্রিয়া৷ গত মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে ১১টি সীমান্তে এই ব্যবস্থা চালু করেছে তারা৷
এদিকে হাঙ্গেরির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সান্দর পিন্টার জানিয়েছেন তারাও দেশটির দক্ষিণ সীমান্ত চার হাজার সীমান্তরক্ষী সদস্য নিয়োগ দেয়ার পরিকল্পনা নিয়েছেন৷
এফএস/কেএম