অনিয়মিত অভিবাসীদের জন্য ভুয়া বিয়ের আয়োজন করে এমন একটি চক্রের সন্ধান পেয়েছে দক্ষিণ ইটালির আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী৷ এই চক্রের মূল হোতা হিসেবে এক নারীকে গ্রেপ্তার করেছে তারা৷
ইটালির কারাবিনিয়ারি মিলিটারি পুলিশ সম্প্রতি পাঁচ জনকে গ্রেপ্তার করেছে এবং ১১ জনকে গৃহবন্দি করেছে৷ তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগে বলা হয়েছে ইটালিতে থাকার অনুমতি নেই এমন অভিবাসীদের কাগজপত্র সরবরাহ করতে বিপুল অঙ্কের বিনিময়ে তারা বিয়ের আয়োজন করে৷
এই চক্রের মূল হোতা একজন নারী৷ তিনি ‘বেত্রোতহেদস ম্যাজিশিয়ান’ নামে পরিচিত৷ দক্ষিণ ইটালির নেপলস এবং ক্যাসের্তাতে কাজ করতেন তিনি৷ নেপলসের পাবলিক প্রসিকিউটর অফিস সম্প্রতি একটি অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে৷
৪০টি ভুয়া বিয়ে
২০১৯ এবং ২০২০ সালের মধ্যে ‘ভুয়া বিয়ে’তে জড়িত থাকার অভিযোগে ৪০ জনেরও বেশি ব্যক্তিসহ মোট ৬৬ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে৷ পুলিশের অনুমান, এই বিয়ে-জালিয়াতি থেকে প্রাপ্ত মোট আয় প্রায় দুই লাখ ইউরো৷
পুলিশ জানিয়েছে, চক্রটির সঙ্গে জড়িতরা মূলত আভেজানো শহরের বাসিন্দা৷ তাদের অধিকাংশ সদস্য নারী৷ ইটালির সংবাদমাধ্যমে ‘জিয়া মারিয়া’ (আন্ট মেরি) নামে এক নারীর কথা উল্লেখ করা হয়েছে৷ তার আসল নাম মাতিলদে এম৷ তিনি ‘ব্লন্ড’ নামেও পরিচিত৷
৬১ বছর বয়সি ওই সন্দেহভাজন পন্টিসেলির নেপোলিটানের আশেপাশে থাকতেন বলে জানা গেছে৷ অভিযানে এই সন্দেহভাজনের পাশাপাশি তার দুই ব্যক্তিগত সহকারী এবং মরোক্কোর দুই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে প্রশাসন৷
‘বিয়ে প্রতি পাঁচ থেকে ছয় লাখ টাকা’
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, চক্রটি প্রতিটি বিয়ের আয়োজন বাবদ পাঁচ থেকে ছয় লাখ টাকা হাতিয়ে নিত৷ এর সঙ্গে জড়িতদের বেশিরভাগ টিউনিশিয়া এবং মরোক্কোর অভিবাসী বলে দাবি কর্তৃপক্ষের৷
২১ থেকে ৪৯ বছর বয়সি মোট ২৫ জন ইটালীয় নারী প্রায় সমবয়সি বিদেশি নাগরিকদের বিয়ে করেছেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে৷ কয়েকটি ক্ষেত্রে নারীদের বিরুদ্ধে বিবাহের প্রতিশ্রুতিতে সম্মত হওয়ার অভিযোগও আনা হয়েছে৷ এ ধরনের প্রতিশ্রুতি ছয় মাসের জন্য বৈধ এবং এর বিনিময়ে অভিবাসীরা ইটালিতে বসবাসের অনুমতি পেতে পারেন৷
‘বিবাহের জাদুকর’
পুলিশ জানিয়েছে, বাছাই করা এইসব ‘ভুয়া কনে’র অধিকাংশই দরিদ্র৷ একজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তিনি পাঁচবার বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন কিংবা কোনো না কোনোভাবে বিয়ে করেছেন৷ কর্তৃপক্ষ একটি ফোন কলের রেকর্ডে চক্রের একজন সন্দেহভাজন সদস্য ‘আন্টি মেরি’কে বলেছেন ভুয়া বিয়ের জন্য ‘সবকিছু প্রস্তুত’ রয়েছে, তিনি শুধু ‘কনে’-র জন্য অপেক্ষা করছেন৷
প্রধান সন্দেহভাজন উত্তর দেন, ‘আমি তাকে আনতে যাচ্ছি’৷ এরপর বলেন তাকে মেয়েটির বাড়িতে যেতে হবে৷ এই ‘ভুয়া কনের’ বয়স ২২ বছর বলে জানা গেছে৷
নেপলসের উত্তর-পূর্বে নথিবিহীন অনেক অভিবাসী বাস করেন৷ একাধিক অভিবাসী তাদের ভবিষ্যৎ স্ত্রী হিসাবে একই নারীকে দেখানোয় এই ভুয়া চক্রের বিষয়টি কাস্তেল ভলতারনোর পুলিশের নজরে আসে৷ এ ছাড়াও বসবাসের অনুমতির সবকটি আবেদন নেপলসের একই ডাকঘর থেকে এসেছিল৷
আরকেসি/এফএস (আনসা)