ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগ দেয়ার আশা রাখতে চাইলে সার্বিয়াকে তার ভিসার নিয়ম বদলাতে হবে৷ নয়ত এমনকি ইইউর সঙ্গে দেশটির ভিসা চুক্তিও বাতিল হতে পারে৷ অনিয়মিত অভিবাসন ঠেকাতে দেশটিকে এমন বার্তা দিয়েছে জার্মানি ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন৷
সম্প্রতি পশ্চিম বলকান দেশগুলো হয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নে অনিয়মিত অভিবাসন ব্যাপকভাবে বেড়েছে৷ চলতি বছর এখন পর্যন্ত এক লাখ ছয় হাজার জন এই পথে ইইউতে প্রবেশ করেছেন, যা গত বারের চেয়ে আড়াই গুণেরও বেশি৷
ইউরোপীয় ইউনিয়নের সীমান্তরক্ষী বাহিনী ফ্রন্টেক্সের হিসাবে শুধু সেপ্টেম্বরে বলকান রুট হয়ে ‘অবৈধভাবে’ ইইউতে প্রবেশের সংখ্যা ছিল ১৯ হাজার ১৬০ জন৷
এই অভিবাসীদের একটি বড় অংশ আসছে সার্বিয়া হয়ে৷ ইইউর দেশগুলোর অভিযোগ সার্বিয়ার ভিসামুক্ত সুবিধা কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন দেশের অভিবাসীরা দেশটিতে প্রবেশের পর অনিয়মিত উপায়ে পশ্চিম ইউরোপে পাড়ি দিচ্ছে৷
এমন প্রেক্ষিতে সার্বিয়ার ভিসা নিয়ম বদলাতে নতুন করে দেশটির উপর চাপ দিয়েছে জার্মানি ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন৷
সার্বিয়ার ইইউ সদস্যপদের আবেদন ও জার্মানির অবস্থান
জার্মানির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ন্যান্সি ফেজা সার্বিয়াকে ইইউ দেশগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দ্রুত ভিসা নীতি পরিবর্তনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে বলেছেন৷ শুক্রবার লুক্সেমবুর্গে ইইউ’র এক বৈঠকে তিনি বলেন, ‘‘ইইউতে সদস্য হওয়ার একটি মানদণ্ড রয়েছে, তার একটি অংশ হলো একই ভিসা নীতি৷ প্রার্থী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হতে চাইলে সার্বিয়াকে ইইউর ভিসা রীতি চালু করতে হবে৷’’
এর আগে চলতি মাসের শুরুতে সার্বিয়া জানিয়েছিল তারা হাঙ্গেরি ও অস্ট্রিয়ার সঙ্গে সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদারে কাজ করছে৷ সার্বিয়া থেকে আগত অভিবাসীদের বড় অংশই এই দুইটি দেশে প্রবেশ করছে৷
পড়ুন: অস্ট্রিয়ায় কেন দক্ষিণ এশীয় অভিবাসীদের ঢল?
সার্বিয়ার ভিসানীতি নিয়ে প্রশ্ন যে কারণে
ভারত, টিউনিশিয়া, সিরিয়া, বুরুন্ডিসহ বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের ভিসামুক্ত প্রবেশাধিকার সুবিধা দিয়ে থাকে সার্বিয়া৷ যদিও ইউরোপীয় অনেক দেশের নাগরিকদেরও দেশটিতে ঢুকার জন্য ভিসার প্রয়োজন হয়৷
এদিকে সার্বিয়ার সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নে ভিসামুক্ত ভ্রমণ সুবিধার চুক্তি থাকায় দেশটিতে প্রবেশ করা অভিবাসীদের একটি বড় অংশ ইইউতে প্রবেশের চেষ্টা করে৷
কর্তৃপক্ষ বলছে, সার্বিয়ার সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভিসা চুক্তি স্বল্পমেয়াদে অবস্থানের জন্য৷ কিন্তু অভিবাসী এই সুবিধা নিয়ে দীর্ঘমেয়াদে থাকার চেষ্টা করে৷
উল্লেখ্য, ২০১২ সালে সার্বিয়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রার্থী হয়েছে৷ তবে এখনও এই আবেদন মঞ্জুর হয়নি৷
পড়ুন: ইউরোপে অনিয়মিত অভিবাসী প্রবেশ বেড়েছে ৭০%
ইইউ যা বলছে
ইউরোপীয় কমিশন শুক্রবার জানিয়েছে সার্বিয়া অনিয়মিত অভিবাসনের রাশ টানতে ব্যবস্থা না নিলে দেশটির সঙ্গে ভিসা ব্যবস্থা বাতিলের শঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না৷
ইইউর স্বরাষ্ট্র বিষয়ক কমিশনার ইলভা ইয়োহানসন অবশ্য উল্লেখ করেছেন, তিনি সার্বিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপের পরিবর্তে দেশটির সঙ্গে সহযোগিতামূলক সম্পর্কের প্রত্যাশা রাখেন৷
ইয়োহানসনের মতে সিরিয়া, আফগানিস্তানের মতো দেশের নাগরিকদের ইউরোপে আশ্রয় আবেদনের যৌক্তিকতা থাকলেও অনেক দেশের নাগরিকদের ‘‘তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর প্রয়োজন রয়েছে’৷
তিনি সার্বিয়া এবং পশ্চিম বলকানের অন্য দেশগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে দ্রুত বার্লিনে বৈঠক করবেন বলেও জানান৷
এফএস/আরকেসি
প্রথম প্রকাশ: ১৪ অক্টোবর, ২০২২, ডয়চে ভেলে