চ্যানেল পাড়ি দিয়ে যুক্তরাজ্যে আসা অনিয়মিত অভিবাসীদের বড় একটি অংশ আলবেনীয় নাগরিক। ছবি: পিক্সাবে
চ্যানেল পাড়ি দিয়ে যুক্তরাজ্যে আসা অনিয়মিত অভিবাসীদের বড় একটি অংশ আলবেনীয় নাগরিক। ছবি: পিক্সাবে

যুক্তরাজ্যে আসা আলবেনীয় অভিবাসীদের একটি অংশ সেখানে আসার পর থেকেই অপরাধমূলক চক্র দ্বারা পরিচালিত গাঁজা ক্ষেতগুলোতে কাজ করতে বাধ্য হন। একটি আলবেনিয়ান টেলিভিশন এবং বিভিন্ন ইউরোপীয় গণমাধ্যমে প্রচারিত প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

১৬ অক্টোবর, রোববার, আলবেনীয় টেলিভিশন এটুসিএনএন জানায়, ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চ্যানেল পাড়ি দিয়ে যুক্তরাজ্যে আসা আলবেনীয় তরুণ অভিবাসীদের বড় একটি অংশ গাঁজা চাষে যুক্ত হতে বাধ্য হন। 

এটুসিএনএন টিভিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তরুণ অভিবাসীরা জানান, অভিবাসী আটককেন্দ্র থেকে বেরোনোর পর আলবেনীয় গ্যাংয়ের সদস্যরা তরুণদের গাঁজা খেতে কাজ করানোর জন্য গোপন নিয়োগ প্রক্রিয়া চালায়।

আরও পড়ুন>>যুক্তরাজ্য: কর্তৃপক্ষের ভুলে ঝুঁকিতে অপ্রাপ্তবয়স্ক আশ্রয়প্রার্থীরা

নিজেদের মুখ ঢেকে রেখে অনেক তরুণ অভিবাসী জানান, আত্মীয় সেজে পাচারকারীরা তাদেরকে যুক্তরাজ্যের সরকারি আশ্রয়কেন্দ্র ও হোটেল থেকে নিয়ে যেতে আসতেন। কিছুদিন পর তাদেরকে ইংল্যান্ড এবং ওয়েলসে থাকা পাচারকারীদের গাঁজা খেতের কাজে পাঠানো হতো। বিভিন্ন ফাঁকা বাড়ি বা শিল্পভবনে অত্যন্ত গোপনে এসব ক্ষেতে অভিবাসীদের দিয়ে কাজ করানো হয়। 

ব্রিটিশ উপকূলে অবতরণ এবং এই কাজ শুরু করার মধ্যে সময়ের ব্যবধান কখনও কখনও অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত হয়। অনেকেই দাবি করেছেন, যুক্তরাজ্যে আগমনের মাত্র তিন দিন পর তাদের এই কাজে নিয়োগ করা হয়েছিল।

“আমরা বাড়িতে ২৫ ঘণ্টা তালাবদ্ধ থাকি”

গাঁজা খেতে কাজ করা বেশিরভাগ অভিবাসী জানিয়েছেন, এই কাজ অত্যন্ত ‘বিপজ্জনক’।

একদিকে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া, অন্যদিকে মাদকপাচারে জড়িত অন্যান্য অপরাধী সংগঠনের সদস্যদের দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকির মধ্যে থাকেন অভিবাসীরা ।

পড়ুন>>যুক্তরাজ্যে ‘নিয়ন্ত্রিত’ অভিবাসনের ঘোষণা

ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম টেলিগ্রাফকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এক অভিবাসী জানান, “তারা আপনার কাজ থেকে মাদক ছিনিয়ে নিতে সর্বশক্তি দিয়ে চেষ্টা করবে এবং প্রতিদ্বন্দ্বী পাচারচক্রগুলি এক সপ্তাহ ধরে করা সব কাজ কেড়ে নেবে।”

প্রতিদ্বন্দ্বী মাদক পাচারচক্রগুলোর আক্রমণের ব্যাপারে তিনি আরো জানান, “তারা আঘাতের মাধ্যমে পঙ্গু করে দেয়। চোখে অ্যাসিড ছুঁড়ে মারে। এভাবে এসব জায়গায় কাজ করা একজন ব্যক্তি মারা যেতে পারে।”

গাঁজা খেতে অনথিভুক্ত শ্রমিকরা কীভাবে কাজ করেন, সেটি বর্ণনা করতে গিয়ে এক অভিবাসী জানান, “আমরা একটি বাড়িতে ২৪ ঘণ্টা তালাবদ্ধ থাকি। আমরা গাঁজা গাছে পানি দিই। তাপমাত্রা বেশি হলে আলো নিভিয়ে দিই। আর আবহাওয়া ঠান্ডা হলে গাছের উপর থাকা বৈদ্যুতিক আলোর তাপমাত্রা বাড়িয়ে দিই। এই গাছগুলি বেড়ে উঠতে ৫৫ থেকে ৬০ দিন সময় লাগে।”

তবে এই কাজে অভিবাসীদের যতই বিপদ থাকুক, যতই বাধ্য করা হোক না কেন আলবেনীয়রা এটা করেন। এই অবৈধ কাজের মাধ্যমে তারা ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিতে গিয়ে ধার করা অর্থ ফেরত দিতে পারেন। 

আলবেনীয় টেলিভিশনের প্রতিবেদনে এক অভিবাসী জানান, তিনি দেশে থাকা আত্মীয়দের কাছ থেকে ঋণ করে চুক্তিবদ্ধ হয়ে একজন কুর্দি পাচারকারীকে চ্যানেল পাড়ি দিতে প্রায় পাঁচ হাজার ৮০০ ইউরো বা পাঁচ লাখ ৮০ হাজার টাকা দিয়েছেন। 

আরও পড়ুন>>যুক্তরাজ্যের রুয়ান্ডা পরিকল্পনা: আত্মহত্যার ঝুঁকিতে আশ্রয়প্রার্থীরা

যদিও প্রতিবেদনে শুধুমাত্র আলবেনীয় অভিবাসীদের কথা বলা হয়েছে তবে যুক্তরাজ্যে কেবল আলবেনীয়রাই এই কাজে জড়িত নয়।

এনজিও ইচিপিএটির একটি প্রতিবেদনে দেখা গিয়েছে, ভিয়েতনাম, সুদান, রোমানিয়া, ইরিত্রিয়া, আফগানিস্তান, ইরান, ইরাক এবং নাইজেরিয়া থেকে আসা কিশোর ও তরুণ অভিবাসীদেরও যুক্তরাজ্যের একাধিক অবৈধ গাঁজা খেতে কাজ করতে বাধ্য করা হয়। 

অভিবাসন সংস্থা রিফিউজি কাউন্সিল জানায়, “যেসব তরুণ ও শিশুরা যুক্তরাজ্যে একা আসে তারা বিশেষভাবে ঝুঁকতে থাকে। আমরা জানি যে অনেক গ্যাং অভিবাসী শিশুদের টার্গেট করে।”


এমএইউ/আরকেসি


 

অন্যান্য প্রতিবেদন