ফ্রান্সে আশ্রয়প্রার্থীদের মাসিক ভাতা খরচের জন্য এই কার্ডটি প্রদান করে ফরাসি অভিবাসন বিষয়ক দপ্তর অফি। ছবি: টুইটার
ফ্রান্সে আশ্রয়প্রার্থীদের মাসিক ভাতা খরচের জন্য এই কার্ডটি প্রদান করে ফরাসি অভিবাসন বিষয়ক দপ্তর অফি। ছবি: টুইটার

ফ্রান্সে প্রতারণার মাধ্যমে আশ্রয়প্রার্থীদের সাহায্য ভাতার পাঁচ কোটি ৬০ লাখ টাকাও বেশি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ১২ ব্যক্তির বিরুদ্ধে ইল-দ্য-ফ্রন্সঁ বিভাগের একটি আদালতে বিচার শুরু হয়েছে। অভিযুক্তরা ইউক্রেন এবং মলদোভার দুটি দুটি অবৈধ অভিবাসন নেটওয়ার্কের সদস্য বলে প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে।

সোমবার, ফ্রান্সের মুলান অঞ্চলের ফৌজদারি আদালতে ১২ অভিযুক্তের বিরুদ্ধে বিচার শুরু হয়েছে। তারা দুটি অনিয়মিত অভিবাসন নেটওয়ার্কের সদস্য। এই দুই নেটওয়ার্কের একটি ইউক্রেনীয়, অন্যটি মলদোভার বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।

দুটি অবৈধ অভিবাসন নেটওয়ার্কের ১২ জন অভিযুক্ত সদস্যকে সোমবার, ১৭ অক্টোবর থেকে চলতি বৃহস্পতিবার পর্যন্ত নিয়মিত মুলানের ফৌজদারি আদালতে শুনানিতে হাজির করা হবে৷ তাদের বিরুদ্ধে একটি সংগঠিত চক্র তৈরি, অবৈধ প্রবেশ ও বসবাসে সহায়তার অভিযোগ আনা হয়েছে। 

অভিবাসন এবং ইন্টিগ্রেশন বিষয়ক ফরাসি দপ্তর (অফি) ফ্রান্সে আশ্রয় আবেদন করা প্রত্যকে ব্যক্তিকে বাসস্থান এবং খাবারের ব্যয় বাবদ খরচের জন্য এডিএ বা আদা নামক একটি কার্ড দিয়ে থাকে। 

আরও পড়ুন>>ফ্রান্সের অনিয়মিত অভিবাসনে সহায়তার দায়ে তিন ব্যক্তির কারাদণ্ড

অভিযুক্তরা ২০১৯ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে প্রতারণার মাধ্যমে ফ্রান্সের আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য বরাদ্দকৃত এই আদা কার্ডের পাঁচ লাখ ৬০ হাজার ইউরো বা পাঁচ কোটি ৬০ লাখ টকারও বেশি বেশি ভাতা আত্মসাৎ করেছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। 

তদন্ত অনুসারে, অভিযুক্তরা ইউক্রেন এবং মলদোভা থেকে অভিবাসীদের নিয়ে এসে ইল-দ্য-ফ্রন্সঁ বিভাগের সেইন-এ-মার্ন ডিপার্টমেন্টের বিভিন্ন ক্যাম্পে রাখে। পরবর্তীতে স্থানীয় প্রেফেকচুরে তাদের জন্য আশ্রয়ের আবেদন করা হয়। আশ্রয় আবেদন করা শেষ হলে অভিবাসীদের জোরপূর্বক তাদের মূল দেশে ফিরে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। ভুক্তভোগীদের বিনিময়ে তাদের মাসিক ভাতার মাত্র কয়েক মাসের অর্থ দেওয়া হয়। কিন্তু বাকি মাসগুলোর ভাতার সব অর্থ এই নেটওয়ার্ক দুটি আত্মসাৎ করে।

এভাবে তারা প্রায় পাঁচ কোটি ৬০ লাখ টাকারও বেশি অর্থ হাতিয়ে নেয়। 

উল্লেখ্য, ফ্রান্সে এডিএ বা আদা ভাতার অর্থের পরিমাণ আশ্রয়প্রার্থীদের পারিবারিক অবস্থায়ে (সন্তান সহ বা ছাড়া) অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়। একজন ব্যক্তি যদি সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রে থাকে সেক্ষেত্রে খাওয়া ও অন্যান্য খরচ বাবদ দৈনিক ৬,৮০ ইউরো বা ৬৮০ টাকা ভিত্তিতে প্রতি মাসে ১৯০ ইউরো বা ১৯ হাজার টাকা প্রদান করা হয়। এছাড়া দুই সন্তানের দম্পতিদের ক্ষেত্রে দৈনিক ১৭ ইউরো বা ১৭০০ টাকা ভিত্তিতে মাসিক ৪৭৬ ইউরো প্রদান করা হয়। 

পড়ুন>>ফ্রান্সে আশ্রয়কেন্দ্রের ধারণ ক্ষমতা বাড়বে প্রায় ছয় হাজার

অবশ্য কোনো আশ্রয়প্রার্থীকে যদি ফরাসি সরকার আশ্রয়কেন্দ্রে থাকার জায়গা দিতে ব্যর্থ হয় সেক্ষেত্রে আবাসন ব্যয় বাবদ অতিরিক্ত অর্থ দেওয়া হয়। যার ফলে সরকারি আবাসনে না থাকা একজন ব্যক্তির ক্ষেত্রে এই অর্থ মাসিক ৪০০ ইউরো বা ৪০ হাজার টাকা তথেকে শুরু করে অঞ্চল ভেদে ৪৫০ ইউরো বা ৪৫ হাজার টাকা পর্যন্ত হতে পারে। 

ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন এবং মানিগ্রামের মাধ্যমে অর্থ স্থানান্তর

আদালতে শুনানির প্রথম দিনে প্রথম পাঁচজন অভিযুক্ত জানায়, তারা শুধুমাত্র দেশের আশ্রয়প্রার্থীদের আদা বা এডিএ কার্ডগুলো সংরক্ষণ করেছিল কারণ তারা আশ্রয়ের আবেদন শেষ হওয়ার আগেই ফরাসি ভূখণ্ড ত্যাগ করেছিল। তাদে

র মতে, তাদের লক্ষ্য ছিল আদা কার্ডের অর্থ যেহেতু শুধু বিভিন্ন দোকানে খরচ করা যায় এবং নগদ অর্থ তোলা যায় না। সেক্ষেত্রে কার্ডের টাকা নগদ করে যেন ফ্রান্সে নতুন আসা অন্য আশ্রয়প্রার্থীদের সাহায্য করা যায়। 

আরও পড়ুন>>ফ্রান্সে নতুন একটি প্রশাসনিক আটককেন্দ্র চালুর ঘোষণা

অভিযুক্ত জিনাইদা নামে ব্যক্তির আইনজীবী ভেরা গোগুইদজে বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, “যেহেতু আদা কার্ড দিয়ে নগদ অর্থ তোলা যায় না সে কারণে এটি ভবিষ্যতের নতুন আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য বড় সমস্যা তৈরি করবে। মূলত এটি বুঝতে পেরেই অভিবাসীদের সুবিধার কথা ভেবে কার্ডের অর্থ নগদ করার বিকল্প পদ্ধতি বের করার চেষ্টা করেন তিনি। এখানে ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হওয়ার কোন উদ্দেশ্য আমার মক্কেলের ছিল না।”

৩৭ বছর বয়সি জিনাইদা নামের এই ইউক্রেনীয় নাগরিককে একটি নেটওয়ার্কের মূল হোতা বলে সন্দেহ করছে ফরাসি পুলিশ। 

এর আগে অভিযুক্তদের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে কয়েকশত আশ্রয় আবেদনের ফাইল, এডিএ কার্ড এবং এডিএ কার্ড সরবরাহের সার্টিফিকেট জব্দ করে ফরাসি প্রশাসন।

পড়ুন>>২০১১ সালে ভূমধ্যসাগরে অভিবাসী মৃত্যুর ঘটনায় ফ্রান্সে পুনঃতদন্ত

অনিয়মিত অভিবাসন দমন এবং অনথিভুক্ত বিদেশিদের কর্মসংস্থান বিষয়ক কেন্দ্রীয় ফরাসি দপ্তরের তদন্তকারীদের মতে, আত্নসাত করা অর্থের মোট পরিমাণ হবে পাঁচ লাখ ৬২ হাজার ৬৯৫ ইউরো। অবশ্য অভিযুক্তদের আইনজীবীরা এই সংখ্যা নিয়ে দ্বিমত পোষণ করেছেন।

হাতিয়ে নিয়ে অর্থের কিছু অংশ কার্ডগুলো ব্যবহার করে ফ্রান্সে ব্যয় করা হয়েছিল। বাকি অর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন এবং মানিগ্রামের মাধ্যমে ইউক্রেন এবং মলদোভায় পাঠানো হয়েছিল।


এমএইউ/আরকেসি





 

অন্যান্য প্রতিবেদন