মরক্কোর পুলিশ স্প্যানিশ ছিটমহল মেলিলার সীমান্তের কাছে ২৫ জন আফ্রিকান অভিবাসীকে গ্রেপ্তার করেছে। সীমান্ত পেরোতে গিয়ে জুন মাসে কমপক্ষে ২৩ জন প্রাণ হারান। একই ঘটনার সময় অভিবাসীদের অধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ করেছেন স্পেনের ন্যায়পাল।
এক কর্মকর্তা ২৫ জন অভিবাসী গ্রেপ্তারের ঘটনাটি জানিয়েছেন। বেআইনিভাবে মরক্কোতে প্রবেশ এবং নিরাপত্তা কর্মীদের বিরুদ্ধে সহিংসতার অভিযোগে আদালত ইতিমধ্যে কয়েক ডজন ব্যক্তিকে বড়সড় শাস্তির নির্দেশ দিয়েছে। এদের মধ্যে অনেকেই সুদানের নাগরিক।
একটি বিচার বিভাগীয় সূত্র ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানিয়েছে, সুদান এবং চাদ থেকে ২৫ অভিবাসীকে রোববার মেলিলার সঙ্গে স্প্যানিশ ভূখণ্ডের সীমান্তের কাছে গৌরাউগাউ বনাঞ্চল থেকে আটক করা হয়েছে।
কর্মকর্তা অভিবাসীদের গ্রেপ্তারের পর তাদের বিরুদ্ধে সহিংসতার অভিযোগ করেছেন। আগামী সোমবার সীমান্ত শহর নাদোরে বিচার হবে ওই অভিবাসীদের।
গৌরাউগাউ অস্থায়ী শিবিরটির পরিস্থিতি ভয়ানক। সুরক্ষিত মেলিলা সীমানা পেরোনোর চেষ্টার জন্য প্রস্তুতি নেয়ার আগে মধ্য ও দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আসা অভিবাসীরা এখানে আশ্রয় নেন।
অবৈধ অনুপ্রবেশের জন্য অভিবাসী গ্রেপ্তার
গত জুনে আফ্রিকার একদল অভিবাসী মরক্কোর নাদোর থেকে স্প্যানিশ ছিটমহল মেলিলাতে প্রবেশের চেষ্টা করলে তাদের দমন করতে মরক্কো ও স্পেনের কর্তৃপক্ষ মাত্রাতিরিক্ত শক্তি ব্যবহার করে বলে অভিযোগ উঠেছিল৷ সেই ঘটনায় অন্তত ২৩ ব্যক্তি প্রাণ হারান৷ সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে মাঝেমাঝেই এধরনের ঘটনা ঘটছে৷
যদিও মরক্কোর এএমডিএইচ অধিকার গোষ্ঠীর দেওয়া সংখ্যা বেশি। তারা দাবি করেছে, অন্তত ২৭ জন অভিবাসী ঘটনায় প্রাণ হারান।
এএমডিএইচ বলেছে, এপ্রিলে এক বছরব্যাপী কূটনৈতিক স্থবিরতা শেষ হওয়ার পরে মাদ্রিদ এবং রাবাতের মধ্যে নতুন করে সহযোগিতার ফলে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে।
ঘটনার পর থেকে, মরক্কো কয়েক ডজন অভিবাসীকে অবৈধ প্রবেশ এবং অপরাধী চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে সাজা দিয়েছে। নাদোরের শীর্ষ আদালত আপিলের ক্ষেত্রে বড়সড় জরিমানা জারি করেছে।
এএমডিএইচ অধিকার গোষ্ঠীর নাডোর প্রধান ওমর নাজি বলেন, "মরক্কো ইউরোপীয় অভিবাসন নীতির জন্য পুলিশ হিসাবে কাজ করছে।" কর্তৃপক্ষের " এই আশ্রয়প্রার্থীদের গ্রেপ্তার না করে রক্ষা করা উচিত ছিল।"
আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে, অভিবাসীদের আশ্রয় দাবি করার অধিকার রয়েছে এবং সম্ভাব্য আশ্রয়প্রার্থীরা যেখানে বিপদে পড়তে পারেন, সেখানে ফেরত পাঠানো নিষিদ্ধ।

স্প্যানিশ ন্যায়পাল বলেন, কর্তৃপক্ষ অভিবাসী অধিকার লঙ্ঘন করেছে। সাম্প্রতিক রিপোর্টে স্পেনের ন্যায়পাল বলেন, জুন মাসে মরক্কো থেকে কয়েকশ অভিবাসীর প্রবেশের চেষ্টার প্রাথমিক তদন্তে কর্তৃপক্ষ মেলিলা সীমান্তে কমপক্ষে ৪৭০ জন অভিবাসীকে এমনভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে যা জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক আইনি বিধান মেনে করা হয়নি।
তিনি শুক্রবার বলেন, স্পেন অভিবাসীদের আইনি অধিকারকে সম্মান করতে ব্যর্থ হয়েছে। আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে, অভিবাসীদের আশ্রয় দাবি করার অধিকার রয়েছে এবং সম্ভাব্য আশ্রয়প্রার্থীরা যেখানে বিপদে পড়তে পারে সেখানে তাদের ফেরত পাঠানো নিষিদ্ধ।
স্পেনের ন্যায়পাল অ্যাঞ্জেল গ্যাবিলোন্দো বলেন, স্প্যানিশ কর্তৃপক্ষ সেদিন "৪৭০ জনের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক আইনি অধিকার বিবেচনা না করেই সীমান্তে প্রবেশাধিকারে বাধা দিয়েছিল।"
তিনি বলেন, স্পেনের সাংবিধানিক আদালত রায় দিয়েছে যে সে দেশের সীমান্তে প্রবেশের যে কোনও প্রত্যাখ্যান নির্দিষ্ট ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রয়োজ্য। তবে সম্পূর্ণ গোষ্ঠীর জন্য নয়। পুরো বিষয়টা আদালতের তত্ত্বাবধানে করা উচিত, যা সেদিন করা হয়নি। গ্যাবিলোন্দো মৃত্যুর ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করেন।
স্পেনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় অভিবাসী প্রত্যাখান নিয়ে যা বলছে
এএফপি-র সঙ্গে যোগাযোগ করে, স্পেনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বলেন, ২৪ জুন মেলিলায় প্রবেশের সমস্ত "প্রত্যাখ্যান" "আইন অনুসারে কঠোরভাবে পরিচালিত হয়েছে।"
মুখপাত্র জোর দেন, ন্যায়পালের অনুসন্ধানগুলি "অস্থায়ী" এবং স্প্যানিশ নিরাপত্তা বাহিনীর প্রতি মন্ত্রণালয়ের "দৃঢ় সমর্থন"-এর কথা জানান তিনি।
এক পর্যায়ে বেড়াটি ভেঙে পড়ে, অনেক অভিবাসীকে কয়েক মিটার উচ্চতা থেকে মাটিতে পড়ে যান। অন্যান্য ভিডিওতে দেখা গিয়েছে, অনেকে আর নড়াচড়া করছে না, কারও বা রক্তপাত হচ্ছে। কারও ক্ষেত্রে হয়তো সবেমাত্র নড়াচড়া করছে, ফলে মরক্কোর পুলিশ তাদের উপরে দাঁড়িয়ে ছিল।
মাদ্রিদ ও রাবাতের মধ্যে কূটনৈতিক বিরোধ শেষ হওয়ার পর থেকেই মরক্কো পুলিশ স্পেনে প্রবেশ ইচ্ছুক অনিয়মিত অভিবাসীদের উপর নতুন করে গ্রেপ্তার অভিযান জোরদার করেছে।
আরকেসি/কেএম (এএফপি)