ভারত মহাসাগরের ব্রিটিশ অধিকৃত দ্বীপ চাগোস আইল্যান্ডসে আশ্রয় প্রার্থনা করা তামিলভাষী শরণার্থীদের রুয়ান্ডা-স্টাইলে তৃতীয় কোনো দেশে পাঠানোর পরিকল্পনা করছে যুক্তরাজ্য৷
দিয়েগো গার্সিয়ার ব্রিটিশ অধিকৃত এই দ্বীপপুঞ্জটির ক্ষেত্রফল ২৭ কিলোমিটার৷ দ্বীপপুঞ্জে অবস্থিত ইঙ্গো-মার্কিন যৌথ সামরিক ঘাঁটির মধ্যে একটি বেড়া দেয়া এলাকায় এখন বাস করছেন ১৭৩ জন তামিল আশ্রয়প্রার্থী৷ তারা চাগোস দ্বীপপুঞ্জে আশ্রয়প্রার্থনা করলেও শরণার্থীদের আফ্রিকার দেশ রুয়ান্ডার পাঠানোর মতো করেই এদেরও অন্য কোনো দেশে পাঠানোর চিন্তা করছে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ৷
চাগোসে ন্যূনতম স্বাস্থ্যসেবা এবং শিশুদের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অনুপস্থিতি নিয়ে এরই মধ্যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা৷ তাঁবুতে বাস করা আশ্রয়প্রার্থীদের অনেকে এক বছর ধরে দ্বীপটিতে বাস করছেন৷ পরিস্থিতির উন্নতির দাবিতে এ বছরের শুরুতে বেশ কয়েকজন আশ্রয়প্রার্থী অনশনও করেছিলেন৷
শ্রীলঙ্কায় ফেরত যেতে না পারলে তাদের অন্য কোনো দেশে পাঠানো হবে বলে শরণার্থীদের জানিয়েছেন ব্রিটিশ সরকারের আইনজীবীরা৷ তবে কোন দেশে তাদের পাঠানো হবে, সেটি এখনও প্রকাশ করা হয়নি৷
সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান জানিয়েছে, যুক্তরাজ্যের মন্ত্রীরা রুয়ান্ডাসহ অন্য নানা দেশে যুক্তরাজ্যে আশ্রয়প্রার্থনা করা অভিবাসীদের ফেরত পাঠানোর বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছেন৷
দ্বীপপুঞ্জটিতে প্রথম তামিল শরণার্থী আসেন ২০২১ সালের ৩ অক্টোবর৷ এরপর দিয়েগো গার্সিয়ায় আরো চারটি নৌকা শরণার্থীদের নিয়ে ভিড়েছে৷ ব্রিটিশ ল ফার্ম লেই ডে দ্বীপটিতে বাস করা আশ্রয়প্রার্থীদের ৮১ জনকে প্রতিনিধিত্ব করেন৷ ফার্মটির তথ্য অনুযায়ী, এই নৌকাগুলোর অন্তত দুটি মহাসাগরে বিপদে পড়ার পর ব্রিটিশ সৈন্যরাই তাদেরকে দিয়েগো গার্সিয়ায় নিয়ে আসেন৷
আগস্ট এবং অক্টোবরে আরো দুটি নৌকা আসে দ্বীপপুঞ্জটিতে৷ কিন্তু সেগুলোকে পরবর্তীতে ন্যূনতম নিরাপত্তা সরঞ্জামসহ আবার সাগরে ফেরত পাঠানো হয়৷ নৌকাগুলোতে বেশ কয়েকজন অপ্রাপ্তবয়স্কও ছিলেন বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা৷
এই নৌকাগুলোর একটি তিন সপ্তাহ সাগরে ভাসার পর ৪৬ অভিবাসী নিয়ে ফরাসি রিইউনিয়ন টেরিটরিতে পৌঁছায়৷ অন্য নৌকাটি ৩৫ জন অভিবাসী নিয়ে ইঞ্জিনে সমস্যার কারণে আবার ডিয়েগো গার্সিয়াতে ফেরত আসে৷

১৯৫১ সালের শরণার্থী কনভেনশনের অধীন নয় দিয়েগো গার্সিয়া
যুক্তরাজ্য ১৯৫১ সালে গৃহীত শরণার্থী কনভেনশনে স্বাক্ষর করেছিল৷ এর অধীনে নিজ দেশে হুমকিতে থাকা অভিবাসীরা ব্রিটিশ সীমানায় এলে তাদের আশ্রয় আবেদনের অধিকার দিতে বাধ্য যুক্তরাজ্য৷ কিন্তু দিয়েগো গার্সিয়াতে শরণার্থী বিষয়ক ইউরোপিয়ান কনভেনশন বা অন্য আন্তর্জাতিক কনভেনশন কার্যকর নয়৷
লেই ডে ফার্মের আইনজীবী টেসা গ্রেগরি দ্য গার্ডিয়ানকে বলেন, কনভেনশনের অধীনে না থাকার সুযোগ নিয়ে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ এমন কিছু ব্যবস্থা নিচ্ছে দ্বীপটিতে, যার বিরুদ্ধে শরণার্থীদের আপিলের সুযোগও থাকছে না৷
যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মে মাসে তামিল শরণার্থীদের করা একটি মামলায় হেরেছে৷ তামিল শরণার্থীদের শ্রীলঙ্কায় ফেরত পাঠানো হলে তারা ঝুঁকিতে পড়তে পারে বলে রায় দেয় একটি ট্রাইব্যুনাল৷
শ্রীলঙ্কায় অর্থনৈতিক পরিস্থিতির এখনো উন্নতি হয়নি এবং রাজনৈতিক অস্থিরতাও চলছে৷ দিয়েগো গার্সিয়ার বেশিরভাগ শরণার্থীই সংখ্যালঘু তামিল জনগোষ্ঠীর৷ তাদের দাবি, সংখ্যাগুরু সিংহলিজ প্রভাবিত বর্তমান শ্রীলঙ্কান সরকারের কারণে তাদের নিপীড়ণের শিকার হতে হচ্ছে৷
এডিকে/আরকেসি