যুক্তরাজ্যে আলবেনীয় অভিবাসীদের আগমনে সহায়তাকারী একটি মানবপাচারকারী সংগঠনের সাথে জড়িত সন্দেহে একজন আলবেনীয় নারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পাশাপাশি যৌথ অভিযানে একটি মানবপাচার নেটওয়ার্ক ভেঙে দেয়ার দাবি করেছে লন্ডন ও মাদ্রিদ কর্তৃপক্ষ।
বুধবার ১৯ অক্টোবর, ৩১ বছর বয়সি একজন আলবেনীয় নারী অভিবাসীকে গ্রেপ্তার করেছে যুক্তরাজ্য কর্তৃপক্ষ।
যুক্তরাজ্যের জাতীয় অপরাধ সংস্থা (এনসিএ) কর্মকর্তা জ্যাক বিয়ার এক বিবৃতিতে বলেছেন, “যুক্তরাজ্যে আলবেনিয়ান নাগরিকদের অবৈধ আগমনের সুবিধার্থে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করা আলবেনীয় অপরাধী সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে পরিচালিত তদন্তের অংশ হিসেবে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।”
অন্যদিকে এই নারীকে আটক ছাড়াও চলতি মাসের 8 অক্টোবর, যুক্তরাজ্যের এনসিএ এবং স্প্যানিশ গার্ডিয়া সিভিল পরিচালিত এক যৌথ অভিযানে আলবেনীয় একটি বড় মানবপাচার নেটওয়ার্ক ভেঙে দেওয়ার দাবি করা হয়েছে। অভিযানে সাত জনকে আটক করা হয়।
আরও পড়ুন>>ইউরোপের পাঁচ দেশে আটক ৩৯ সন্দেহভাজন মানবপাচারকারী
তদন্তকারী সংস্থা বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানিয়েছে, এই নেটওয়ার্কটি ২০১৪ সাল থেকে অপরাধী কার্যক্রমে সক্রিয়। এটি উত্তর স্পেন থেকে অভিবাসীদের কার্গো জাহাজ অথবা ফেরি দিয়ে অবৈধভাবে যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করতে সহায়তা করতো৷ এ কাজে জনপ্রতি তিন থেকে ১৫ হাজার ইউরো পর্যন্ত দাবি করত তারা।
এনসিএ বিবৃতিতে বলেছে, “এই অপরাধী সংগঠনগুলোর কার্যক্রম আন্তর্জাতিক। সে কারণে এগুলোকে দমন করতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা অপরিহার্য ছিল।”
“পাচারকারীদের আগ্রহ অর্থ”
চলতি বছরের ৫ জুলাই, ইংলিশ চ্যানেল পেরিয়ে অনিয়মিত অভিবাসীদের বেআইনিভাবে ইংল্যান্ডে নিয়ে আসা মানবপাচার নেটওয়ার্কের খোঁজে পাঁচটি ইউরোপীয় দেশে একটি আন্তর্জাতিক গ্রেপ্তার অভিযান পরিচালনা করা হয়।
পড়ুন>>মানবপাচার রোধে ন্যূনতম মানে পৌঁছাতে পারেনি বাংলাদেশ: মার্কিন প্রতিবেদন
জার্মানি, ফ্রান্স, বেলজিয়াম, যুক্তরাজ্য এবং নেদারল্যান্ডস পুলিশের সমন্বয়ে এই যৌথ অভিযান হয়েছে৷
ইউরোপোলের কর্মকর্তা ইনা মিহাইলোভা বলেন, “আনুমানিকভাবে এই নেটওয়ার্কটি নৌকায় চ্যানেল পার হয়ে আসা অভিবাসী পাচারের প্রায় অর্ধেক বাজারের প্রতিনিধিত্ব করে। অনিয়মিত পারাপারের জন্য তারা গড়ে জনপ্রতি আড়াই হাজার ইউরো থেকে সাড়ে তিন হাজার অবৈধ মুনাফা করত।
বুধবার এনসিএ-র জ্যাক বিয়ার বলেন, “এসব ক্ষেত্রে দেখা গেছে পাচারকারীরা প্রায়শই শুধুমাত্র অর্থের প্রতি আগ্রহী, তারা অভিবাসীদের নিরাপত্তা বা অন্য কোন সমস্যার কথা চিন্তা করে না।”
আরও পড়ুন>>মানব পাচারের অভিযোগ ইটালিতে দুই বাংলাদেশি আটক
বুধবারের অভিযানে আটক আলবেনীয় নারীকে বিচারের মুখোমুখি করার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে সদ্য পদত্যাগ করা ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুয়েলা ব্র্যাভারম্যান। তিনি বলেন, “এই অভিযান অনিয়মিত অভিবাসন নিয়ে সরকারের প্রতিশ্রুতি নিয়ে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে।”
একই দিনে সুয়েলা ব্র্যাভারম্যান বর্তমান সরকার থেকে পদত্যাগ করলেও সরকারের পদক্ষেপে তার অভিবাসন নীতিই অনুসরণ করা হচ্ছে বলে মনে করছে যুক্তরাজ্যের অভিবাসন সংশ্লিষ্টরা।
তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেন, “সরকার অভিবাসীদের সামগ্রিক সংখ্যা হ্রাস করা এবং অবৈধ অভিবাসন বন্ধ করার মতো গুরুতর প্রতিশ্রুতিগুলোকে সম্মান করছে।”
পড়ুন>>“প্রিয়জনদের বাঁচাতে মানবপাচারের কাজে অনেক অভিযুক্ত”
চলতি বছরের আগস্ট মাসে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০২২ সালে এ পর্যন্ত সর্বাধিক ২,১৬৫ জন আলবেনীয় নাগরিক অবৈধভাবে চ্যানেল অতিক্রম করেছে। ২০২১ সালের পুরো সময়ে এই সংখ্যাটি ছিল ৮১৫ জন।
এমএইউ/এডিকে