ফ্রান্স সহ ইউরোপে আসা অ-ইউরোপীয় তৃতীয় দেশের নারী অভিবাসীদের মধ্যে বাড়ছে পারিবারিক সহিসংতার শিকার হওয়ার হার। নির্যাতনের শিকার অনেক নারীই ভাষা ও আইনি প্রতিবন্ধকার কারণে প্রশাসনের দ্বারস্থ হতে পারেন না। সমস্যা সমাধানে অভিবাসীদের নারীদের জন্য ফ্রান্সে চালু হয়েছে ‘উইমেন ফর উইমেন ফ্রান্স’ নামে একটি বহুভাষী সহায়তা প্ল্যাটফর্ম।
২০২২ সালের গ্রীষ্মের শুরুতে ফ্রান্সে যাত্রা শুরু করেছে ‘উইমেন ফর উইমেন ফান্স’ নামে একটি বহুভাষী সংস্থা ও প্ল্যাটফর্ম।
পারিবারিক সহিসংতার শিকার নারী অভিবাসীরা এই প্লাটফর্মের সাহায্যে অধিকার নিয়ে সচেতন হতে সবরকম তথ্য পাবেন এবং করা এবং সহিংস স্বামীদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিতে পারবেন। এই প্লাটফর্মের ওয়েবসাইটটি মোট ১৬টি ভাষায় পাওয়া যাচ্ছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
ফ্রান্সে এসে স্বামীর কাছে নির্যাতনের শিকার হওয়া অভিবাসীদের মধ্যে একজন টিউনিশিয়া থেকে পারিবারিক ভিসায় ফ্রান্সে আসা নারী অভিবাসী আলিয়া।
আরও পড়ুন>>ফ্রান্সে অনিয়মিত অভিবাসনে সহায়তার দায়ে তিন ব্যক্তির কারাদণ্ড
তিনি ফ্রান্সে আসার আগে স্বামীর সঙ্গে সংসার গড়তে উন্মুখ ছিলেন। কিন্তু এক সময় গিয়ে দেখতে পান তার স্বামী হিংস্র আচরণ করছেন। এক সময় নিজেকে রক্ষার জন্য স্বামীকে ছেড়ে যেতে বাধ্য হোন এই নারী।
তিনি ইনফোমাইগ্রেন্টসকে বলেন, “আমরা উত্তর ফ্রান্সের পা-দ্য-কালে ডিপার্টমেন্টে থাকতাম। ২০১৮ সালের ২৪ এপ্রিল আমি পালিয়ে গিয়ে ফরাসি সরকারের সামাজিক আশ্রয়ে সেবায় উঠি। সামাজিক আশ্রয় দপ্তর সে সময় আমাকে ফ্রান্সে বৈধভাবে থাকার ব্যাপারে সকল সহায়তা প্রদান করে। তারা আমার পারিবারিক সহিংসতার শিকার হওয়া্র সকল প্রমাণ ব্যাখ্যা করে প্রেফেকচুরে বসবাসের অনুমতির জন্য আবেদন করলে রেসিডেন্ট পারমিট প্রদান করা হয়।”
পড়ুন>>ফ্রান্সে আশ্রয়কেন্দ্রের ধারণ ক্ষমতা বাড়বে প্রায় ছয় হাজার
দাম্পত্য সহিংসতার ব্যাপারে এই তরুণী তার স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করার সিদ্ধান্ত নিলেও সেটি থানায় নাকচ করে দেয়া হয়।
আলিয়া বিশ্বাস করেন, তিনি তার সাবেক স্বামীর মারধরের তীব্রতা সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করতে ব্যর্থ হওয়ার কারণে এটি হয়েছিল।
তিনি জানান, “আমি এই ঘটনায় অত্যন্ত বিরক্ত ছিলাম। তখনও খুব ভালো ফরাসি বলতে পারতাম না। আমি আমার পুরো ঘটনা ভালোভাবে ব্যাখ্যা করতে পারিনি। যার ফলে, সে সময় প্রেফেকচুর আমার দুর্বল সাক্ষ্যের কারণে আমার সাবেক স্বামীর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে অপারগতা জানিয়েছিল।
আরও পড়ুন>>ফ্রান্সে বহিষ্কারের ঝুঁকিতে এক এইচআইভি-পজিটিভ অভিবাসী
সেই সময়ে আলিয়াকে তার অভিযোগ দায়ের করার এবং সহিংসতার শিকার হওয়ার প্রমাণ সংগ্রহের ব্যাপারে আইনি পরামর্শের প্রয়োজন ছিল। আলিয়ার মতো, যেসব নারী অভিবাসীরা ভালভাবে ফরাসি ভাষায় কথা বলতে পারেন না এবং তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন নয় এমন নারীরা প্রায়ই ন্যায়বিচার পেতে অন্যদের তুলনায় বেশি অসুবিধায় পড়েন।
ফরাসি জাতীয় পুলিশ এবং জেন্ডারমেরির সঙ্গে সহযোগিতা
‘উইমেন ফর উইমেন ফ্রান্স’ নামে এই সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা সারাহ ম্যাকগ্রা। এই অস্ট্রেলীয় নাগরিক দীর্ঘদিন ধরে ফ্রান্সে রয়েছেন। তিনি ২০১৮ সালে নারীদের আত্মরক্ষার জন্য এবং সাহায্যের সন্ধানে সহায়তা সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন।
ঠিক চার বছর পরে, ২০২২ সালের গ্রীষ্মের শুরুতে এই সমিতির ওয়েবসাইট চালুর মাধ্যমে এটিকে একটি প্ল্যাটফর্মে রূপ দেয়া হয়।
পড়ুন>>কাবুল পতনের এক বছর: স্বজনদের চিন্তায় উদ্বিগ্ন আফগান শরণার্থীরা
এই সংস্থাটি খুব দ্রুত পারিবারিক ও দাম্পত্য সহিংসতার শিকার বিদেশি নারীদের সুরক্ষার জন্য একটি অপরিহার্য ও বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।
এই সংস্থার ওয়েবসাইটে বর্তমানে ফরাসি, ইংরেজি, আরবি এবং তামিলসহ ১৬টি ভাষায় তথ্য সরবরাহ করা হচ্ছে। পুলিশ কর্মকর্তা, আইনজীবী, পরামর্শদাতাদের মতো বিভিন্ন খাতের বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে তথ্য যাচাই করার পর সংস্থার ওয়েবসাইটে সরবারহ করা হয়। বিদেশি নারী অভিবাসীরা শিশু সন্তানদের যত্ন, যৌন স্বাস্থ্য, আবাসন, আর্থিক স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা সহ বহু প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাবেন ‘উইমেন ফর উইমেন প্লাটফর্মে।
আরও পড়ুন>>ইইউ দেশগুলোর স্থানীয় নির্বাচনে অভিবাসীদের ভোটাধিকার
সারাহ ম্যাকগ্রা ইনফোমাইগ্রেন্টসকে বলেন, “অভিযোগ ও মামলা দায়ের সংক্রান্ত ব্যাপারে আমরা জাতীয় পুলিশ এবং ফরাসি পুলিশের জেন্ডারমেরি শাখার সঙ্গে কাজ করছি। যাতে ভুক্তভোগী বিদেশি মহিলাদের আরও উন্নত সেবা দেয়া সম্ভব হয়। মূলত যেসব নারীরা ফরাসি ভাষা জানেন না তাদেরকে তাদের ভাষায় তাদের অভিযোগ থানায় উপস্থান করানোর মাধ্যমে এই সহযোগিতা বাস্তবায়ন সম্ভব হচ্ছে।
সারাহ ম্যাকগ্রা এবং তার দল পারিবারিক সহিংসতার শিকার নারীদের উপর চালানো একটি সমীক্ষার উপর ভিত্তি করে উইমেন ফর উইমেন প্ল্যাটফর্ম শুরুর কথা চিন্তা করেন।
এই প্ল্যাটফর্মে সহিংসতার কারণে আলাদা হওয়া নারীদের সবরকম প্রশাসনিক সহায়তার তথ্য লিপিবদ্ধ করা হয়। যেমন, আলাদা ব্যাংক হিসাব খোলা, সরকারি সহায়তার অর্থ পাওয়ার প্রক্রিয়া, আইনি খরচের ব্যাপারে তথ্য জানা ইত্যাদি।
সংস্থাটির বহুভাষী প্লাটফর্ম ভিজিট করতে এই লিংকে https://www.womenforwomenfrance.org/fr ক্লিক করুন।
মূল প্রতিবেদন জুলিয়া দ্যুমো। ফরাসি থেকে ইনফোমাইগ্রেন্টস বাংলায় ভাষান্তর মোহাম্মদ আরিফ উল্লাহ।
এমএই/আরকেসি