সাম্প্রতিক মাসগুলোতে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের তহবিল ঘাটতির ফলে শরণার্থীরা এবং বাধ্য হয়ে বাস্তুচ্যুত হওয়া মানুষদের সহায়তায় টান পড়েছে৷ সারাবিশ্বে বেশ কয়েকটি সহায়তামূলক কাজে কাটছাঁট করতে বাধ্য হয়েছে ইউএনএইচসিআর৷ এর ফলে বাংলাদেশ ও কলম্বিয়ার মতো দেশেও পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে বলে উল্লেখ করেছে তারা৷
বছর শেষের আগে কমপক্ষে সাত হাজার ১৪১ কোটি (৭০০ মিলিয়ন ডলার) টাকা না পেলে পরবর্তী দফায় সহায়তায় কাটছাঁট করতে পারে ইউএনএইচসিআর৷ যার ফলে অসংখ্য মানুষ বিপর্যয়ের মুখে পড়তে পারেন৷
ইতিমধ্যে, তহবিল মোকাবিলা করতে প্রয়োজনীয় প্রোগ্রামগুলিকে পিছিয়ে দিতে হয়েছে৷
উগান্ডায় ইবোলা প্রাদুর্ভাব শুরু হতে যাচ্ছে৷ কিন্তু ইউএনএইচসিআর মারাত্মক রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য যথেষ্ট সাবান এবং স্বাস্থ্যবিধি কিট সংগ্রহ করতে অক্ষম৷ আফ্রিকার দেশ চাদে জ্বালানি সংকটের কারণে ক্যাম্পে পানি সরবরাহ বন্ধ করা হয়েছে৷ লেবাননে ৭০ হাজার অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ শরণার্থী পরিবার আর ইউএনএইচসিআর থেকে তাদের নিরাপত্তা সংক্রান্ত সহায়তা পাচ্ছে না৷
ইউএনএইচসিআরের বহিরাগত সম্পর্ক বিভাগের পরিচালক ডমিনিক হাইড বলেছেন, ‘‘এটি বাস্তব আপৎকালীন পরিস্থিতি৷ যুদ্ধ ও সহিংসতার পাশাপাশি অর্থনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক সমস্যার ফলে কারণে অর্থায়নের চাহিদা বাড়ছে৷ যদিও দাতারা আবার উদার হয়েছেন৷ বিশেষ করে ইউক্রেনে যুদ্ধের কারণে তহবিল এসেছে৷ কিন্তু অমীমাংসিত সংকটের মানে হলো এই অর্থায়নও আসলে সারাবিশ্বের লাখ লাখ বিপন্ন মানুষের চাহিদা পূরণ করছে না৷’’
আশঙ্কার অনেকগুলো দিক রয়েছে৷ যেমন, কাটছাঁটের ফলে পরিবারগুলি নিয়ন্ত্রণহীন ঋণ নিতে পারে৷ বাচ্চাদের স্কুলে পাঠানোর পরিবর্তে কাজে পাঠানোর আশঙ্কা রয়েছে৷ বাড়িতে বাড়তি খাওয়ার খরচ কমাতে বাল্যবিবাহের ঝোঁক বাড়তে পারে৷ হতাশার ফলে পরিবারগুলিকে আরো দূরের দেশে বিপজ্জনক যাত্রা শুরু করতে বাধ্য হতে পারে৷
মধ্যপ্রাচ্যে শীতকাল আসার সঙ্গে সঙ্গে তহবিল ঘাটতি নিয়ে উদ্বিগ্ন ইউএনএইচসিআর৷ নগদ সহায়তার আরো হ্রাস লেবানন, জর্ডন এবং ইয়েমেনের ১০ লাখ ৭০ হাজার মানুষকে প্রভাবিত করবে৷ কারণ হাজার হাজার পরিবার হিটিং সিস্টেম বা গরম কাপড়ের খরচ মেটাতে অক্ষম৷
অন্যান্য দেশের বাস্তুচ্যুত মানুষরাও তহবিল ঘাটতির ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন৷ কারণ অপূরণীয় তহবিল চাহিদার ফলে ইথিওপিয়াতে ধর্ষণের পর বেঁচে ফেরা মা ও শিশুদের যত্ন, বা কঙ্গোতে বাস্তুচ্যুত লোকেদের আশ্রয়ের জন্য পরিষেবাগুলিতে কাটছাঁট করা হবে৷
হাইড বলেন, ‘‘এই বছর এবং পরে আরো দুর্ভোগ হতে পারে৷ তবে দ্রুত আন্তর্জাতিক পদক্ষেপের মাধ্যমে তা কমানো যেতে পারে৷’’
বিশেষ করে বেসরকারি কোম্পানি, ফাউন্ডেশন এবং ব্যক্তিরা এই বছর এজেন্সিকে রেকর্ড মাত্রায় তহবিল প্রদান করেছে৷ ইউএনএইচসিআর স্পষ্টভাবে জানিয়েছে, ইউক্রেন সংকটের প্রবল প্রভাব বিশ্বজুড়ে ন্যায়সঙ্গতভাবে তহবিল বিতরণে প্রভাব ফেলেছে৷
বছরের শুরুতে বিশেষত ১২টি কম তহবিলযুক্ত অপারেশনে তহবিলের ব্যবধান তুলে ধরার পর থেকে তারা অতিরিক্ত চার হাজার ৫৬ কোটি টাকা অর্থায়ন পেয়েছে৷ তবুও চাহিদা বাড়তে থাকে এবং ঘাটতি রয়ে গিয়েছে প্রায় সাত হাজার ১৪১ কোটি টাকা৷
হাইড অনুরোধ করেছেন, ‘‘আমি সমস্ত দাতাদের কাছে আবেদন করছি, আগামী সপ্তাহগুলিতে এই সংস্থান খুঁজে বের করে আমাদের সাহায্য করুন৷ লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন এই অর্থায়নের উপর নির্ভরশীল৷’’
আরকেসি/আরসিআর (ইউএনএইচসিআর)