ভূমধ্যসাগরের ছোট দ্বীপ ল্যাম্পেদুসায় জনসংখ্যা বেড়েছে৷ ভূমধ্যসাগর পেরিয়ে লিবিয়া, টিউনিশিয়া বা উত্তর আফ্রিকার একাধিক দেশ থেকে অনেকে মানব পাচারকারীর মাধ্যমে ইউরোপে পাড়ি দেন। তবে যুদ্ধ নয়, বেশিরভাগই পালিয়ে আসেন দারিদ্র্য এবং নিপীড়ন থেকে বাঁচতে। ইটালির দ্বীপ ল্যাম্পেদুসায় অভিবাসীদের ভিড় তাই ক্রমশই বাড়ছে।
নৌকাডুবি থেকে বেঁচে ফেরা এক অভিবাসী ইব্রাহিম বলেন, "দুটো জিনিস আমরা কখনো ঠিক করতে পারি না। সেগুলো হলো জীবন এবং মৃত্যু।" ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবিতে ইব্রাহিমের স্ত্রী এবং ভাইয়ের মৃত্যু হয়। আইভোরিয়ান এই নাগরিককে ল্যাম্পেদুসার অভিবাসী কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে।
তিনি বলেন, "এটা ভাগ্য।" ইটালির ল্যাম্পেদুসার এই অভিবাসী বেঁচে ফেরার পর উদ্ধারকেন্দ্রের খাট থেকে পর্যন্ত নামতে পারেননি। দুই-তিন দিন কিছু খেতে পারেননি।
স্ত্রী, ভাই এবং এক বন্ধুকে হারিয়েছেন ইব্রাহিম। প্রায় ৩০ জন অভিবাসনপ্রত্যাশীকে নিয়ে আসার পথে শুক্রবার নৌকাটি ডুবে যায়।
সহযাত্রী এক আইভোরিয়ানকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন ইব্রাহিম। বাইশ বছরের সেই তরুণ তার বন্ধুকে সমুদ্রে ভেসে যেতে দেখে কিছু করতে পারেননি।
শোকগ্রস্ত এমন মানুষদের মনোবল বাড়ানোর চেষ্টা করছেন ইব্রাহিম। কারণ প্রিয়জনকে হারানোর যন্ত্রণা কী, সেটা তিনি বোঝেন।
ডক্টর্স উইদাউট বর্ডারস (এমএসএফ) সংস্থার তরফে মারিনা কাস্তেলানো বলেন, "যাদের মন দুর্বল নয়, তারা অন্যদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে সাহায্য করছে।" বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল রাখছে এমএসএফ।
সমুদ্রে মৃত্যুর যন্ত্রণা
ইব্রাহিম তার স্ত্রী ও ভাইকে হারিয়েছেন। তিনি দুইজনকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন কিন্তু পারেননি। ঢেউয়ের মধ্যে তাদের মিলিয়ে যেতে দেখেন।
তার কথায়, "আমি জানতাম না প্রথমে কাকে সাহায্য করব। দুজনেই আমার হাত ছেড়ে চলে গেল। আমি অন্যদের ভাসিয়ে রাখার চেষ্টা করেছি, আমি তাদের বাঁচিয়েছি। কিন্তু আমি ভাই বা স্ত্রীকে বাঁচাতে পারিনি।"
বছর বাইশের আরেকজন আইভোরিয়ান নাগরিক বলছিলেন, "ভেসে যাওয়ার আগে বন্ধুদের ধরে রাখতে চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু পারিনি।"
অভিবাসী নৌকাতেই মাত্র এক মাসেরও কম বয়সি যমজ শিশুকন্যার মৃত্যু হয়। কাস্তেলানোর কথায়, "তারা প্রথমে বুঝতেও পারেননি কী ঘটছে। যখন ফাভারোলেতো পৌঁছে অভিবাসীরা শিশুকন্যা দুটির মাকে চিৎকার করে কাঁদতে দেখেন এবং তাদের চার বছরের ভাইকে দেখেন, তখন তারা বুঝতে পারেন।"
সেভ দ্য চিলড্রেনের সহায়তায় নৌকায় থাকা শিশুদের অনেকে প্রাথমিক অভ্যর্থনা কেন্দ্রের সামনের চত্বরে মাকে ফিরে পেয়ে জড়িয়ে ধরেছিল।

গত বৃহস্পতিবার অ্যাগ্রিগেন্তোর ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রসিকিউটর সালভাতোর ভেলা নিরাপত্তা বাহিনী এবং উদ্ধারকর্মীদের সঙ্গে ল্যাম্পেদুসায় বৈঠক করেন। তার কথায়, "পাচারকারী এবং চোরাচালানকারীদের ধরা আমাদের একমাত্র লক্ষ্য। পুলিশ বাহিনীর জন্য আরো দোভাষী চাইছি আমরা। কী ধরনের অপরাধ হয়েছে তা জানতে এবং অভিযুক্তদেরকে গ্রেপ্তার করতে দোভাষী প্রয়োজন। নইলে আমরা দৃষ্টিহীন এবং বধির হয়ে পড়ছি।"
মেয়র ফিলিপ্পো মানিনোর অনুরোধে দ্বীপের মর্গে কয়েকদিন ধরে স্তূপ হয়ে জমে থাকা মৃতদেহ স্থানান্তরকেও ত্বরান্বিত করেন প্রসিকিউটর।
কফিনগুলি স্থানান্তরের জন্য যখন জাহাজে বোঝাই করা হচ্ছিল, তখন আরো দুটি মৃতদেহ এসে পৌঁছায়৷ প্রথমে একজন পুরুষের এবং পরে একজন নারীর। অভিবাসী বহনকারী আরেকটি নৌকার ধ্বংসাবশেষের পরে এই দেহগুলি উদ্ধার করা হয়। নৌকাডুবির ঘটনায় মোট ৩১ জনকে উদ্ধার করা হয়েছিল। এখনো একজনের খোঁজ মেলেনি।
আরকেসি/এআই