দক্ষিণ সিসিলিতে একটি ছোট লাল ভ্যানে ঘুরে ঘুরে স্বাস্থ্য সেবা ও মানসিক এবং সামাজিক সহায়তা প্রদান করেন বেসরকারি উন্নয়নসংস্থা ‘এমার্জেন্সি’-র স্বাস্থ্যকর্মীরা৷ তাদের কর্মকাণ্ড সরেজমিনে দেখেছে ইনফোমাইগ্রেন্টস৷
মারিনা ডিয়াকাটের সাগর তীরে একটি কারপার্কে রাখা ছিল লাল রংয়ের ভ্যানটি৷ সেপ্টেম্বরের শেষের দিকের এক দুপুরে সেখানে যায় ইনফোমাইগ্রেন্টস৷ দিন অনুযায়ী ভ্যানটি কখনো মারিনা ডিয়াকাটে, কখনো ভিটোরিয়া, কখনো পুনটা বেরাটচিটো, কখনোবা সান্টা ক্রোচে ডি কামেরিনাতে অবস্থান করে৷
এমার্জেন্সি মোবাইল ক্লিনিকের প্রকল্প প্রধান আহমেদ বলেন, ‘‘আমাদের এখানে যারা চিকিৎসা নিতে আসেন তাদের অনেকেই যেখানে কাজ করেন সেই খামারের গ্রিনহাউসের পাশে ক্যাম্প করে থাকেন৷’’
সেখানকার উপকূলীয় একটি বড় অঞ্চল ঘিরে অসংখ্য গ্রিনহাউস রয়েছে৷ খামারে থাকা পুরনো ভবন এবং ওয়্যারহাউসের মধ্যে অনেক কর্মী বাস করেন৷

‘‘তাদের কেউ কেউ শুধু প্লাস্টিকের তাঁবুতে রাত কাটান যেখানে বাথরুম বা টয়লেটের ব্যবস্থা নেই৷ কখনো কখনো দেখা যায় পুরো পরিবারই এমন পরিবেশে থাকছেন,’’ বলেন আহমেদ৷
‘‘শীতকালে সেখানে হিটারের ব্যবস্থা নেই৷ সাধারণ বাড়িঘরে যেসব সুযোগ সুবিধা থাকে, তাও পাওয়া যায় না৷ শ্রমিকদের সাধারণত এসব সুবিধার বাইরে রাখা হয়৷ তারা খামারেই থাকেন, কাজ করেন, ঘুমান এবং খাওয়া দাওয়া করেন৷ খামারের পাশে থাকার সুবিধা হচ্ছে বেশি সময় কাজ করা যায় এবং কাজে যাওয়ার জন্য বাড়তি পরিবহণ খরচের প্রয়োজন হয় না’’ যোগ করেন তিনি৷
আহমেদের হিসেব অনুযায়ী, সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে কমপক্ষে দুই হাজার শ্রমিক এমন পরিস্থিতিতে রয়েছেন৷ এই কর্মীরা বেশ কঠিন কাজের পরিবেশে কাজ করছেন বলে মনে করেন তিনি৷
লাল ভ্যানটির উপরে সাদা কালিতে ইংরেজিতে ‘এমার্জেন্সি’ শব্দটি লেখা রয়েছে৷ ইটালির একটি সুপরিচিত বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা এটি৷ চিকিৎসক এবং সমাজকর্মীদের সাক্ষাৎ পেতে ভ্যানের সামনে মাঝেমাঝেই ভিড় তৈরি হয়৷ মাগদা নামের একজন সাংস্কৃতির মধ্যস্থতাকারী ক্লিনিকটির সঙ্গে রাগুসা এলাকায় গত ছয় মাস ধরে কাজ করছেন৷ তিনি জানান যে মোবাইল টিমের সদস্যরা বহুভাষী হওয়ায় সেবা নিতে আসা অভিবাসীদের সুবিধা হয়৷
ছবিঘর: সিসিলিতে বাংলাদেশি কৃষকদের বেতন ভালো, জীবন কঠিন
মাগদা বলেন, ‘‘ইটালীয় ভাষা না জানলে স্বাস্থ্য সেবা পাওয়া বা নিজের অধিকার সম্পর্কে জানা বেশ কঠিন ব্যাপার হয়ে পড়ে৷’’
যারা চিকিৎসা নিতে আসেন তাদের অনেকেই খামারে কাজ করার সময় আহত হন বলে জানান মাগদা৷ তিনি বলেন, ‘‘এগুলো ছোট সমস্যা হলেও চিকিৎসা নিতে দেরি হওয়ায় এবং খামারে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার ঘাটতি থাকায় এক পর্যায়ে ক্ষতগুলো বড় হয়ে যায়৷’’
মোবাইল ক্লিনিকের মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা অভিবাসীদের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়েছে৷ ফলে তাদেরকে এখন বিভিন্ন চক্রকে চিকিৎসা পেতে মোটা অংকের টাকা দিতে হচ্ছে না৷ আর ভ্যানে চিকিৎসা সেবা দেয়ার পাশাপাশি অভিবাসীদের হেল্থ কার্ড নবায়ন করাসহ তাদেরকে প্রয়োজনে হাসপাতালে নিতে বা দোভাষী হিসেবেও সহায়তা করেন এমার্জেন্সির কর্মীরা৷
২০১৯ সালে এই কার্যক্রম শুরুর পর ইতোমধ্যে হাজারখানেক অভিবাসীকে চিকিৎসা সুবিধা দিয়েছে মোবাইল ক্লিনিকটি৷ সেটির সামনে অবস্থান করা দুই টিউনিশীয় তরুণের একজন ১৬ মাস আগে ইটালি এসেছেন, অন্যজন দুই সপ্তাহ আগে৷
‘‘আমরা এখানে কাজ করতে এবং দেশে পরিবারের কাছে টাকা পাঠাতে এসেছি৷ এখানকার অবস্থা খুব খারাপ নয়৷ আমরা কাজ পাচ্ছি আর এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ,’’ বলেন তারা৷
তবে, অনেক অভিবাসী কর্মী ঠিকমতো বেতন পাননা এমন অভিযোগও রয়েছে৷ ইটালির হিসেবে একজন খামার কর্মী দৈনিক আটঘণ্টার শিফটে ৪০ ইউরো পাওয়ার কথা থাকলেও কেউ কেউ ২৫ থেকে ৩০ ইউরো পাচ্ছেন৷
ভিটোরিয়াতে বাংলাদেশি মালিকানাধীন একটি খামার ঘুরে দেখেছে ইনফোমাইগ্রেন্টস৷ সেখানকার বাংলাদেশি কর্মীরা অবশ্য জানিয়েছেন যে ইটালির মান অনুযায়ী বেতন পান তারা৷ তারা খামারের পাশেই প্লাস্টিকের কন্টেইনারের মধ্যে বসবাস করেন৷ সেখানে কোনো বাথরুম বা টয়লেট নেই৷
এআই/কেএম