লিবিয়ায় নির্যাতিত আশ্রয়প্রার্থী ও শরণার্থীদের মুখপাত্র হয়ে উঠেছে ‘রিফিউজিস ইন লিবিয়া’। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে নির্যাতনের নৃশংসতার ছবি এবং ভিডিও প্রকাশ করে অদৃশ্য অপরাধগুলোকে সামনে নিয়ে এসেছেন এই উদ্যোগের মূল ব্যক্তি ইয়াম্বিও ডেভিড।
২৫ বছর বয়সি ইয়াম্বিও ডেভিড দক্ষিণ সুদানের নাগরিক। লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপোলিতে থাকা অবস্থায় সেখানে অভিবাসী ও আশ্রয়প্রার্থীদের উপর চলা নিশৃংস নির্যাতনের চিত্র দেখে হতবাক হয়ে পড়েন তিনি। বর্তমানে ইটালিতে বসবাস করছেন এই অভিবাসী।
লিবিয়ার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও মাফিয়াদের এত অপরাধ সত্ত্বেও সেগুলো গণমাধ্যমে যথাযথভাবে না আসায় নিজেই অভিবাসীদের জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি অ্যাকাউন্ট খোলার সিদ্ধান্ত নেন। সেই সূত্রেই, ফেসবুক, টুইটার এবং ইন্সটাগ্রামে চালু করেন ‘রিফিউজিস ইন লিবিয়া’ নামে একটি অ্যাকাউন্ট। এক বছর আগে তৈরি এই অ্যাকাউন্ট বর্তমানে লিবিয়ার শরণার্থীদের কণ্ঠস্বর ও মুখপাত্র হয়ে উঠেছে।
রিফিউজিস ইন লিবিয়া অ্যাকাউন্টে প্রকাশিত ছবি ও ভিডিওগুলো কষ্ট আর নিষ্ঠুরতার সাক্ষ্য দেয়। সম্প্রতি প্রকাশিত একটি ভিডিওতে আমরা একজন অভিবাসীকে দেখতে পাই, যিনি অত্যন্ত ক্ষতবিক্ষত এবং পা বাঁধা অবস্থায় ব্যথায় চিৎকার করছেন। তাকে একটি বৈদ্যুতিক বন্দুক দিয়ে আঘাত করা হয়েছিল বলে জানান এই তরুণ।
আরও পড়ুন>>অভিবাসীদের উদ্ধারে ভূমধ্যসাগরে নতুন জাহাজ
তার বয়স মাত্র ১৭ বছর। তিনি ইউরোপে প্রবেশের আশায় ইথিওপিয়া থেকে লিবিয়ায় এসেছেন। লিবিয়ায় তাকে অপহরণ করে তার পরিবারের কাছ থেকে চাঁদা আদায়ের জন্য নির্যাতন করা হয়। মাফিয়ারা টাকার জন্য এই কিশোরের পরিবারের কাছে নির্যাতনের ভিডিও পাঠিয়েছিল। ভুক্তভোগী পরিবার হতাশ হয়ে ভিডিওটি ইয়াম্বিও ডেভিডকে পাঠায়।
ইয়াম্বিও ‘রিফিউজিস ইন লিবিয়া’ অ্যাকাউন্ট থেকে নিয়মিত এসব সংবেদনশীল ছবি ও ভিডিও প্রকাশের কারণে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো অ্যাকাউন্ট বাতিল হওয়ার আশঙ্কা করছেন।
পড়ুন>>লিবিয়ার জাহাজ তল্লাশির অনুমোদনের মেয়াদ বাড়ালো জাতিসংঘ
কিন্তু এই কাজ চালিয়ে যেতে তিনি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। তিনি আশা করেন, এসব প্রমাণ অভিবাসন মহলে আলোচনার ঝড় তুলবে। সাংবাদিক এবং রাজনীতিবিদসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহারকারীদের মনে করিয়ে দেবে যে লিবিয়ায় অভিবাসীদের উপর সহিংসতা চরম।
মূলত ২০২১ সালের অক্টোবরের শুরুতে এই অ্যাকাউন্ট তৈরির প্রেক্ষাপট শুরু হয়েছিল। সেই সময়ে লিবিয়ার পুলিশ একটি বৃহৎ অভিযান শুরু করেছিল। আনুষ্ঠানিকভাবে এটিকে মাদকবিরোধী অভিযান বলা হলেও এই অভিযানে ৪ হাজারেরও বেশি অভিবাসীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।
অভিযানে ত্রিপোলির পশ্চিমে গার্গরেশ জেলায় বসবাস করছিলেন এমন হাজার হাজার মানুষকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। অনেক নারী ও শিশু অভিযানের পর জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) মূল ভবনের সামনে বসতি স্থাপন করেছিল।
প্রাথমিকভাবে এই নজিরবিহীন অভিযানকে তুলে ধরতে ইয়াম্বিও ডেভিড ‘রিফিউজিস ইন লিবিয়া অ্যাকাউন্ট’ এর কার্যক্রম শুরু করেছিলেন।
আরও পড়ুন>>ছয় দিন সাগরে ভেসে বেনগাজি থেকে সিসিলিতে ৪১ বাংলাদেশি
ইয়াম্বিও ডেভিড বলেন, “গার্গরেশ থেকে উচ্ছেদের পর যখন আমরা ইউএনএইচসিআরের সামনে আন্দোলন শুরু করি, তখন আমাদের কাছে মনে হয়েছিল এটি যথেষ্ট নয়। আমরা আমাদের হাতে যা ছিল তা ব্যবহার করতে চেয়েছিলাম। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের শক্তিকে কাজে লাগানোর ধারণা থেকে আমরা একটি বিকল্প আওয়াজ দেওয়ার চেষ্টা করেছিলাম।”
তিনি বলেন, “আমরা জানি সাধারণ জনগণকে প্রভাবিত না করে আমরা রাজনীতিবিদদের অবস্থান পরিবর্তন করতে পারি না। কারণ জনগণ ভোট দেয়। তাই আমরা এই দুই ধরণের আলাদা ব্যক্তিদের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করি। কারো জন্য টুইটারে। আবার অন্যদের জন্য ফেসবুক এবং ইনস্টাগ্রামে।”
পড়ুন>> ‘উদ্ধারকাজে নিয়োজিত জার্মান বিমানে গুলি করার হুমকি লিবিয়ার’
ইয়াম্বিও ডেভিড মনে করেন, “লিবিয়ায় অভিবাসীদের পরিস্থিতি মূলত ভূমধ্যসাগরের অন্য প্রান্তে নেওয়া রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ফলাফল। এই সিদ্ধান্তগুলো দিয়ে প্রভাবিত হওয়া লোকেদের পক্ষ থেকে একটি কণ্ঠস্বর হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
এমএইউ/এআই