ফাইল থেকে: ২০২১  সালের আগস্টে আফগানিস্তান থেকে হাজার হাজার লোককে সরিয়ে  আনার সময় কাবুলের একটি শিশু | ছবি: রয়টার্স/আলি খারা
ফাইল থেকে: ২০২১ সালের আগস্টে আফগানিস্তান থেকে হাজার হাজার লোককে সরিয়ে আনার সময় কাবুলের একটি শিশু | ছবি: রয়টার্স/আলি খারা

আফগানিস্তানে নাজুক (ভালনারেবল) আছেন এমন ব্যক্তিদের নিয়ে আসতে জার্মানির নতুন মানবিক কর্মসূচি ঘিরে বিশৃঙ্খলার অভিযোগ উঠেছে। এই পরিস্থিতিতে সহায়তাকারী সংস্থাগুলির কাছে বিপুল সংখ্যক ফোন, চিঠি, বার্তা আসছে।

আফগানিস্তানের জন্য জার্মান সরকারের নতুন প্রকল্প চালু হওয়ার কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই আবেদনকারীর সংখ্যা বিপুল হারে বেড়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছে সাহায্যকারী সংস্থাগুলি।

দাতব্য সংস্থা মিশন লাইফলাইন"এর অ্যাক্সেল স্টাইয়ার বলেন, "আমরা প্রতি মিনিটে ই-মেল পাচ্ছি।"

জার্মান সংবাদপত্র এবং ম্যাগাজিন প্রকাশক ফুঙ্কে গ্রুপকে স্টাইয়ার বলেন, নভেম্বরের শুরুতে ১৭ হাজার বার তার সংস্থার কাছে বিষয়টি নিয়ে খোঁজ করা হয়েছে।

তার মতে, নাগরিক সমাজের উদ্যোগ "কাবুল লুফ্টব্র্যুকে" (কাবুল এয়ারলিফ্ট)-এর কর্মীরা সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট এবং ইমেলের মাধ্যমে ১৫ হাজার বার্তা পেয়েছেন। কিছু চিঠি তাদের ব্যক্তিগত ঠিকানাতেও পাঠানো হয়েছে।

বেসরকারি সংস্থা রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স (আরএসএফ) এর জার্মান শাখা শুক্রবার (৪নভেম্বর) জানিয়েছে, তাদের কাছে ১২ হাজার নিবন্ধনের অনুরোধ এবং সাহায্যের জন্য তিন হাজার ৭০০ টি অনুরোধ এসেছে। ওয়েবসাইটে বিবৃতি দিয়ে তারা জানিয়েছে, সোশ্যাল মিডিয়ায় শত শত ফোন কল, ইমেল এবং বার্তা এসেছে এবং তা বেড়েই চলেছে। ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতিতে থাকা আফগান মিডিয়া কর্মীদের জন্য সংশ্লিষ্ট অনলাইন ফর্মটি আপাতত সরাতে বাধ্য হয়েছে তারা।

ফুঙ্কে গ্রুপ জানিয়েছে, জার্মান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে এই প্রকল্প নিয়ে ৫০ হাজারেরও বেশি বার খোঁজ নেয়া হয়েছে। 

২০২১ সালের আগস্টে তালেবান আবার আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখলের পর থেকে জার্মানি অন্তত ২৬ হাজার আফগানকে আশ্রয় দিয়েছে৷ প্রতি মাসে আরো এক হাজার ‘ভালনারেবল’ আফগানকে জার্মানিতে আনতে অক্টোবরের মাঝামাঝি একটি নতুন কার্যক্রম চালু করে সরকার৷

এর লক্ষ্য, সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে যুক্ত এবং মানবাধিকার কর্মীদের সুরক্ষা দেয়া। পাশাপাশি বিচার বিভাগ, পুলিশ বা রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তি, যারা তালেবান ক্ষমতায় আসার পর থেকে বিপদে পড়েছেন, তাদেরও রক্ষা করা। নারী এবং শিশুদের প্রাধান্য দেয়ার কথাও বলা হয়েছে।

তারা নিজেরা আশ্রয় চেয়ে আবেদন করতে পারবেন না। পরিবর্তে, রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস এবং কাবুল এয়ারলিফ্টের মতো সাহায্য সংস্থাগুলির উপর আফগান নাগরিকদের বেছে নেয়ার ভার দেয়া হয়েছে।

জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় বলেছে, আফগানিস্তান ছেড়ে অন্য দেশে আসার চাপ অত্যন্ত বেশি, তাই অনেকে মিথ্যার আশ্রয় নেন, জাল নথি দেখান। তাই আফগানিস্তানে কাজ করেছে নাগরিক সমাজের এমন বেশ কয়েকটি সংস্থাগুলির উপর ভরসা করতে চাইছে সরকার।

 ‘বিশৃঙ্খলার জন্য জার্মান সরকার দায়ী’

এই প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক সূচনায় বিশৃঙ্খলার জন্য জার্মান সরকারকে দায়ী করেছে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স । ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত কোনো হটলাইন ছিল না এবং কোনো কেন্দ্রীয় আবেদনপত্র ছিল না। আরএসএফ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পররাষ্ট্র এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রকল্পের জন্য বিশেষভাবে তৈরি করা ওয়েবসাইটে দারি বা পাশতু ভাষায় তথ্য পাওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন অনেকেই। কারণ সাইটটি প্রাথমিকভাবে শুধুমাত্র জার্মান ভাষায় তৈরি করা হয়েছিল। ইংরেজি ভাষাও রাখা হয়নি। 

এরপর আফগানদের সুরক্ষার প্রয়োজনে যোগাযোগের একটি মূল জায়গা তৈরির অনুরোধ জানিয়েছে আরএসএফ।

শরণার্থী এবং আশ্রয়প্রার্থীদের সাহায্য সংস্থা প্রো আজিল এবং জার্মানির বাম দলও এই প্রকল্পের সীমাবদ্ধতার সমালোচনা করেছে। প্রো আজিলের প্রধান গুন্টার বুরখার্ডট বলেন, প্রকল্পের অধীনে সুরক্ষা মর্যাদা পাওয়ার প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত জটিল এবং একটি "উন্মাদ আমলাতান্ত্রিক প্রচেষ্টা" তৈরি হয়েছে।

আরকেসি/এসিবি


কেএনএ সহ

আফগান ভাষায় প্রকল্পটি সম্পর্কে (বুন্দেসআউফনামেপ্রোগ্রাম), কাবুল লুফ্টব্যুকে এখানে তথ্য দিয়েছে।

এছাড়াও ফার্সি ভাষায় - এখানে জার্মান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে এ প্রোগ্রাম সম্পর্কে তথ্য রয়েছে ৷

 

অন্যান্য প্রতিবেদন