ভারত মহাসাগরের ফরাসি ডিপার্টমেন্ট লা রেওনিওঁ দ্বীপে নৌকায় আসা ১৭ জন শ্রীলঙ্কার নাগরিকের মধ্যে ১৩ জনকেই আশ্রয় আবেদনের সুযোগ দেয়া হয়নি। সবাইকে সোমবার শ্রীলঙ্কায় ফেরত পাঠানো হয়েছে।
২০ অক্টোবর, একটি মাছ ধরার নৌকায় ফরাসি দ্বীপ লা রেওনিওঁতে এসেছিলেন ১৭ জন শ্রীলঙ্কার নাগরিক। তীব্র রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট থেকে বাঁচতে দেশটির বহু নাগরিকের মতো তারাও উন্নত জীবনের সন্ধানে দেশ ত্যাগ করেছিলেন।
কিন্তু চারজন বাদে বাকি ১৩ জনের ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলো না।১৭ জনের মধ্যে শুধু চার ব্যাক্তিকে ফ্রান্সে আশ্রয় আবেদন করার অনুমতি দেয়া হয়েছে। বাকি ১৩ জনকে সোমবার শ্রীলঙ্কায় ফেরত পাঠিয়েছে দ্বীপের ফরাসি প্রশাসন।
দ্বীপের আসার পর কর্তৃপক্ষের অধীনে অস্থায়ী অপেক্ষা কেন্দ্রে দুই সপ্তাহের কিছু বেশি সময় ছিলেন এই অভিবাসীরা।
আরও পড়ুন>>চাগোসের তামিল শরণার্থীদের তৃতীয় দেশে পাঠাতে চায় যুক্তরাজ্য
ইউরোপের বাইরে অবস্থিত ফ্রান্স অধিকৃত এই অঞ্চলে আশ্রয় আবেদনের পদ্ধতি ফ্রান্সের মূল ভূখণ্ড থেকে একটু ভিন্ন। নৌকায় দ্বীপে আসার পর সাধারণত অভিবাসন প্রত্যাশীদের একটি অপেক্ষা কেন্দ্রে রাখা হয়। এটি বিমানবন্দরের নিকটে অবস্থিত যেখানে প্রায় ২০টি ঘর রয়েছে।
শরণার্থী ও অভিবাসনপ্রত্যাশীদের জন্য নির্ধারিত ফরাসি দপ্তর অফপ্রা ইনফোমাইগ্রেন্টসকে জানিয়েছে, আইন অনুযায়ী এই কাঠামোতে আটকের মেয়াদ সর্বোচ্চ ২০ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।
অপেক্ষা করার এলাকাটির কাঠামোর মধ্যে থাকা অবস্থায় সংশ্লিষ্টরা চাইলে আশ্রয়ের জন্য আবেদন করতে পারেন। তবে এটি করার জন্য, তাদেরকে অবশ্যই ফ্রান্সে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করার অনুমতি পেতে হবে। মূলত অফপ্রার সঙ্গে পরামর্শ করার পরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অভিবাসীদের জানায় তারা আশ্রয় আবেদন করতে পারবেন কি না।
পড়ুন>>১১ দিন সাগরে ভেসে রেউনিওঁ দ্বীপে ১৭ অভিবাসী
যদি কোনো ব্যক্তিকে ফরাসি ভূখণ্ডে প্রবেশের জন্য অনুমতি দেয়া হয় তাহলে সেক্ষেত্রে তিনি এই অপেক্ষা কেন্দ্র ছেড়ে যেতে পারবেন। ফরাসি সীমান্ত পুলিশ (পিএএফ) থেকে উক্ত ব্যক্তিকে একটি নথি দেয়া হয়। এই নথিটি গ্রহণের আট দিনের মধ্যে স্থানীয় প্রেফেকচুরকে আশ্রয় আবেদন জমা দেয়ার বাধ্যবাধকতা থাকে।
দ্বীপের প্রেফেকচুরের প্রধান প্রেফে বলেন, যখনই আদালত আমাদের কোনো অনিয়মিত বিদেশির ব্যাপারে জানান, তখনই ব্যবস্থা নিই। যারা অনিয়মিত পরিস্থিতিতে আছেন তাদের অবশ্যই চলে যেতে হবে। এখান অভিবাসীদের অনিয়মিত উপায়ে থাকার কোন সুযোগ নেই।”
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে শ্রীলঙ্কা থেকে বেশ কয়েকটি নৌকা রেওনিওঁ দ্বীপে প্রবেশে করেছে।
চলতি বছরের পরিসংখ্যান উল্লেখ করে দ্বীপের প্রেফে জেরোম ফিলিপিন ইনফোমাইগ্রেন্টসকে বলেন, “নিঃসন্দেহে দ্বীপে একটি অনিয়মিত অভিবাসন চক্র তৈরির প্রচেষ্টা লক্ষ্য করছি।”
আরও পড়ুন>>ফ্রান্সে আশ্রয়ের আবেদনের সুযোগ পেল শ্রীলঙ্কার নাগরিকরা
শ্রীলঙ্কা ২০২২ সালের গ্রীষ্ম থেকে একটি গুরুতর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকটের সম্মুখীন হচ্ছে, যা আরও বেশি সংখ্যক লোককে দেশ ছেড়ে যেতে বাধ্য করছে।
অক্টোবরের শুরুতে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও মানবাধিকার বিষয়ক গবেষক সানহিতা অ্যাম্বাস্ট বলেন, “কয়েক মাস ধরে, মানুষ খাদ্যের তীব্র ঘাটতিতে ভুগছে এবং স্বাস্থ্যসেবা পেতেও লড়াই করছে। চরম মূল্যস্ফীতি এই বৈষম্যকে আরও বাড়িয়ে তুলছে।”
বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি অনুসারে, শ্রীলঙ্কার জনসংখ্যার ২৮ শতাংশ বা ৬২ লাখ মানুষ তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন।
এমএইউ/আরকেসি