এনজিও এসওএস মেডিটারানের উদ্ধার জাহজ ওশান ভাইকিংয়ে একজন অভিবাসী। ছবি: এসওএস মেডিটারানে
এনজিও এসওএস মেডিটারানের উদ্ধার জাহজ ওশান ভাইকিংয়ে একজন অভিবাসী। ছবি: এসওএস মেডিটারানে

সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ভূমধ্যসাগর থেকে অভিবাসীদের উদ্ধারে সক্রিয় চারটি মানবিক উদ্ধার জাহাজের মধ্যে তিনটিই সমস্ত অভিবাসীদের নামাতে সক্ষম হয়েছে। তবে ইটালির উপেক্ষার কারণে এখনো নিরাপদ বন্দরের সন্ধান করছে ওশান ভাইকিং। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, জাহাজটি ২৩৪ জন অভিবাসী নিয়ে ফ্রান্সের দিকে রওনা দিয়েছে।

ওশান ভাইকিং জাহাজে থাকা ২৩৪ অভিবাসীদের দুঃস্বপ্নের যাত্রা এখনও অব্যাহত রয়েছে।

সর্বশেষ, বুধবার, ৯ নভেম্বর, পর্যন্ত ইটালির সিসিলি উপকূলের কাছাকাছি আন্তর্জাতিক জলসীমায় অপেক্ষা করে এসওএস মেডিটেরানের এই উদ্ধারকারী জাহাজ। 

কিন্তু ইটালির নতুন কট্টর ডানপন্থি সরকারের নীরবতার পর জাহাজে থাকা অভিবাসীদের পরিস্থিতি সংকটজনক হয়ে উঠলে পথ পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছে এনজিওটি।

ইতিপূর্বে, সোমবার সন্ধ্যায় ফরাসি সরকারের কাছে ফ্রান্সের বন্দরে অনুমতির আহ্বান জানিয়েছিল এসওএস মেডিটেরানে। মঙ্গলবার, শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ফ্রান্সের কর্সিকা দ্বীপের আন্তর্জাতিক জলসীমার পথে রয়েছে ওশান ভাইকিং। যদিও ফরাসি কর্তৃপক্ষ এখনও এই ব্যাপারে কোনও প্রতিক্রিয়া জানায়নি।

আরও পড়ুন>>বাড়ছে এনজিওদের ক্ষোভ, অভিবাসী ইস্যুতে চাপে ইটালি

এসওএস মেডিটেরানের ভাইস-প্রেসিডেন্ট সোফি বোউ বুধবার ইনফোমাইগ্রেন্টসকে জানায়, “আমরা ইটালির সার্ডিনিয়া অঞ্চল পার হয়ে কর্সিকার দিকে যাব। তবে আমরা এখনও আশা করছি,ইটালি কোনো একটি উপকূলে আমাদের নামার সুযোগ দেবে।”

এর আগে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ফ্রান্স, স্পেন এবং গ্রিসের কাছে নিরাপদ বন্দরের নামার অনুরোধ করেছিল এনজিওটি। জাহাজে থাকা দুই শতাধিক অভিবাসীর স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি দিন দিন অবনতি হচ্ছে। এনজিওটি অনুরোধের প্রতিক্রিয়া মাদ্রিদ প্রত্যাখান করলেও এখনো নীরব প্যারিস এবং এথেন্স। 


২২ থেকে ২৬ অক্টোবরের মধ্যে মাল্টিজ অনুসন্ধান ও উদ্ধার এলাকায় তিনটি উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করে ওশান ভাইকিং। পরবর্তীতে আরো নতুন তিনটি উদ্ধার সহ মোট ছয়টি অভিযান পরিচালনা করা হয়। এসব অভিযানের পর থেকে মাল্টা ছাড়া প্রায় ২০টি দেশের কাছে নিরাপদ বন্দরের আশায় আবেদন জানানো হয়। 

পড়ুন>>অভিবাসন বিষয়ে জার্মানি-ইটালি আলোচনা

এনজিওটি জানায়, “আমাদের অসংখ্য আনুষ্ঠানিক অনুরোধ সত্ত্বেও, ইটালির নবনির্বাচিত সরকার একটি বন্দরও বরাদ্দ করেনি। এটি ব্যাখ্যাতীত যে আজ পর্যন্ত কোনো সমাধান পাওয়া যায়নি।

সোফি বোউ বলেন, “একটি নিরাপদ স্থানের জন্য একাধিক অনুরোধের প্রতিক্রিয়ার জন্য এত দীর্ঘ অপেক্ষা করা হতাশার। শত বেদনার পর বেঁচে থাকার শেষ আশা করা অভিবাসীরা দিন দিন তাদের মনোবল হারিয়ে ফেলছে। অনেক অভিবাসী তিন সপ্তাহ ধরে জাহাজে আছেন।” 

ফ্রান্স এবং ইটালি কূটনৈতিক বিরোধ

এদিকে, ফ্রান্স এবং ইটালির মধ্যে ওশান ভাইকিংয়ের জাহাজ অনুমতি নিয়ে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক বিরোধ। 

ইটালির নতুন কট্টর ডানপন্থি প্রধানমন্ত্রী জর্জা মেলোনির দপ্তর থেকে মঙ্গলবার ফ্রান্সকে ধন্যবাদ জানানো হয়। ইটালির প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় জানায়, “ফরাসি বন্দরে মানবিক উদ্ধার জাহাজকে স্বাগত জানাতে সম্মত হওয়ায় প্যারিসকে ধন্যবাদ। 

আরও পড়ুন>>শরণার্থীদের দুর্দশার কথা জানাচ্ছে ‘রিফিউজিস ইন লিবিয়া’

কিন্তু এই বক্তব্যটি মিথ্যা। কারণ প্যারিস এই ধরনের কোনো বক্তব্য দেয় নি। এর প্রতিক্রিয়ায় ফরাসি কর্তৃপক্ষ জানায়, আমরা রোমের বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করছি। ওশান ভাইকিং জাহাজকে নামতে না দিয়ে ইটালি অগ্রহণযোগ্য আচরণ করেছে। 

ফরাসি জলসীমায় জাহাজটির সম্ভাব্য আগমনের আগে ফরাসি সরকারের মন্ত্রী অলিভিয়ের ভেরো জানিয়েছেন, “আমরা কখনও জাহাজে থাকা লোকেদের সামান্যতম ঝুঁকিতে পড়তে দেব না।”

ইতিমধ্যে, বেশ কয়েকজন ফরাসি রাজনৈতিক এবং কর্মকর্তা বলেছেন, তারা মানবিক জাহাজটির যাত্রীদের নামতে দিতে প্রস্তুত।

পাশাপাশি কর্সিকা দ্বীপের প্রধান প্রশাসনিক নির্বাহী জিল সিমিওনির সভাপতি মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নিশ্চিত করেছেন, “দ্বীপটি প্রয়োজনে, অস্থায়ীভাবে একটি বন্দরে ওশান ভাইকিংকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত।”

পড়ুন>>রিয়াচের সাবেক মেয়রের সাড়ে দশ বছর শাস্তির দাবি

ফ্রান্সের মার্সেই শহরের মেয়র বনোয়া পায়ান বুধবার এএফপিকে বলেছেন, “এটি আমাদের সম্মান, তাদের স্বাগত জানানো ফ্রান্সের মর্যাদার বিষয়।”

ওশান ভাইকিং ছাড়া বেশ কয়েকটি মানবিক জাহাজকে অবতরণের জন্য সাম্প্রতিক দিনগুলিতে কট্টর-ডানপন্থি ইটালীয় সরকারের সাথে কঠোর আলোচনা চালাতে হয়েছে। 

ইনফোমাইগ্রেন্টস এসওএস মেডিটারানের কাছে জানতে চায়, অন্যদের মতো ওশান ভাইকিংকে কেন ইটালিতে নামার অনুমতি দেওয়া হয়নি?

উত্তরে এসওএস মেডিটারানে জানায়, “হিউম্যানিটি ‘ এবং জিও ব্যারেন্টস শুক্রবার এবং শনিবার একটি ঝড়ের মুখোমুখি হলে তাদের দ্রুত আশ্রয়ের প্রয়োজন ছিল। সেসময় তারা কর্তৃপক্ষের কাছে অবতরণের অনুরোধ করেছিল।”

সোফি বোউ বলেন," আমরা দুটি জাহাজের মতো ইটালির ‘ফাঁদে’ পড়ার আশঙ্কা করেছিলাম। কারণ দীর্ঘ সময় ধরে জাহাজগুলোকে বন্দরে অপেক্ষায় রাখা হয়েছিল।”

পড়ুন>>অভিবাসন পরিসংখ্যান: ইটালি থেকে রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স

তিনি জোর দিয়ে বলেন, “দুই জাহাজের তিক্ত অভিজ্ঞতার কারণে ওশান ভাইকিং ঝড় সত্ত্বেও আন্তর্জাতিক জলসীমায় থেকে যায়। আমরা একটি কূটনৈতিক ফলাফলের আশা করেছিলাম। ফ্রান্সের পথে আমাদের যাত্রাপথ পরিবর্তন জরুরি পরিস্থিতির মুখে ব্যতিক্রমী উদাহরণ হবে।”


এমএইউ/আরকেসি





 

অন্যান্য প্রতিবেদন