১৯৯১ সালে স্যামুয়েল কফি ইয়েবোহ | সূত্র: সারল্যান্ড স্টেট পুলিশ
১৯৯১ সালে স্যামুয়েল কফি ইয়েবোহ | সূত্র: সারল্যান্ড স্টেট পুলিশ

১৯৯১ সালে সারলুইসের একটি ঘটনায় অভিযুক্ত এক জার্মান ব্যক্তির বিরুদ্ধে বুধবার জার্মানিতে বিচার শুরু হয়েছে৷ একটি শরণার্থী কেন্দ্রে অগ্নিসংযোগ এবং হত্যার অভিযোগ ওঠে ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে। ওই ঘটনায় ঘানার এক আশ্রয়প্রার্থী মারা যান।

জার্মানির সারলুইসে আশ্রয়প্রার্থীর মৃত্যুর ৩১ বছর পর বুধবার (১৬ নভেম্বর) আশ্রয়প্রার্থীর মৃত্যুর ঘটনার বিচার শুরু হয়েছে৷ মূল অভিযুক্তকে জার্মান সংবাদমাধ্যমগুলিতে পিটার এস বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ৫১ বছর বয়সি ওই ব্যক্তিকে এপ্রিল মাসে গ্রেপ্তার করা হয়। তখন থেকেই তাকে জেল হেপাজতে রাখা হয়েছিল৷

মামলায় উঠে এসেছে, পিটার এস একজন চরমপন্থি-ডানপন্থি। তার বিরুদ্ধে শরণার্থী কেন্দ্রে হত্যা এবং অগ্নিসংযোগের অভিযোগ আনা হয়েছে। এই ঘটনায় ঘানার স্যামুয়েল কফি ইয়েবোহ নামে এক ব্যক্তি মারা যান।

সেইসময় পিটার এস. এর বয়স ছিল ২০ বছর। আশ্রয়প্রার্থীদের বাসস্থানে আগুন লাগানোর আগে ১৯৯১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বরের ভোরে অন্যান্য ডানপন্থি এবং চরমপন্থিদের সঙ্গে দেখা করেছিলেন বলে পুলিশের অনুমান। ২৭ বছরের স্যামুয়েল কফি ইয়েবোহ সেই সময়ে আবাসনের উপর তলার করিডোরে ছিলেন। আগুন থেকে বাঁচতে পারেননি তিনি।

পুলিশ জানিয়েছে, ওই অগ্নিকাণ্ডটি নয়ের দশকে সারল্যান্ডে ঘটতে থাকা সিরিজের একটি ঘটনা৷ সূত্র: সারল্যান্ড পুলিশ
পুলিশ জানিয়েছে, ওই অগ্নিকাণ্ডটি নয়ের দশকে সারল্যান্ডে ঘটতে থাকা সিরিজের একটি ঘটনা৷ সূত্র: সারল্যান্ড পুলিশ

গুরুতর দগ্ধ এবং দম আটকে মৃত্যু

স্যামুয়েল কফি ইয়েবোহ ওই ঘটনায় মারাত্মকভাবে পুড়ে যান। ধোঁয়ায় শ্বাস আটকে তার মৃত্যু হয়। এই মামলাটি জার্মানির সবচেয়ে কুখ্যাত অমীমাংসিত মামলাগুলির একটি। তদন্তকারীরা দুই বছর আগে এই মামলাটি পুনরায় আদালতে তোলে। এপ্রিল মাসের চার তারিখে সারলুইসে প্রধান সন্দেহভাজন পিটার এসকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

অগ্নিকাণ্ডের ফলে আরও দু'জন আহত হন। তারা আগুন থেকে বাঁচতে জানালা দিয়ে লাফ দিয়েছিলেন। তাদের হাড় ভেঙে যায়।

কোবলেঞ্জের উচ্চতর আঞ্চলিক আদালতের প্রবেশপথের সামনে বিক্ষোভকারীরা৷ ছবি: টমাস ফ্রে/ডিপিএ/পিকচার অ্যালায়েন্স
কোবলেঞ্জের উচ্চতর আঞ্চলিক আদালতের প্রবেশপথের সামনে বিক্ষোভকারীরা৷ ছবি: টমাস ফ্রে/ডিপিএ/পিকচার অ্যালায়েন্স

এই মামলায় বর্ণবাদ, হত্যা এবং হত্যার চেষ্টার জন্য অগ্নিসংযোগের অভিযোগ আনা হয়েছে পিটার এস নামে ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে। জার্মান প্রসিকিউটররা তার বিরুদ্ধে ২০টি মামলা দায়ের করেছেন। পিটার এস যদিও এই সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

সেই সময়ে রিপোর্ট অনুসারে, ইয়েবোহ ওই বাসস্থানের তত্ত্বাবধায়ক হিসাবে কাজ করতেন। ইউরোপে আসার আগে ঘানায় কৃষক হিসেবে কাজ করতেন তিনি। মামলার সঙ্গে জড়িত একজন সাক্ষীর থেকে ২০২০ সালে নতুন একটি প্রমাণ মেলে ফলে ফের তদন্ত শুরু করা হয়।

এপ্রিল মাসে, পিটার এসের গ্রেপ্তারের সময় সারল্যান্ড রাজ্যের পুলিশ প্রধান, নরবার্ট রূপ, মামলার ব্যর্থতার জন্য ক্ষমা চান। কারণ এই মামলাটি একসময়ে তুলে নেয়া হয়েছিল। একটি বিবৃতিতে তিনি বলেন, "আমি এবার স্বস্তি পেয়েছি। অবশেষে ৩০ বছরেরও বেশি সময় পরে এই ভয়ানক কাজটি সবাই জানতে পেরেছে বলে মনে হচ্ছে।"

সারল্যান্ড পুলিশ ক্ষমা চেয়েছে

রাজ্য পুলিশ সদর দপ্তরের তরফে ক্ষমা চান নরবার্ট রূপ। তার কথায়, "সেই সময়ে পুলিশের কাজে ঘাটতি ছিল। ফলে তদন্ত হয়নি।" পুলিশকর্তা নিশ্চিত করেন, "এরকম কিছু আবার ঘটতে দেওয়া উচিত নয়।"

সারল্যান্ডে অগ্নিসংযোগের সময়, পূর্ব জার্মানিতে হোয়ার্সভোয়ার্দাতে আশ্রয়প্রার্থীদের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি হামলা হয়। পিটার এস. এবং তার সঙ্গে যাদের দেখা হয়েছিল বলে সন্দেহ করা হচ্ছে, সারলুইসে আগুন লাগানোর আগে তারা এই আক্রমণ নিয়ে আলোচনা করেছিল বলে অভিযোগ।

নয়ের দশক থেকে জার্মানিতে আশ্রয়প্রার্থীদের উপর শত শত প্রাণঘাতী হামলার ঘটনা ঘটেছে। সামগ্রিকভাবে, আক্রমণের সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে। তবে ২০২১ সালে, একটি জার্মান প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে প্রতি সপ্তাহে একটি শরণার্থী অভ্যর্থনা কেন্দ্রে গড়ে অন্তত একটি হামলা হয়েছে।


আরকেসি/কেএম

 

অন্যান্য প্রতিবেদন